Flash news
    No Flash News Today..!!
Tuesday, May 14, 2024

ভোট যুদ্ধে জমজমাট কাশিপুর বেলগাছিয়া এসেম্বলি, মুখোমুখি তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী গৌতম হালদার

banner

#Kolkata:

 দেখতে দেখতে প্রায় সময় হয়েই এলো পৌরসভার নির্বাচনের, তার মধ্যে থেকেই কাশিপুর বেলগাছিয়া এসেম্বলির ওয়ার্ড নম্বর ৪-এর তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী গৌতম হালদারের সাথে সাক্ষাৎ, জানা গেলো অনেক না জানা কথা ও ইতিহাস।

ওনার সাথে যখন দেখা হলো তখন তিনি তাঁর জয় ও জনগণের ওপর অনেকটাই বিশ্বাসী। 

    গৌতম বাবুর সাথে কথা বলে জানা গেল, ওনার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছে ১৯৮৪ সালে ছাত্র রাজনীতি থেকে, সেই সালের দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা বেলগাছিয়া এসেম্বলিতে একটি বাই ইলেকশন হয়, তখনকার বামপন্থী রথীন রায় মারা যাওয়ার কারণে। সেই সময় অমর ভট্টাচার্য সেই বাই ইলেকশনে দাড়ান, এবং মাস্টারমশাইয়ের হয়ে রাস্তায় নেবে তাঁরা ইলেকশন করেন, এবং সাথে সাথে সেই বছরের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে ইন্দিরা গান্ধী খুন হন এবং একটি নির্বাচন হয়, এই দুই নির্বাচন দিয়েই তার যাত্রা পথের শুরু।


      ওনার দীর্ঘ ৩৪ বছরের রাজনীতি জীবনের মাঝে তিনি অজিত পাঁজা ও প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সংস্পর্শ এসেছেন, ১৯৯৫ সালে তিনি জাতীয় কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন, সেই সময় সিপিআইএম-রা জনগনদের ভোট দিতে বাধা দেওয়ার পরও তিনি সামান্য ভোট পার্থক্যে হার স্বীকার করেছিলেন। রাজিব গান্ধীর মৃত্যুর পর তিনি এবং তাদের দলের লোকেরা মিলে রাজীব গান্ধীর একটি আবক্ষ মূর্তি তৈরি করেছিলেন যা উদ্বোধন করতে এসে ছিলেন তৎকালীন যুব কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট মমতা ব্যানার্জি। তারপর ১৯৯৩ সালে ২১শে জুলাই তে নো আইডেন্টিটি কার্ড না ভোট দাবিতে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে ধর্মতলা অবরোধ করেন, সেখানে ওনার চোখের সামনে মুরারি চক্রবর্তী ও মন্দন দাস গুলি বিদ্ধ হয়ে মারা যান, তার প্রতিবাদে ৬০ নম্বর বিটি রোডে ১৩ জন শহীদের জন্য একটি শহীদ বেদী বানান, সেই বেদী বানাতে গিয়ে তারা অনেক ঘাত প্রতিঘাত এর মাধ্যমে চলেছিলেন এবং সেখানেও তিনি মমতা ব্যানার্জি কে পেয়েছিলেন।

        ২০১০ সালে কাশিপুর বেলগাছিয়া লেডিস রিজার্ভেশন ছিলো, ২০১৫ দল ওনাকে পার্থী করেন ও ২০২০-এর ভোট যে ভোট ২০২১ এ হবে সেটা তেও দল আবারো তাঁর ওপর ভরসা রাখে।

         ওনার রাজনৈতিক অভিভাবক এবং গুরু কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন রাজনৈতিক গুরু বলতে গেলে অজিত পাঁজা কে পেলেও তারা সবশেষে মমতা ব্যানার্জির দিকেই আকৃষ্ট হতেন। মমতা ব্যানার্জির আকর্ষনে বহু আন্দোলনের সাক্ষী তিনি, চমকাইতলা থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদে ছাই আন্দোলন পর্যন্ত যে কোনো আন্দোলনের শরিক ছিলেন তিনি। 

