জ্যোতিবসুর পৈতৃক বাড়ি এখন পর্যটন কেন্দ্র

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

প্রতীক্ষার অবসান। উপমহাদেশের কিংবদন্তী জননেতা তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর বারদীর পৈত্রিক ভিটে রবিবার বিকেল থেকে বদলে গেল বারদী পর্যটন কেন্দ্রে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বারদী চৌধুরীপাড়া গ্রামে ওই পর্যটন কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন। ভারতের প্রখ্যাত বাম রাজনীতিক ও পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ১৯১৪ সালের ৮ জুলাই কলকাতার ৪৩/১ হ্যারিসন রোডের বাড়িতে জন্ম নেন। এই কিংবদন্তির শৈশবের অনেকটা সময় কেটেছে বাংলাদেশে তার পৈত্রিক ভিটা নরায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার বারদী চৌধুরীপাড়া গ্রামে। তার পিতা ডাঃ নিশিকান্ত বসু বারদী চৌধুরীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। সেই সুবাদে জ্যোতি বসুর ছোটবেলার অনেকটা সময়ই কেটেছে বারদী তার পৈত্রিক বাড়িতে। ১৩২৯ বাংলা সালের ১৩ অগ্রহায়ণ পাচু ওস্তাগারের মাধ্যমে নির্মাণ করা হয় বাড়িটি। দুই একর ৪ শতাংশ জমিতে জ্যোতি বসুর পৈত্রিক বাড়িতে রয়েছে ৮৮ বছরের পুরনো একটি দ্বিতলা ভবন, দুটি পুকুর, একটি কূপ, এছাড়া আম, জাম, কাঁঠাল ও তালসহ রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ গাছ। খাবার পানির জন্য জ্যোতি বসুর পরিবার যে কূপ ব্যবহার করতেন সেটি এখনও জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
 
রাজধানী ঢাকা থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার বারদীর চৌধুরীপাড়ায় জ্যোতি বসুর যে পৈত্রিক বাড়ি রয়েছে তা আসলে তাঁর দাদু বাড়ি। জ্যোতি বসুর দাদু শর‍ত্‍ চন্দ্র দাস এলাকায় বর্ধুষ্ণু ও প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর একমাত্র মেয়ে হেমলতার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল প্রখ্যাত হোমিওপ্যাথিক চিকি‍ত্‍সক নিশিকান্ত বসুর। বিয়ের সুবাদে বারদীর চৌধুরীপাড়ায় শ্বশুরবাড়ির মালিক হন তিনি। তবে কলকাতাতেই পসার জমিয়েছিলেন নিশিকান্ত। জ্যোতি বসুর জন্মও কলকাতার হ্যারিসন রোডে। তবে ছুটি পেলেই সপরিবারে বারদীর চৌধুরীপাড়ায় ছুটি কাটাতে আসতেন চিকি‍ত্‍সক নিশিকান্ত। সেই সুবাদেই বারদীর লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম সহ চৌধুরীপাড়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জ্যোতি বসুর ছোটবেলার স্মৃতি।জ্যোতি বসুর পিতা ডাঃ নিশিকান্ত বসু ছিলেন প্রখ্যাত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। পেশাগত কারণে তিনি জ্যোতি বসুর জন্মের আগেই বারদী থেকে কলকাতায় চলে যান। সেখানে তিনি চিকিৎসা পেশা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও সুযোগ পেলেই বসু সপরিবার বেড়াতে আসতেন বারদীর চৌধুরীপাড়ায় নিজ বাড়িতে। সেই সুবাদে সোনারগাঁয়ে বারদীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জ্যোতি বসুর শৈশবের অনেক স্মৃতি। রাজধানী ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পূর্বে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে বারদী চৌধুরী পাড়ায় জ্যোতি বসুর পৈত্রিক বাড়িটির অবস্থান। ১৯৯৭ সালের ১১ নভেম্বর শেষবার বারদীর পৈত্রিক ভিটেতে এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী। লোকনাথ ব্রহ্মচারীর মন্দিরে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েছিলেন।২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে জ্যোতি বসুর পৈত্রিক ভিটেয় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয় নির্মাণকাজ। গত বছরের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে তুলতে প্রায় ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। নতুন দোতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। রাত কাটানোর জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিতকক্ষ, রেস্তোরাঁ, স্যুভেনির শপ রয়েছে। দলবেঁধে বনভোজন করার জন্য বিশেষ ছাউনিও নির্মাণ করা হয়েছে। ওই পর্যটন কেন্দ্রে গবেষক তথা পর্যটকরা প্রয়াত জননেতার জীবনী সম্পর্কে নানা তথ্য জানার সুযোগ পাবেন। তাছাড়া পাঠাগারও থাকছে। সেই পাঠাগারে থাকছে জ্যোতি বসুর লেখা বিভিন্ন বই। থাকছে রাত্রিবাসেরও বিসেষ সুবিধা। পর্যটন কেন্দ্রটিতে রেস্তোরাঁর পাশাপাশি স্মারক উপহার বিক্রয় কেন্দ্রও রয়েছে। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত আগ্রহে জ্যোতি বসুর স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি গ্রন্থাগারে রূপান্তরিত করার ঘোষণা দেন। প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশে ২০১১ সালের ৪ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ এক কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে গ্রন্থাগারের নির্মাণ কাজ শুরু করে। যার প্রথম তলায় রয়েছে পাঠাগার কক্ষ, মহাফেজখানা ও শৌচাগার। দ্বিতীয় তলায় স্মৃতি জাদুঘর ও সেমিনার হল। নির্মাণ কাজ শেষ হলে ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জ্যোতি বসু স্মৃতি পাঠাগার ও জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। বর্তমানে এটি গ্রন্থাগার, জাদুঘর ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পুরাকীর্তি বিভাগের তত্ত্বাবধানে বাড়িটি সংস্কার ও সংরক্ষণ করে এখানে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, জ্যোতি বসুর ব্যবহ‍ৃত সামগ্রী দিয়ে একটি জাদুঘরসহ দর্শনীয় একটি ভবন তৈরি করে তার স্মৃতি চির জাগরূক রাখা হয়। বাঙালীর অকৃত্রিম বন্ধু এই মহান রাজনীতিবিদ ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি ইহলোক ত্যাগ করেন। ছোট বেলায় জ্যোতি বসু তার পৈত্রিক বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে তার দেখাশোনা করতেন আয়াতুন নেছা নামে এক মহিলা। পরবর্তীতে জ্যোতি বসুর পৈত্রিক বাড়িটির দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয় আয়াতুন নেছা ও তার ছেলে হাবিবুল্লার ওপর। বর্তমানে ওই বাড়িটি দেখাশোনা করছেন আয়াতুন নেছার নাতি ইউসুফ আলী ও ফকির মাহামুদ। এর আগে ২০১০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন জ্যোতিবসুর বাড়িতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণকাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০২২ সালে। প্রকল্পের জন্য ৩৮৩.৬৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হলেও এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৫৩ লাখ টাকা। উদ্বোধনের সময় পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান আলি কদর গ্রেড ওয়ান, প্রকল্প পরিচালক জাকির হোসেন সিকদার, বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আশরাফ আলী ফারুক, পর্যটন করপোরেশনের পরিচালক জামিল আহমদ, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজোয়ানুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইব্রাহিম মিয়া, বারদী ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বাবুল, জ্যোতিবসুর বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ইউসুফ আলী উপস্থিত ছিলেন।

Journalist Name : Sampriti Gole

Tags:

Related News