৩৫ বছর ধরে লড়াই করেও অক্লান্ত বেহালার মায়া বিশ্বাস

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

গত 8 মার্চ গেছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই দিন নারীদের ক্ষমতায়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া এরকম একটা সময়ে আজ এমন একজন নারীর কথা বলবো যাকে দেখে বলাই যায় সত্যিই নারীরা কোথাও পুরুষদের থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। তিনি হলেন বেহালার মায়া বিশ্বাস। বছরে একদিন নারীদিবসের উদ্‌যাপন নয়, গত ৩৫ বছর ধরে প্রতিদিনই অদম্য লড়াকু মানসিকতা আর ইস্পাতকঠিন ইচ্ছাশক্তির পরীক্ষা দিয়ে চলেছেন ৭০ বছরের মায়া বিশ্বাস। মঞ্চে দাঁড়ানো অবস্থায় গুণমুগ্ধদের স্ট্যান্ডিং ওভেশন? নাঃ, সেই অভিজ্ঞতা খুব বেশি হয়নি তাঁর। তবে, বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ১৫ জন পড়ুয়াকে বহু বছর ধরে মা দুর্গার মতোই আগলে রেখে লড়াই জারি রেখেছেন তিনি। সাড়ে তিন দশক ধরে চলছে সামান্য একটু জমির সন্ধান। যেখানে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্নদের জন্য তৈরি স্কুলটা নিয়মিত বসতে পারে। কিন্তু সেই জমির ব্যবস্থা আজও করে উঠতে পারেননি মায়াদি। ১৯৮৭-তে যখন লড়াই শুরু করেছিলেন, তখন তিনি মধ্য তিরিশ। ৩৫ বছর পর ৭০ পার করে ফেলেছেন। কিন্তু লড়াই শেষ হয়নি। একদিন জিতবই- এই মানসিকতা নিয়ে রোজ বিছানা ছাড়েন। দিনের শেষে খালি হাতেই ঘরে ফেরেন। তবু হতাশ হন না।

তিন সন্তানের মধ্যে দু'জনই বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন। অসহায়তা কুরে কুরে খেত 'মায়াদিকে'। সেই সময়ই বেহালায় এক বিদেশিনি জেন ওয়েবের সঙ্গে আলাপ তাঁর। বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্নদের নানা ভাবে শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করতেন জেন। 'সেটা ১৯৮৩ সাল', কয়েক সেকেন্ড ভেবে জানালেন বৃদ্ধা। তার পর বললেন, 'জেনের সান্নিধ্যে এসে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্নদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পদ্ধতির একটা প্রাথমিক ধারণা হয়েছিল আমার। একটা বিষয় বুঝেছিলাম, মাসে দু'দিন এমন প্রশিক্ষণ দিয়ে কিছুই হবে না। চাই নিয়মিত প্রশিক্ষণ।' সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্নদের জন্য পুরোদমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য একটা স্কুল খোলেন ১৯৮৭-তে। কিন্তু প্রশিক্ষণ দেওয়া আর পাকাপাকি জায়গায় স্কুল চালু করার মধ্যে যে বিস্তর ফারাক আছে, সেটা বুঝতে পারেননি তিনি। মায়া বিশ্বাস বলছেন, 'এলাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের কাছে আবেদন করেছিলাম, দিনে একটা ঘণ্টা যদি একটা ঘর পাওয়া যায় তাহলেই আমার চলবে। কিন্তু সেই আবেদনে সাড়া দেননি কেউই। বাধ্য হয়ে আমাদের বাড়িতেই পড়ানো শুরু করি।'
মায়াদির কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাঁর স্কুলের পড়ুয়ারা নাচ-গান-ছবি আঁকার মতো বিষয়ে রীতিমতো দক্ষ। এই স্কুলেই পড়েন মায়া বিশ্বাসের ছেলে রামকৃষ্ণ। তিনি ছাড়াও পড়েন জিৎ দাস, অপূর্ব খাঁ, শিপ্রা পুরকাইত, দেবোপমা ঘটক, অঞ্জু ঘোষরা। বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্নদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তাঁর পড়ুয়ারা এত পুরস্কার পেয়েছেন যে সেই পুরস্কার রাখার আর জায়গা নেই। ইন্ডিয়া গেটের সামনে পড়ুয়াদের সঙ্গে মায়াদির হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হচ্ছে, এমন দৃশ্য টিভির পর্দায় দেখে বাড়ির লোকজন মায়াদির জীবন সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছিলেন। তিন দশক পর আজও ওই দিনগুলোর কথা মনে করে নিজেই নিজেকে উৎসাহ দেন মায়া বিশ্বাস।

Journalist Name : Sampriti Gole

Tags:

Related News