          ১৯৯৮ সালে ইন্দোর স্টেডিয়ামে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট সীতারাম কেশরীর বক্তৃতা, ৯ তারিখে অজিত পাঁজা কে অপমান করা পর্যন্ত, তারপর অজিত পাঁজা মেয় রোডে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে মমতা ব্যানার্জীর সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন, সেই দিন মমতা ব্যানার্জি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আর কংগ্রেস করা সম্ভব নয়। এমনকি সেই বছরের ২৯শে ডিসেম্বর শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করেন তৃণমূল কং গ্রেস নতুন দল হিসেবে ভোট যুদ্ধে অবতরণ করবে, ও পয়েলা জানুয়ারি তৃণমূল কংগ্রেস দলটি তৈরি হয় এবং তখনো তিনি প্রত্যেকটি ঘটনার সাক্ষী ছিলেন।


               ওনাকে ওনার দলের সংগঠন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন ওনাদের দলের সংগঠন অনেকটাই শক্তিশালী, সিপিএম এখানে ভোটে মাত্র দুই থেকে তিন শতাংশ ভোট পায়, বিজেপি যাকে প্রার্থী করেছে সে এলাকার নয় এমনকি ওখানকার বিজেপির কর্মীরাও ওনার সাথে নেই, দলে দলে বিজেপি কর্মীরা সব তৃণমূলে যোগ দিয়ে দিয়েছে এতদিনে।

              দলবদল সম্পর্কে ও গত 5 বছর পরের বিজেপির তুলনায় এখনকার বিজেপি যথেষ্ট শক্তিশালী তার সাথে কিভাবে তিনি বা তার দল মোকাবিলা করবেন তা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আসা-যাওয়া করা লোকেদের ওপর কখনোই বিশ্বাস যোগ্যতা থাকে না, তারা মূলত নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য দলবদল করেন, যেমন শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন এবং তারপর তিনি অত্যন্ত খারাপ ভাষায় মন্তব্য করে যাচ্ছেন এই ঘটনাগুলিকে কেউ কখনো ভালো চোখে নিতে পারে না। আর দলবদল নিয়ে সর্বশেষে তিনি বলেন দলবদল কখনোই সঠিক কাজ নয়, এই দলবদল এর মাধ্যমে জনগণের ওপর প্রতারণা করা হয়।

              "মমতা ব্যানার্জি পশ্চিমবঙ্গের জনগণদের জন্য অনেক প্রকল্প করেছেন যেমন জন্ম হলে শিশুসাথী থেকে মৃত্যুতে সমব্যথী ও কন্যাশ্রী থেকে শুরু করে যুবশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে মোট ৮৪ টা প্রকল্প করেছেন" শুধুমাত্র মানব কল্যাণের জন্যই।


        প্রকল্পের কথা উঠতেই, বিরোধী-পক্ষের এই প্রকল্প গুলি কে নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করার কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি একটি সুন্দর উদাহরণ দিয়ে বলেন, "ব্যাটিং করে কিন্তু ব্যাটসম্যান আবার ওই ক্রিকেটে কিন্তু বেটিং ও আছে, বেটিং এর জন্য কি ব্যাটসম্যান ব্যাট করা ছেড়ে দেবে? মানুষতো দুর্নীতি করবেই কিন্তু আমাদের চোখ কান খোলা রাখতে হবে, ভালো কাজ গুলোকে কখনোই থামানো যাবে না"

              এইবারের পুরভোটে তিনি কিভাবে লড়াই করবেন? তার উত্তরে তিনি বললেন, আমরা মানুষের কাছে গিয়ে বলব ২০২০ এবং ২১ সালের মধ্যে অনেক ঝড় ঝাপটা এবং রোগের মাধ্যমে সমস্ত জনজীবন প্রায় স্তব্ধ হয়ে গেছিল, কিন্তু সেই সময় মমতা ব্যানার্জির মত জনদরদী নেত্রী সেই করোনা আবহ থেকে শুরু করে যশ ঝড়ের সাথে মোকাবিলা করার জন্য ছিলেন, আর কেউ কিন্তু ছিল না, কোভিদ-এর সময় এই ৪ নম্বর ওয়ার্ডে এমন কেউ নেই যে সহযোগিতা পাননি, এমনকি সেই সময় ইমিউনিটি বুস্টার হোমিওপ্যাথি ওষুধ সকলের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিয়ে এসেছি, অতএব বাদবাকিটা জনগণ বিচার করবে।

