নতুন বছরের শুরুটা ভাল হবে না চিনের জন্য। আগেই মিলছে তার আভাস। করোনার সুনামি শুরু হয়েছে চিনে। হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। দৈনিক লক্ষাধিক মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রাণও হারাচ্ছেন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে আরও উদ্বেগের কথা শোনাল বিশেষজ্ঞরা। জানালেন, আগামী বছরের জানুয়ারিতে আরও ভয়ঙ্কর অবস্থা হতে পারে চিনের। এই সময়ে সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছবে। অর্থাৎ নতুন বছরে চিনে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক কোটিতে পৌঁছতে পারে। এই কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত নয় চিনের স্বাস্থ্য দফতর, এমনটাও জানানো হয়েছে।
চিনের করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। জিরো-কোভিড নীতি শেষ হওয়ার পরও সেখানে করোনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েক দিনে চিনে কয়েক লক্ষ মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে হাসপাতালের শয্যা ভর্তি হয়ে গেছে এবং রাজধানী বেজিংয়ের শ্মশানে তাদের প্রিয়জনের শেষকৃত্যের জন্য মানুষকে ২৪ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যেকারণেই আতঙ্ক বাড়ছে ভারতেও। তবে দেশের ভাইরোলজিস্ট এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে চীনের মতো পরিস্থিতি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
রবিবারই চিনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, এবার থেকে আর সরকারের তরফে দৈনিক করোনা আক্রান্তের নথি প্রকাশ করা হবে না। সরাসরি ন্যাশনাল হেলথ কমিশন এই তথ্য প্রকাশ করবে। তবে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা প্রকাশ করা হবে নাকি সাপ্তাহিক বা মাসিক আক্রান্তের নথি প্রকাশ করা হবে, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। এরফলে কয়েকশো কোটি জনসংখ্যার দেশে কতজন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, সে বিষয়ে সঠিকভাবে কোনও তথ্য জানা যাচ্ছে না।
চিনের জ়েজিয়াং প্রদেশে বর্তমানে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লক্ষ পার করেছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্য়েই এই সংখ্যাটি দ্বিগুণ হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। জানুয়ারির শেষভাগে সংক্রমণের প্রভাব আরও বাড়তে পারে। জে়নঝাউ প্রদেশ, যা আইফোনের শহর হিসাবে পরিচিত সেখানের আইফোন কারখানার জন্য, সেখানেও জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সংক্রমণ শিখরে পৌঁছবে। পাশের স্যানডং ও হুবেই প্রদেশেও একই সময়ে করোনা সংক্রমণ দুই বা তিনগুণ বেড়ে যাবে বলে জানানো হয়েছে।
চিনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে চিনে একদিন দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি ৭০ লক্ষে পৌঁছেছিল, যা চিনে করোনার ইতিহাসে সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা। স্বাস্থ্য দফতরের অনুমান, যদি এভাবেই সংক্রমণ বাড়তে থাকে, তবে জানুয়ারি মাসে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ লক্ষে পৌঁছবে।
বিখ্যাত ভাইরোলজিস্ট ডক্টর গগনদীপ ক্যাং বলেছেন, "এই মুহূর্তে চিনে তীব্র ঠান্ডা আবহাওয়া চলছে। যদি আবহাওয়ার সাথে গাণিতিক হিসাব করা হয় তবে অনুমান করা হয় যে চিনে মোট সংক্রমণের সংখ্যা ৪০০ মিলিয়ন পর্যন্ত হতে পারে। এবং আগামী তিন মাসে পাঁচ থেকে দুই মিলিয়ন লোকের মৃত্যু হতে পারে।”
এর অনেক কারণ রয়েছে। প্রথম কারণ হল সেখানে বয়স্কদের কম টিকা দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় কারণ, বুস্টার ডোজ কার্যকরভাবে দেওয়া হয়নি। তৃতীয় কারণ হল চীন এখন পর্যন্ত বড় আকারের কোয়ারেন্টাইন এবং কঠোর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যা ক্রমবর্ধমান জনতার প্রতিবাদের মুখে প্রায় তিন বছর পর সম্প্রতি তুলে নেওয়া হয়েছে।