প্রথম বার স্কুল সিলেবাসে বিশদে যৌন হেনস্থা প্রতিরোধের পাঠ, শিশু সচেতনতা গড়ে তোলাই লক্ষ্য

banner

#Pravati Sangbad digital Desk:

‘চেঁচিয়ে পাড়া মাত করো’র পর এবার শিশুদের যৌন হেনস্তা রুখতে শিশুদের মধ্যেই সচেতনতা গড়ে তুলতে এবার উদ্যোগ নিল রাজ্য সরকার। শিশুপাঠ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হল যৌন হেনস্তার সচেতনতার পাঠ। সপ্তম শ্রেণির স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষার পাঠ্যক্রমে এই যৌন প্রবৃত্তিগুলির সচেতনতার পাঠ যুক্ত করল স্কুলশিক্ষা দফতর। 
সপ্তম শ্রেণির স্বাস্থ্য ও শারীর শিক্ষা বইতে এই অংশ নথিভুক্ত করা হল। এর আগে সাধারণত ছড়া হিসাবেই তা সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।এবার এই প্রথম বিভিন্ন আইনের সংস্থানকে উল্লেখ করে সিলেবাসে তা বিশদে অন্তর্ভুক্ত করা হল।
মূলত "যৌন অপরাধ বিরোধী শিশু সুরক্ষা আইন ২০১২"-র একাধিক অংশকে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সপ্তম শ্রেণি র এই বইতে ছবি সহ আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি যৌন হেনস্থার শিকার হলে কী ধরনের শাস্তি হতে পারে, কোন কোন বিষয়কে যৌন হেনস্থা হিসেবে উল্লেখ করা হয়, যৌন হেনস্থা প্রতিরোধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, অভিভাবকদের এ ক্ষেত্রে কী ধরনের সচেতনতা প্রয়োজন, অভিভাবকদের পক্ষ থেকে শিশুদের ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, গোটা বিষয়টি সিলেবাসে উল্লেখ করা হয়েছে।
মোট চার পাতা জুড়ে এই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার বলেন, 'শিশুদের জন্য যেটা প্রয়োজন মনে করা হয়েছে, সেটাই সিলেবাসে নিয়ে আসা হয়েছে। শিশুদের কথা ভেবেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
২ জানুয়ারি থেকেই নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে পড়ুয়াদের। আর সেখানেই তাদের যে বই দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে এই সচেতনতার পাঠ যুক্ত করা হয়েছে। এই ধরনের যৌন হেনস্তা আটকাতে কী কী আইনি ব্যবস্থা রয়েছে। কী ধরনের শাস্তি হতে পারে। অভিভাবকদের এক্ষেত্রে কী ভূমিকা হতে পারে, ২০১২ পকসো (POCSO) আইনের বিভিন্ন দিকগুলিও এখানে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগেও কুস্পর্শ বা ব্যাড টাচ ও গুড টাচ নিয়ে বর্ণনা বিভিন্ন সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এবার বিস্তারিতভাবে পাঠ্যসূচিতে তুলে ধরা হল সামগ্রক বিষয়। এতদিন শুধু লিখে বিষয়টি বোঝানো হত, এবার শরীরের বিভিন্ন অংশের ছবি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, শরীরের কোন অংশে স্পর্শ করাকে যৌন হেনস্তার সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে।

তাই স্কুল বইতে এবার সংযুক্ত হল ছবি সহ যৌন নির্যাতন বা হেনস্তা সংক্রান্ত সচেতনতার পাঠ। সপ্তম শ্রেণির স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষা বইতে একাধিক ছবি ও ইলাস্ট্রেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতদিন ভাল স্পর্শ ও খারাপ স্পর্শ বা গুড টাচ ব্যাড টাচ সম্পর্কে খুবই স্বল্প পরিসরে তথ্য দেওয়া থাকত বইতে। কিন্তু সেই লেখা তথ্য অনেক ক্ষেত্রেই পড়ুয়াদের তা বোধগম্য হতো না। 

পড়ুয়ারা যাতে আরও বেশি করে যৌন নির্যাতন বা হেনস্তা সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করতে পারে ও সচেতন হতে পারে সেই উপলব্ধি থেকেই এবার প্রচুর ছবি ও ইলাস্ট্রেশন সহ আরও বিশদে স্কুল বইতে বাড়তি অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ের জন্য তৈরি বিশেষজ্ঞ কমিটি আগেই শিক্ষা দফতর তথা মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে এহেন প্রস্তাব দিয়েছিল। এবার সেই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন ঘটল।
সূত্রের খবর, এই বিষয় নিয়ে শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যদিও অন্যান্য রাজ্যে ইতিমধ্যেই এই বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সিলেবাসে। সাম্প্রতিক সময় রাজ্যের কয়েকটি স্কুলের যৌন হেনস্থার ঘটনাও ঘটেছে। মনে করা হচ্ছে, এই বিষয়গুলি নিয়ে শিশুরা পড়তে শুরু করলে তাদের মধ্যে যৌন হেনস্থা নিয়ে সচেতনতা আরও বাড়বে। তবে শুধু যৌন সচেতনতায় প্রতিরোধের পাঠ নয়, এবারে সিলেবাসে 'গুড টাচ, ব্য়াড টাচ কে আরও বিস্তৃত আকারে নিয়ে আসা হয়েছে।'
প্রসঙ্গত, রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন (WBCPCR) বেশ কিছুদিন আগে এই বিষয়ে চেঁচিয়ে পাড়া মাত করো নামে একটি পুস্তিকা ছেপে স্কুলে স্কুলে বিলি করত। তাতেও যৌন হেনস্তা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা পাঠ থাকত। কীভাবে অভিভাবকরা বিষয়টি মোকাবিলা করবে, কী করে একটি শিশু নিজেকে রক্ষা করবে, সে সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণে বর্ণনা থাকত। কিন্তু এবার পকসো আইনে কী ধরনের শাস্তি অপেক্ষা করছে, কাদের কাছে অভিযোগ জানাতে হবে, সবই সবিস্তারে দেওয়া হয়েছে।

Journalist Name : Sampriti Gole

Related News