তিনি মঞ্চে এন্ট্রি নিলেই চারিদিক ঝলমলিয়ে উঠত। তাঁর গানে নেচে উঠতো সবাই। সঙ্গীতের দুনিয়ায় একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব তিনি। সাড়ে ৪ দশক দীর্ঘ মিউজিক্যাল কেরিয়ারে ৬৫০-এর বেশি ছবির মিউজিক কম্পোজ করেছেন এই ব্যক্তিত্ব।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাঁর গানে মুগ্ধ হয়েছে। বলিউডের এক জেনারেশন থেকে অন্য জেনারেশনের জন্য গান গেয়েছেন তিনি। ৬৯ বছর বয়সে আচমকা তাঁর চলে যাওয়া সঙ্গীত দুনিয়ার জন্য এক অত্যন্ত বড় ক্ষতি। গান দিয়ে ভক্তদের মাঝে আজীবন বেঁচে থাকবেন বাপ্পি লাহিড়ী।
ডিস্কো' কী জিনিস, বলিউডকে বুঝিয়েছেন তিনি। গেল বছর সঙ্গীত দুনিয়া হারিয়েছে একের পর এক কিংবদন্তি শিল্পীকে। ২০২২-এ সুরলোকে পাড়ি দিয়েছেন লতা মঙ্গেশকর, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। যে তালিকায় নাম রয়েছে কিংবদন্তি গায়ক বাপ্পি লাহিড়ীরও।গতবছর আজকের দিনেই সবাইকে ছেড়ে পরলোক পাড়ি জমান ডিস্কো কিং।
বলিউডের এই সঙ্গীত পরিচালকের নাম ছিল গিনেস বুকেও। বলিউডের অন্য ধারার গানের সূচনা করেছিলেন তিনি। হিন্দি এবং বাংলা উভয় গানেই ডিস্কো, পপ মিউজিককে তুলে এনেছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। একটা সময়ে বাপ্পি লাহিড়ির সুর করা গান ছাড়া চলত না ছবি। ৩৩টি ছবির জন্য ১৮০টি গান রেকর্ড করেিছলেন তিনি। তার জন্য ১৯৮৬ সালে গিনেস বুকে নাম লিখিয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। বলিউডের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও পৌঁছে গিয়েছিল তাঁর গান। তিনিই একমাত্র মিউজিক ডিরেক্টর যাঁকে জোনাথন রসের লাইভ পারফরম্যান্সে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সময়টা ছিল ১৯৮৯ সালে।
বাপি লাহিড়ী ছিলেন যথার্থই সোনার ছেলে! গলায় সোনার একাধিক ভারী চেন। তাতে ঝুলত বড়সড় লকেট। হাতের সব আঙুলে সোনা-রুপোর আংটি। তাতে বসানো বহুমূল্য পাথর। কব্জিতে ব্লেসলেট। বাদ পড়েনি কানের লতিও। তাতে হরেক সাইজের দুল পরতেন। এবং চোখে থাকত অবশ্যই একটি ওজনদার রোদচশমা। সোনার গয়নার প্রতি তাঁর ঝোঁকের কারণও একটি সাক্ষাৎকালে জানিয়েছিলেন বাপি লাহিড়ী। তিনি বলেছিলেন, এলভিস প্রেসলির থেকেই তিনি এই ব্যাপারে উৎসাহ পেয়েছিলেন।
ডিস্কো স্টাইলে নিজের আলাদা অস্তিত্ব তৈরি করেছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী, যদিও তাঁকে শুধু ‘ডিস্কো কিং’ বললে ভুল বলা হবে। রোম্যান্টিক গান থেকে শুরু করে ভজন, কাওয়ালি থেকে রাগাশ্রয়ী গান, সবেতেই ছিল তাঁর অনায়াস যাতায়াত। গজলও লিখেছিলেন তিনি। বাপ্পিদা মানেই এক অন্যরকম স্টাইল স্টেটমেন্ট। গলায়, হাতে সোনার চেন সঙ্গে কালো জামা আর কালো চশমা। বাপ্পিদা বলতেই এই পরিচিত ছবিটা বাঙালির মনে চির উজ্জ্বল।