ওমিক্রনের চোখ রাঙানিতে কি ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজ্য সরকার ?

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

রাজ্যে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। চোখ রাঙাচ্ছে ওমিক্রনও। করোনার নয়া এই ভ্যারিয়েন্টকে নিয়ে গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। কারণ গতকাল বুধবার যে পাঁচজনের ওমিক্রন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে তাঁদের মধ্যে চারজনেরই বিদেশে যাওয়ার কোনও ইতিহাস নেই। ফলে আশঙ্কা বাড়ছে।ফের একবার থার্ড ওয়েভের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি বিচার করে চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, ফেব্রুয়ারিতেই হয়তো আছড়ে পড়তে পারে করোনার থার্ড ওয়েভ। প্রতি মুহূর্তে বদলে যাচ্ছে রোগীর আক্রান্তের সংখ্যা। আর সেদিকে তাকিয়ে একাধিক রাজ্যে এবং কেন্দ্রশাসিত রাজ্যগুলিকে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক।
দেশে ওমিক্রন বাড়তে থাকায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে চিকিৎসকদের। এই অবস্থায় জরুরি বৈঠকের ডাক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। আগামীকাল বৃহস্পতিবার এই বৈঠকের ডাক দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের আধিকারিক, চিকিৎসকরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা যাচ্ছে।
ভারত সব মিলিয়ে ১৪০ কোটি টিকাকরণ মাইলস্টোন পার করে গিয়েছে। ১৫-১৮ বছর বয়সীদের আগামী বছরের ৩ জানুয়ারি থেকে টিকাকরণ শুরু হবে বলে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী মোদীর। ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের যাদের কো-মর্বিডিটি রয়েছে তাদের চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে বুস্টার ডোজের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানানো হয়েছে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে।

পাশাপাশি যারা করোনা যোদ্ধা, যারা গত প্রায় দু'বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিরলস সেবা করে চলেছেন তাদেরকেও আরও ভালো রাখতে কেন্দ্র সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে স্বাস্থ্য কর্মী এবং ফ্রন্টলাইন কর্মীদের ভ্যাকসিনের প্রিকশন ডোজ বা বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। আগামী বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে এই ডোজ দেওয়া হবে।
আর কয়েক ঘণ্টা পরেই আসছে ৩১ ইভ আর নতুন বর্ষ বরণ। সেক্ষেত্রে যাতে বড়দিনের পুনরাবৃত্তি না হয় তাতে সচেষ্ট প্রশাসন। 
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করোনার বাড়বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন। বুধবার গঙ্গাসাগরে জেলার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে তিনি করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা করলেন। এরপরই তিনি নির্দেশ দিলেন প্রশাসনকে তৎপর হতে। প্রয়োজনে ফের করোনা বিধি লাগু করার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রয়োজনে ৩ জানুয়ারি থেকে কলকাতায় কনটেনমেন্ট জোন চিহ্নিত করা হবে কলকাতায়।
যেমন কলকাতায় ওয়ার্ডভিত্তিক কনটেনমেন্ট জোন হবে, তেমনই স্কুল-কলেজ নিয়েও পর্যালোচনায় জোর দিতে বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যদি সংক্রমণ বাড়তে থাকে তবে স্কুল-কলেজ ফের বন্ধ রাখা হবে। প্রয়োজনে ট্রেনের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার বার্তাও দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গে সরকারি দফতরে হাজিরার সংখ্যাো ৫০ শতাংশ করে দেওয়ার কথা বলেন তিনি। ৫০ শতাংশ ওয়ার্ক ফর্ম হোম করে দেওয়ার বার্তাও দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। করোনা যাতে ছড়িয়ে না পড়তে পারে, তার জন্য আগাম সতর্কতা জরুরি। তারপর আমরা বুস্টার ডোজ নিয়ে ভাবব। বললেন মুখ্যমন্ত্রী।