         কাশিপুর বেলগাছিয়া অঞ্চলে বস্তি গুলিতে একটি বৃষ্টির ফলে জল জমে যাওয়ার কথা উঠলে তিনি বলেন "শুধুমাত্র বর্ষার সময় তেই জল জমা নিয়ে আমরা ভাবি না আমরা সব সময় প্রস্তুত থাকি জল জমলে সেই জল কে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরিয়ে ফেলার, সেই কারণে আমাদের বৃষ্টির সময় এখানে ১২ টি পাম্প লাগানো থাকে, আর অন্যান্য সময় বৃষ্টি হলেও তাই মন জল জমে না। এমনকি আমাদের এখানে খাবার জলের কোন অসুবিধা নেই। আমাদের এখানকার সমস্ত রাস্তাঘাট আলোয় আলোকিত সব বস্তি ও খেলার মাঠে যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে।"

           উনি আগের বার যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন তা কতটা এই কদিনে সত্যি করা সম্ভব হয়েছে, তার উত্তরে তিনি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেন " ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষকে যথেষ্ট সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছি ও এক্ষণ ও করছি, কারণ সন্তুষ্টি এক জায়গা থেমে থাকে না, এক্ষণ ও অনেক কাজ বাকি আছে।" 

           সেই অঞ্চলে কিছু লোকদের অভিযোগ ছিল, কোন মানুষ কি দল করছেন তা দেখে নাকি তাদের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় তার উত্তরে গৌতমবাবু একটি ঘটনার কথা বলেন, "তার ওয়ার্ড অফিসের এক কর্মচারি তিনি কমিউনিস্ট আম্ফান ঝরে তার ঘরবাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছিল, কিন্তু আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তার ঘরবাড়ি ঠিক করে দেওয়া এবং সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ কুড়ি হাজার টাকা দেওয়া হয়, তাহলে কি করে দল দেখে আমি তাদের উন্নতি করলাম?" 


         ভবিষ্যতে তিনি জয়ী হলে কোন কোন কাজ অগ্রাধিকার পাবে সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "রাস্তাঘাট কে আরো ভালো করতে হবে, খেলার মাঠগুলোকে ভালো করতে হবে, এবং আমার নিজস্ব একটি ইচ্ছা বৃদ্ধাশ্রম তৈরি করার সেটি করতে হবে।"

           ভোটের আর কিছুদিন বাকি তিনি তার বিরোধী পক্ষদের কি বলবেন? তিনি বলেন তাদের প্রতি সম্মান জানাই এবং তাদের যদি মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা থাকে অবশ্যই তারা এগিয়ে আসুক তাতে কোনো বাধা নেই।"

          এবারের ভোটে জয় পাওয়ার জন্য তিনি কতটা আশাবাদী তার উত্তরে তিনি বলেন "ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে কেনিয়া খেলতে নেমেছে, এবং কেনিয়া ভাবল তারা জিতবে ওই আর কি!, হ্যাঁ তারপরও বলব একে অপরকে সম্মান দেওয়া উচিত আমিও সেই সম্মানটাই দিচ্ছি, এমনকি ভগবান রামচন্দ্রও একটি কাঠবিড়ালি কে সম্মান দিয়ে বলেছেন যে সেতুটি বানাতে তোমাদের যথেষ্ট অবদান আছে। বিরোধীরা সঠিকভাবে বিরোধিতা করুক তবেই হবে।" "বিরোধিতা থাকাটা জরুরি বিরোধিতা না থাকলে তা ডিক্টেটরশিপ এর জন্ম দেয়"।

           সবশেষে এই বলার এবারের পুরভোট জমজমাট হয়ে উঠেছে, এই কাশিপুর বেলগাছিয়া ওয়ার্ড থেকে এবারে কে জেতেন তা দেখা শুধু সময়ের অপেক্ষা।

Journalist Name : Saurav Chottapadhyay

Related News