ব্যক্তিগতভাবে আমার হার হয়নি বরং মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে আমি লড়তে পারিনিঃ সব্যসাচী

banner

#Exclusive Candid Interview :

নতুন বছরের ২২ জানুয়ারি রাজ্যের চারটি কেন্দ্রে হতে চলেছে পুরভোট। আর এই তালিকায় রয়েছে বিধাননগর, চন্দননগর, আসানসোল এবং শিলিগুড়ি পুরনিগমের নাম। বৃহস্পতিবার নিজেদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে রাজ্যের শাসক দল। আর তাতে রীতিমত চমক দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।


বিধাননগরের পুরভোটে ৩১ নং ওয়ার্ড থেকে ঘাসফুল শিবিরের পক্ষ থেকে প্রার্থী হয়েছেন সদ্য বিজেপি ত্যাগ করে সবুজ শিবিরে নাম লেখানো সব্যসাচী দত্ত। দলীয় বৈঠকের সিদ্ধান্তে সব্যসাচী দত্ত ফের বিধান নগর পৌরসভার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালে বিধাননগর পুরসভা তৈরি হওয়ার পর তৃণমূলের হয়ে ভোটে জিতে ছিলেন সব্যসাচী দত্ত। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পর তিনি মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দেন। যোগ দিয়েছিলেন বিরোধী দলে।

চলতি মাসেই কলকাতা পুরসভার নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে তিলোত্তমার ছোট লাল বাড়ি দখল করেছে ঘাসফুল শিবির। এবার এই চারটি পুরসভার মোট ২২৭ টি আসনে প্রার্থী কারা হবেন এই নিয়ে বৃহস্পতিবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবনে বসেছিল গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। আর এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ শীর্ষ নেতারাও। এই বৈঠকেই চূড়ান্ত হয় প্রার্থী তালিকা। পরে দলের ওয়েবসাইটে প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়।


তবে বিধানসভা ভোটে বিধাননগর থেকে বিজেপি প্রার্থী হয়েও জিততে পারেননি সব্যসাচী। ফলে চলতি বছরে বিধানসভায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় এর হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিতে দেখা যায় তাঁকে। সব্যসাচী দত্তকে প্রার্থী পদ দেওয়া নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। এবার সেই জল্পনার জট কাটিয়ে ফের তৃণমূলের প্রার্থী হলেন তিনি।

সামনেই বিধাননগর পৌরসভার ভোট, ভোটের ব্যস্ততা কাটিয়ে, প্রচারের খবর, ভোটের ফলের আশা, এই রকম কিছু খবর দেওয়ার জন্য কিছু সময় প্রার্থীরা সাংবাদিকদের দিয়েই থাকেন। সেরকমই কিছু খবর জানতে আজ প্রভাতী সংবাদ বিধাননগর পৌরসভার সল্টলেক এলাকার ৩১নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সব্যসাচী দত্ত –

 তিনি বলেন,”দিকভ্রান্ত হয়ে ছিলাম, তবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এবং অভিষেক ব্যানার্জির সহযোগিতায় আবার দলে অন্তর্ভুক্ত হলাম। যে দায়িত্ব আমায় দেওয়া হয়েছে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে বিধাননগর বাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব। আমার মনে হয় এবার নির্বাচনী ফলাফল ৪১-০ ই হবে”।


সব্যসাচী দত্তকে ফের বিধাননগর পুরসভার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী করা হয়েছে। সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন,”আমাকে প্রার্থী পদে আবার নিয়োগ করা হয়েছে এটা মমতা ব্যানার্জির আশীর্বাদ। আমাকে আবার দলে জায়গা দিয়েছেন এবং কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। ওনার সম্মান রাখার চেষ্টা করব”। তিনি আরও বলেন,”আমি বিধানসভায় দাঁড়িয়ে ছিলাম এবং আমি হেরেছি তা অকপটে স্বীকার করছি। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার হার হয়নি বরং মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে আমি লড়তে পারিনি। পৌরসভার একই ওয়ার্ডে এই নিয়ে আমি ষষ্ঠবার প্রার্থী হয়েছি। কোনো বার হারতে হয়নি। আমরা সবাই মমতা ব্যানার্জির প্রার্থী এবং লোকে ভোট দেয় মমতা ব্যানার্জিকে দেখে। আমি যখন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেছিলাম তখন আমার ওয়ার্ডের মানুষজন কিছু আমার ওপর  ক্ষুব্ধ হয়েছিল ঠিকই ককিন্তু এখন আবার সবাই আমাকে দেখে বলছে ওয়েলকাম ব্যাক।”

মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়াতে থেকে মানুষের জন্য কিছু করতে পারাতে তিনি নিজেকে ধন্য বলে মনে করেছেন। এইবারের কলকাতা পৌরসভার ভোটে বামফন্ট বিজেপিকে টেক্কা দিয়ে খাতা আপাতত খুলেছে  তাহলে কি আবার বামফন্ট বিজেপির জায়গা নিয়ে হয়ে উঠবে তৃণমূলের সব থেকে  বড় প্রতিপক্ষ ? সব্যসাচী দত্ত বলেন যে এখন বামফ্রন্টিদের নাম বদল হয়ে “রেড ভোলেনটিয়ার্স” হয়েছে।  “ক্যাকটাস গাছকে কেটে দিলে আবার সে দাঁড়িয়ে যাবে। সেরকমই হলো এই রেড ভোলেনটিয়ার্স। ওরা আগেই নিজেরদের মধ্যে ঝামেলা ঠিক করুক তারপর তো তৃণমূলের প্রতিপক্ষ হবে।”


●● “করোনার  নতুন রূপ ওমিক্রন এখন ভয়ানক রূপ নিচ্ছে, আর ঠিক আর কয়েকদিন পরেই বিধাননগর পৌরসভার ভোট, তো এই ওমিক্রনের কথা মাথায় রেখে প্রচার ব্যবস্থা কেমন করেছেন?”

●● “ওমিক্রনের কথা মাথায় রেখেই এখন প্রচারে তেমন লোকজন সাথে নিয়ে বেরোচ্ছি না। ৪-৫ জন সঙ্গী থাকছেন, জনসভা থেকে শুরু করে পদযাত্রাও করছি না। কারণ এই সব করা হবে যাতে মানুষের কাছে গিয়ে গিয়ে তাদের সমস্যার কথা জানতে পারি, কিন্তু তার জন্য তো আগেই মানুষকে বাঁচাতে হবে। ২০২০ থেকে সেই করোনাকাল শুরু হয়েছে, বারে-বারে করোনা নানান রকম রূপ পাল্টে আবার ফিরে আসছে আরো শক্তিশালী হয়ে। এই  সময়  আমাদের উচিত মানুষকে সচেতন করার সাথে সুরক্ষিত রাখার সাথে নিজেদেরকেও সুরক্ষিত  রাখতে হবে।”

●●  “সম্প্রতি প্রাক্তন তৃণমূল কর্মী দেবাশীষ জানা তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিদায় নিয়ে বিজেপিতে যোগদান , সেই বিষয় আপনার বক্তব্য কি?”

●● “কি আর বলবো এই বিষয়, শুধু এটাই বলবো দেবাশীষ আমার খুব ভালো বন্ধু ছিলো এবং আছে, কিন্তু ও যে দলটায় যোগদান করলো সেটা খারাপ দল।”

●● “আপনার ওয়ার্ডে জল নিকাশির সমস্যা খুব বেশি আছে, এটা নিয়ে কি ভাবছেন?”

●● “হ্যাঁ এখানে শুধু আমার নিজেস্ব ওয়ার্ড বলে নয়, পুরো এই সল্টলেক এলাকাতেই জল নিকাশির সমস্যা আছে। আর এটা আজ থেকে নয় বহু বছর আগেই যখন এই বিধাননগর এলাকাটি তৈরি হয়েছিল তখনকার ড্রেনেজ সিস্টেমটা চলছে এখনও অব্দি। পাম্পিং স্টেশন, পাম্প, পাম্পের পার্টস সব পুরোনো হয়ে গেছে, পাম্পগুলি রীতিমতো বারবার রিপেয়ার করে চালানো হচ্ছে, আর এই ড্রেনেজ সিস্টেম চেঞ্জ করার জন্য রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় এটা করাটা সফল হবে বলে আমার মনে হয়। কারণ এটা একটি বিশাল প্রজেক্ট বলা যেতে পারে।”


নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করতে চান বলেও জানান। তিনি বলেন নতুন ড্রেনেজ সিস্টেম চালু করে দিলে জল নিকাশির সমস্যা এবং সাথে রাস্তা-ঘাটেরও কিছু যা সমস্যা আছে সেই গুলো ঠিক হয়ে যাবে। এছাড়াও তিনি বলেন যে জনমানবের কথা ভেবে তিনি নির্বাচনের পরেই আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল সিস্টেম তৈরি করতে চান কারণ সম্প্রতি অনেকবার ঘূর্ণিঝড়ের আক্রমণে বড় বড় গাছ, এবং কেবিলের তাঁর জড়িয়ে গিয়ে অনেক বিপত্তি ঘটেছে। তাই তিনি  বলেন এতে শুধু মানুষকেই নয় বরং কর্পোরেশনকেও অনেক সমস্যার মুখে পড়তে হয়। সেই কথা মাথায় রেখেই তার এই সিদ্ধান্ত।

Journalist Name : Payel Das

Related News