তুঙ্গে ভারত-চিন জল বিবাদ!অরুণাচলের সীমান্তে বিশাল বাঁধ নির্মাণ, কী ছক 'চালবাজ' চিনের ?

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

ভারত-চিন জল বিবাদ ধীরে ধীরে জটিল আকার নিচ্ছে। মূলত অরুণাচল সীমান্তে একের পর এক ভারত বিরোধী পদক্ষেপ করছে চিন। তার পাল্টা জবাব দিচ্ছে ভারতও। 

বিপদে ব্রহ্মপুত্র নদ। চিনের তৈরি বিশাল বাঁধে আটকে যাবে ব্রহ্মপুত্রর জলধারা। এমনই আশঙ্কায় ভারত। সীমান্ত সমস্যা নিয়ে দশকের পর দশক নয়াদিল্লি-বেজিং কূটনৈতিক ও সামরিক সংঘাতের মাঝে বারবার ব্রহ্মপুত্রের মতো আন্তর্জাতিক জলধারার গতি রুদ্ধ করার অভিযোগ উঠেছে চিনের বিরুদ্ধে। এবার অরুণাচল প্রদেশের কাছে চিনের তৈরি ষাট হাজার মেগাওয়াটের (60,000) বাঁধ ভারতের জন্য বিপদের ঘণ্টা বাজিয়ে দিল।

বিদ্যুৎ মন্ত্রক সূত্রে জানা গেছে, ইয়ারলুং সাংপো নদীতে চিন বিশাল বাঁধ নির্মাণ করছে। নির্মাণাধীন বাঁধটি মেদগ সীমান্তে অবস্থিত। এই অঞ্চলটি অরুণাচল প্রদেশের নিকটবর্তী। চিনের তৈরি এই বাঁধ নির্মাণ নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত। অরুণাচল প্রদেশের কাছে ইয়ারলুং সাংপোতে চিনের এই ৬০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বাঁধ ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয় বলেই মনে করছেন প্রকৃতি বিশেষজ্ঞ এবং প্রতিরক্ষা বিশারদরা।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, বাঁধ নির্মাণের পর ব্রহ্মপুত্র নদের জলধারা বা গতিপথ ঘুরিয়ে দিতে পারে চিন। শুধু তাই নয়, এই বাঁধের জল বন্ধ করে বন্যার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। চিনের এই বাঁধের কারণে অরুণাচল প্রদেশ এবং অসমে জলের ঘাটতি যেমন হতে পারে তেমনই বন্যা পরিস্থিতি হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, চিনের বাঁধে শুধু ভারত নয়, বাঁধ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশেও প্রভাব পড়তে পারে। বিদ্যুৎ মন্ত্রক সূত্র উদ্ধৃত করে একাধিক সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, পরিস্থিতি উদ্বেগের তবে ভারত যে কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। কারণ, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ভারত নিজেদের দিকে বিশেষত অরুণাচল প্রদেশে অনেক বাঁধ তৈরি করছে। এগুলো ব্রহ্মপুত্র বিপর্যয় থেকে রক্ষা করবে।

সম্প্রতি হিমালয় ঘেরা এলাকায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বড় বড় ঘটনা ধরা পড়ছে। বার বার ভূমিকম্প ও পার্বত্যাঞ্চলে হড়পা বান, পাথর ধসে পড়া বেড়েছে। প্রকৃতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিমালয়ের উপর বিভিন্ন নদ-নদীর স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ করে বাঁধ বানানোর ফল ভয়াবহ হবে। উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয় সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। একইভাবে চিনের দিকেও প্রকৃতির বিপক্ষে গিয়ে বাঁধ নির্মাণ ডেকে আনছে আরও বিপর্যয়। হিমবাহ গলে তৈরি ব্রহ্মপুত্রের মতো বিশাল নদী প্রবাহের স্বাভাবিক গতি বাঁধ দিয়ে আটকানোর ফল চিন্তাজনক।

চিনকে জবাব দিচ্ছে ভারতও : চিনের তৈরি ইয়ারলং - সাংপো নদীর উপর তৈরি বাঁধের জবাবে ভারত শুরু করেছে নিম্ন সুবনর্সিঁড়ি জলবিদ্যুত্‍ প্রকল্প। এনএইচপিসি-র আওতায় তৈরি এই প্রকল্পের ক্ষমতা ২০০০ মেগাওয়াট। এটা ছাড়া চিন সীমান্তের আশেপাশে আরও ৮ টি প্রকল্প তৈরি করতে চলেছে দেশ। এই প্রকল্পগুলির প্রধান উদ্দেশ্য হল, চিন যদি উপর থেকে জল ছাড়ে তাহলে এই বাঁধগুলি জলের স্তর নিয়ন্ত্রণ করবে।

অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র নদ ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে মিষ্টি জলের প্রায় ৩০ শতাংশ আসে এই নদ থেকে। ব্রহ্মপুত্রের জল থেকেই তৈরি হয় ৪০ শতাংশ জলবিদ্যুত্‍। এই নদের প্রায় ৫০ শতাংশই রয়েছে চিনের দখলে। 

ব্রহ্মপুত্রের উৎপত্তি চিনের জিমা ইয়ংজং হিমবাহ থেকে। এটি তিব্বতের পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে ভারতে ঢুকেছে। অরুণাচল প্রদেশ ও অসম হয়ে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম হয়ে সেদেশের মেঘনা নদীতে পড়েছে। ব্রহ্মপুত্রের উচ্চ অববাহিকায় আছে চিন ও ভারত। আর নিম্ন অববাহিকায় আছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক এই নদীর জলে তিনটি দেশের অধিকার। নয়াদিল্লির বারবার অভিযোগ, চিনের দিক থেকে ব্রহ্মপুত্রর গতিপথ রুদ্ধ করে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডেকে আনা হচ্ছে। তবে বেজিং নীরব।

Journalist Name : Sampriti Gole

Related News