হাওয়া অফিস নিম্নচাপের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল আগেই, যার ফলে দক্ষিণের জেলাগুলিতে হালকা থেকে ভারী বর্ষণও শুরু হয়ে গেছে। তবে এই টুকুতেই সন্তুষ্ট থাকতে চাইছেনা ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ, শুক্রবার রাতে আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী জাওয়াদের ইচ্ছে এখন বঙ্গ দর্শন করার। কাল দুপুর নাগাদ পুরীর জগন্নাথ ধাম পরিদর্শন করেই বাংলার দিকে বাঁক নেবে জাওয়াদ। যদিও জাওয়াদের ল্যান্ডফল নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনও থেকেই যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ আদেও মাটিতে পা ফেলবে নাকি সমুদ্রেই বিলীন হয়ে যাবে তাও এখনও নিশ্চিত ভাবে বলা যায়নি, তবে সম্ভাব্য গতিবিধি অনুযায়ী জাওয়াদের পছন্দের স্থান হতে পারে কাকদ্বীপ।
আবহাওয়াবিদদের মতে ঘূর্ণিঝড় সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই, কারণ শীতকালে উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঠাণ্ডা হাওয়া বয়, যা ঝড়ের অভিমুখের বিপরীত। যেহেতু ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ খুব একটা শক্তিশালী নয়, তাই উত্তরের বায়ু ঠেলে সে ভূমিতে প্রবেশ নাও করতে পারে, এতে আশ্চর্য হওয়ার মতো কিছুই নেই। আবার শীতল শুষ্ক বাতাস ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারলে জাওয়াদের ক্ষমতা আরও কমে যেতে পারে। আবহাওয়াবিদদের মতে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এই ভাবে বাঁক নিয়েছিল, এছাড়া ২০১৯ সালের ফনি বা ২০১৩ সালের ঘূর্ণিঝড় মাদি এরা সকলেই বাঁক নিয়েছিল, অতএব এই রকম বাঁক নেবার ঘটনাকে বিরল বলে মনে করছেন না আবহাওয়াবিদদের একাংশ। ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ থেকে বাংলা বেঁচে গেলেও নিম্নচাপের আশঙ্কা কোন ভাবেই কমছে না।বঙ্গে গভীর নিম্নচাপ হিসাবে অবস্থান করবে জাওয়াদ, ইতিমধ্যেই দক্ষিণের উপকূলের জেলা গুলিতে বর্ষণ শুরু হয়ে গেছে নিম্নচাপের প্রভাবে, সঙ্গে বয়ছে ঝোড়ো হাওয়া। রবিবার কোলকাতা সহ বেশ কিছু জেলাতেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এত কিছুর পরেও দোষর অমাবশ্যার ভরা কোটাল। সেপ্টেম্বরে ভারী বৃষ্টির জেরে এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্থ বহু জেলা, বাঁধ ভেঙ্গেছিল বহু নদীরও, তাদের মধ্যে এখনও অনেক নদীর বাঁধ মেরামতির কাজ সম্পন্ন হয়নি, তাই অমাবশ্যার ভরা কোটালে নদীর জলস্তর বেড়ে আবার বন্যার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
বর্তমানে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের অবস্থান বিশাখাপত্তনম থেকে প্রায় ২৩০ কিলোমিটার দূরে এবং পুরী থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে। এখনও পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় কোথাও আছড়ে না পরলেও পুরী এবং দীঘার সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস দেখা গেছে, পর্যটকদের সমুদ্র স্নানে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন, চলছে নজরদারিও। উপকূল থেকে ত্রান শিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বহু মানুষকে। ঘূর্ণিঝড় বা গভীর নিম্নচাপের জেরে প্রতিবারই উড়ান বন্ধ করতে হয় কোলকাতা বিমান বন্দর কতৃপক্ষকে, কিন্তু শনিবার সকাল পর্যন্ত এই রকম কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। বিমান বন্দর কতৃপক্ষের মতে রবিবার ঝড়ের গতিবিধি বুঝে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টাই ৪০ কিলোমিটারের বেশি হলে বাতিল করা হবে উড়ান। অবশ্য অনেক ট্রেন ইতিমধ্যেই বাতিল করেছে রেল কতৃপক্ষ। এদিন বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানান, “দুর্যোগ এড়াতে শনিবার সকাল থেকে কন্ট্রোল রুম চালু করা হবে। এছাড়া বিপর্যয় এড়াতে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সমস্ত বিদ্যুৎ কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে”।
তবে হাওয়া অফিসের তরফ থেকে বলা হয়েছে ল্যান্ডফল করবে না ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ, তবে নিম্নচাপের প্রকোপে বৃষ্টি বাড়বে এবং আস্তে আস্তে নিম্নচাপ বাংলাদেশের দিকে সরে যাবে।