পরিচালক অভিজিৎ সেন ‘টনিক’ ছবিতেই প্রমাণ করেছিলেন দর্শক মনের খোরাক জোগাতে তিনি সিদ্ধহস্ত! হাসি মজা আর জম্পেশ সংলাপের মশালা দিয়ে সুপাচ্য খাদ্য পরিবেশনে হাত পাকিয়েছেন বেশ ভালই। এই নতুন ছবি তিনি উৎসর্গ করেছেন প্রয়াত তরুণ মজুমদারের স্মৃতিতে। ছবির কাঠামো, বিন্যাস ও বক্তব্যে “প্রজাপতি” নিঃসন্দেহে একটি পরিচ্ছন্ন ব্যবসায়িক ছবি। বাবা এবং অবিবাহিত ছেলের ভাব ভালোবাসা, অভিমান,খুনসুটি নিয়ে এক নির্মল পরিচ্ছন্ন ছবি দেখে মন্দ লাগবে না – তার গ্যারান্টি দিচ্ছে এই “প্রজাপতি”!
একটা বয়সে পৌঁছে মানুষ একাকীত্বে, নিঃসঙ্গতায় ভোগে, প্রয়োজন হয় ভালোবাসার ছোঁয়া মাখানো একটি হাত ও হৃদয়ের। ছবির প্রবীণ এবং প্রাণোচ্ছ্বল মানুষ গৌর চক্রবর্তী (মিঠুন) সেইরকমই। ব্যবসায়ে সফল তাঁর ছেলে জয় (দেব) বাবার সেই হৃদয়ের শূন্যতা প্রথমটায় ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা। এমনকী, তাঁর নিজের ব্যবসার তরুণী কর্মী মালার(শ্বেতা) মনের লুকোনো অনুভূতিও কি আঁচ করতে পেরেছিল! পারেনি। ৪৬ বছর পর হঠাৎ ছাত্রজীবনের বান্ধবী কুসুমের(মমতাশংকর) সঙ্গে দেখা হবার পর গৌর কিন্তু বুঝতে পেরেছিল দুজনের জীবনেই অভাব একজন সত্যিকার “বন্ধু”র। প্রথমটায় কুসুম সাড়া না দিলেও, গৌরের একাকীত্বের ডাকে আর নীরব থাকতে পারে না, নীরব সম্মতি দিয়ে ফেলে। কিন্তু আত্মীয়পরিজন, সমাজ এই ‘সাড়ে চুয়াত্তর” বছরের দুই প্রবীণের মিলনে সামাজিক বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তখন কী হয় – সেটা নিয়েই ছবির চিত্রনাট্য অবাস্তব হলেও হালকা হাসি মজা আর পরিবেশ তৈরি করে দর্শককে ‘করুণা, মায়া, মমতা’ মাখানো খাবারের একটি প্লেট পরিবেশন করেছেন – যা সহজে সংখ্যাগুরু দর্শক অবহেলা করতে পারবেন না। তাঁর চিত্রনাট্যের বড় গুণ হল স্ত্রী হারানো বাবা ও মা হারা ছেলের একটি মধ্যবিত্ত সংসারের ছবি রোজকার খুঁটিনাটির সঙ্গে পরিচালক সুন্দর উপভোগ্য মেজাজে তুলে এনেছেন পর্দায়। সেই সঙ্গে মিঠুনের জন্যই বেশ কিছু জমাটি সংলাপও ব্যবহার করা হয়েছে!
শ্রীকৃষ্ণর এক রূপ যেমন চিরপ্রেমিকের, তেমনই তাঁর আর এক রূপ বিপ্লবের। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তিনিই সারথী, তিনিই জীবনশক্তি। কৃষ্ণবর্ণের এক ছেলে সাতের দশকে নকশাল তকমা গায়ে সেঁটে বিপ্লবের আগুন জ্বেলেছিল কলকাতা শহরে।
মিঠুন চক্রবর্তী দীর্ঘ কয়েক বছর পরে বাবার রোলে কামব্যাক করলেন বাংলা ছবিতে। ছবিতে কাজের মেয়ে থেকে পাড়ার রকবাজ ছেলেরা তাঁকে দাদু ডাকে। কিন্তু ডিস্কো কিং দাদু যে আজও বক্সঅফিসে দশ গোল দিতে পারেন, তা আবারও প্রমাণিত। এ ছবি মিঠুনের ছবি। দেবের থেকেও পর্দা জুড়ে মিঠুনই বেশি। একাই পুরো ছবিটা টেনে নিয়ে গেছেন বলে বলে ছয় মেরে। বিশেষত মিঠুনের কিছু পেন্টেট সংলাপ ও 'দুয়ারে বৌ'-এর মতো মজার কথায় পরের পর হলভর্তি হাততালি চলেছে। তিনি যে কত বড় অভিনেতা এবং আজও তিনি আট থেকে আশি সবার ভালবাসার নাম, তা গৌর মিঠুন প্রমাণ করলেন। তিনি একাই একাশো।
ছবির লঘু ব্যাপার বলতে ছবির ক্লাইম্যাক্সগুলো বড্ড তাড়াতাড়ি ঘটতে থাকে। কিছু চরিত্রর ভাবনার পরিবর্তন এক নিমেষেই বদলে যায়। কিছু দৃশ্য চিত্রনাট্যর থেকেও বেশি মনে হয় বিজ্ঞাপনী প্রচারের মতো করেই বানানো। ভক্তিগীতির দৃশ্য এলেই অদিতি মুন্সী এত ব্যবহৃত, যে ক্লিশে লাগে।
তবু এই ছবি নিরাশ করবে না। বড়দিনের আদর্শ ছবি 'প্রজাপতি'। বয়স্ক বাবা-মা দের সঙ্গে বা ছেলেমেয়েদের নিয়ে সপরিবার দেখুন এই ছবি। মন ভাল হবেই নিশ্চিত। টিকিটের পয়সাও উসুল হবে। সর্বোপরি, মিঠুন চক্রবর্তীর এই পর্দা কাঁপানো কামব্যাক দেখতে 'প্রজাপতি' দেখতেই হবে।