খেলনা শিল্পে চিনকে এবার টক্কর ভারতের, বেজিংকে পাল্টা দিতে বড় পদক্ষেপ কেন্দ্র সরকারের

banner

#Pravati sangbad Digital Desk:

যত দিন এগোচ্ছে ততই আমাদের দেশে খেলনা শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটছে। এমনকি, সরকারও এই খাতে বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই দেশে চাইনিজ খেলনা-র ব্যবহার কমানোর পর এবার আন্তর্জাতিক বাজারেও চিনের সঙ্গে কড়া টক্করের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় সরকার এখন এই ক্ষেত্রের দেশীয় উৎপাদনকে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে সক্ষম করে তুলতে এই শিল্পে ৩,৫০০ কোটি টাকার PLI সুবিধার পরিকল্পনা নিয়েও কাজ করছে।

ভারতের বাজারে বিক্রি হওয়া প্রায় সব ধরনের খেলনাই আসে চিন থেকে। দেশে তৈরি খেলনা তার ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারে না। কিন্তু গালওয়ানে চিনের সেনাবাহিনীর হাতে ভারতের সেনাবাহিনী আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্কে অনেক বদল এনেছে। দেশ যাতে আর কোনও ভাবেই চিনের ওপর নির্ভরশীল না থাকে তার জন্য দেশবাসীকে সাবলম্বী হওয়ার ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাশাপাশি চিন থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের সমমানের পণ্য যাতে দেশের বুকেই তৈরি করা যায় তার জন্যও কেন্দ্র সরকার উদ্যোগী হতে বলেছে দেশীয় শিল্পসংস্থাগুলিকে। তার মধ্যে খেলনাও রয়েছে। দেশের খেলনার উৎপাদক সংস্থাগুলি যাতে এদেশেই চিনের থেকেও সস্তায় খেলনা তৈরি করতে পারে সেই দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। কেননা সেই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হলে চিনকে যেমন টক্কর দেওয়া যাবে তেমনি দেশের বুকে কর্মসংস্থানও হবে। সেই লক্ষ্যেই এবার বাংলার বুকে একটি বেসরকারি শিল্পসংস্থাকে কলকাতার অদূরে কল্যাণীতে জমি দিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। আর সূত্রে জানা গিয়েছে, তাতে নাকি খুশ দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

রাজ্য সরকার আগে থেকেই রাজ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গঠন ও তার মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়াবার জন্য জোর দিচ্ছে। সেই সূত্রেই খেলনা তৈরির কারখানা গড়ার ওপর জোর দিচ্ছে মমতার সরকার। এর আগে পশ্চিম মেদিনীপুরে শিল্পতালুক গড়ার জন্য জমি বরাদ্দ করেছিল ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতর। এবার সেই দফতরই কল্যাণীতেও জায়গা দিচ্ছে খেলনা গড়ার পার্ক নির্মাণের জন্য। সেখানে উৎপাদন কেন্দ্র গড়ার জন্য ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে। ভারত চেম্বারের উদ্যোগে দেশের খেলনা প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির একটি প্রদর্শনী শুরু হয়েছে শহরে। সেখানেই রাজ্যের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পদফতরের প্রধান সচিব রাজেশ পান্ডে জানিয়েছেন, খড়গপুরের কাছে খাসজঙ্গলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১২ একর জমি বরাদ্দ করেছে খেলনা কারখানা তৈরির জন্য। সেখানে ৫ থেকে ২০ কাঠা পর্যন্ত জমি নিজেদের চাহিদামতো পেতে পারে সংস্থাগুলি। এই শিল্পতালুকেই একটি ‘কমন ফেসিলিটি সেন্টার’ বা সবার ব্যবহারের জন্য সুবিধাকেন্দ্র গড়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সেখানে সরকার এমন কিছু মেশিনপত্র বসাবে, যা শিল্পসংস্থাগুলি কাজ লাগাতে পারবে। ইতিমধ্যেই সেই তালুকে ছ’টি শিল্প সংস্থাকে কাজ চালু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।  

পাশাপাশি, কলকাতার আশেপাশে একটি খেলনা নির্মাণের শিল্পতালুক গড়ে তুলতে চাইছিলেন খেলা নির্মাণের সঙ্গে জড়িত শিল্পপতিরা। তাঁরা শহরের আশপাশে কারখানা চালু করতে সরকারি সাহায্যের আর্জি জানিয়েছিলেন। সেই সূত্রেই জানান, কল্যাণীতে তাঁরা একটি চারতলা বাড়ি তৈরি করেছেন, যেখানে দু’লক্ষ বগর্ফুট জায়গা রয়েছে কারখানা গড়ার জন্য। এর পরিকাঠামো গড়েছে রাজ্য ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন নিগম। যদি এখানে চাহিদা আরও বাড়ে, তাহলে তাঁরা আরও জায়গা দিতে প্রস্তুত। যদি বাইরের রাজ্যের কোনও সংস্থা এখানে তাদের উৎপাদন ইউনিট ছোট করে হলেও চালু করতে চায়, তাহলেও সরকারি তরফে সব রকমের সহায়তা মিলবে। আর মমতার সরকারের এই পদক্ষেপের কথা পৌঁছেছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কানে। আর তার জেরে তিনি বেশ খুশি হয়েছেন বলেই দিল্লির সাউথ ব্লক সূত্রে জানা গিয়েছে।

আধিকারিকদের তরফে জানানো হয়েছে, দেশিয় খেলনাকে প্রদত্ত পিএলআই সুবিধার জন্য সরকার কোয়ালিটি কন্ট্রোল অর্ডার শুরু করেছে এবং কাস্টমকে ২০ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ বাড়ানোর মত পদক্ষেপগুলি দেশে নিম্নমানের আমদানি কমাতে এবং আভ্যন্তরীণ উত্‍পাদনকে বাড়াতেও সহায়তা করছে। 

পিএলআই সুবিধা নতুন বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে এবং রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এই প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, তাদের তরফে খেলনাগুলিতে পিএলআই সুবিধা নিয়ে কাজ করছি। তবে এটি শুধুমাত্র বিআইএস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ খেলনাগুলিতে দেওয়া হবে। বিভিন্ন ইনভেস্টমেন্টের স্ল্যাব অনুযায়ী পিএলআই সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। এটি ২৫ কোটি টাকা থেকে ৫০ - ১০০ টাকা বা ২০০ কোটি টাকাও হতে পারে। 

পিএলআই স্কিম এমন একটি স্কিম যার উদ্দেশ্য হল দেশীয় ইউনিটগুলিতে উত্‍পাদিত পণ্যের ক্রমবর্ধমান বিক্রয়ের জন্য কোম্পানিগুলোকে ইনসেন্টিভ দেওয়া। সরকার ইতিমধ্যেই ১৪ টি সেক্টরে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।


Journalist Name : Sampriti Gole

Related News