জানা যাচ্ছে, এই বৈঠকের পরেই স্বাস্থ্যভবনে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। বিকেল চারটে থেকে এই বৈঠক ডাকা হয়। সেই মতো চলছে স্বাস্থ্যভবনে উচ্চপর্যায়ের এই বৈঠক। স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নেতৃত্বে এই বৈঠক চলছে। যেখানে সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি সমস্ত হাসপাতাল করোনা নিয়ে চিকিৎসা করছেন এমন ডাক্তারদের ডাকা হয়েছে। হঠাত করে রাজ্যে করোনার সংক্রমণ এবং ওমিক্রনও বেড়ে যাওয়াতে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যদফতরও।সেদিকে তাকিয়ে কীভাবে রণকৌশল তা ঠিক করতেই এই বৈঠক বলে জানা যাচ্ছে। জানা গিয়েছে, এভাবে সংক্রমণ যদি বাড়তে থাকে তাহলে কত ওষুদ মজুত রাখতে হবে। হাসপাতালগুলিতে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে, এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালকে তৈরি রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
অন্যদিকে এই আতঙ্কের মধ্যেই রাজ্যে চলে এল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের আধিকারিকরা। গত কয়েকদিন আগেই স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে বেশ কয়েকটি রাজ্যে ডাক্তারদের পাঠানোর কথা বলা হয়। সেই মতো আজ বুধবার রাজ্যে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ডাক্তারদের একটি টিম এসে পৌঁছেছে বলে জানা গিয়েছে। শুধু আসা নয়, মাঠে নেমে কাজও তাঁরা শুরু করে দিয়েছে।

জানা যায় ওই প্রতিনিধি দল এদিন হুগলিতে যান। চুঁচুড়ায় হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সহ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। ওমিক্রন নিয়ে কীভাবে প্রস্তুতি তা নিয়েই এদিন আলোচনা হয় বিস্তারিত ভাবে। শুধু তাই নয়, করোনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যও ইতিমধ্যে যারা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা যাত্রীদের জন্য কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম তৈরি করেছিল। শুক্রবার বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রক জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ২০ মাস স্থগিতাদেশের পরে ১৫ ডিসেম্বর থেকে ভারতে এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলি পুনরায় চালু করা হবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক যে দেশগুলিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়েছে তাদের প্রাক-কোভিড নির্ধারিত ফ্লাইটের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ পরিচালনা করার অনুমতি দেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফ থেকে বলা হয়েছে ভারত এমন দেশগুলির সঙ্গে এখনও যোগাযোগ রেখেছে যেখানে করোনাভাইরাসের নতুন এই রূপের কারণে সংক্রমণ বাড়ছে। তাই ভারতে আশা ভ্রমণকারীদের নজরদারি বাড়াতে হবে।  অতিরিক্ত ফলো-আপ ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি টেস্টিং ও ট্র্যাকিং-এর জোরদার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক কোভিড আচরণবিধি মেনে চলার ওপরেও জোর দিয়েছে।  

ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিমানে আসা যাত্রীদের অতীত ভ্রমণের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য রিপোর্টি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। প্রতিটি স্তরে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নতুমা দ্রুততার সঙ্গে জিনোম সিকোয়েন্সিং-এর জন্য পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফ থেকে বলা হয়েছে এই পরবর্তিত ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট পরীক্ষা পরিকাঠামো চালু করা প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে বেশ কয়েকটি রাজ্যে সামগ্রিক পরীক্ষার পাশাপাশি আরটি পিসিআর টেস্ট অনেকটাই কম। পর্যাপ্ত পরীক্ষার অভাবে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে ওমিক্রনের সংক্রমণ রুখতে রাজ্যগুলিকে কড়া হতে হবে বলেও জানান হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফ থেকে। পাশাপাশি দেশের নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে বলেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 
স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে হটস্পট বা যে এলাকাগুলিকে সাম্প্রতিক করোনা পজিটিভের সংখ্যা বেশি বা ক্লাস্টর তৈরি হয়েছে- সেই জায়গাগুলির ওপর বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি। হটস্পটগুলিতে স্যাচুরেশন পরীভক্ষার প্রয়োজন ও সমস্ত ইতিবাচক নমুনা। সেগুলিকে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য ল্যাবে পাঠানো জরুরি বলেও জানান হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। 
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ মোকাবিলায় একাধিক পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাতে যেমন নাইট কার্ফুর কড়া করার কথা বলা হয়েছে তেমনই বলা হয়েছে বড় কোনও জমায়েতের অনুমতি না দেওয়া। বিয়েবাড়ি, শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের জমায়েত নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে হাসপাতালের শয্যা বাড়ানো সব প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্যগুলিকে।

Journalist Name : Sayantika Biswas

Related News