আম পর্যটকেরা গরমে ঠান্ডার জায়গায় বেড়াতে যাওয়া মানেই বোঝেন সিকিম,শিলং।কিন্তু এগুলো ছাড়াও যে আমাদের দেশে অনেকগুলি শৈল শহর রয়েছে তার খবর রাখেন কি? হয়তো রাখেন। কিন্তু বেড়াতে যাওয়ার সময় নামগুলি মনে পড়ে না। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, তুলনামূলক কম খরচ, নিরিবিলি এবং মনোরম পরিবেশ একসঙ্গে পেয়ে যাবেন দক্ষিণ ভারতের শৈল শহরগুলিতে।
স্বপরিবারে হোক বা হানিমুন, কিংবা বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আনন্দ করে ঘোরা, দক্ষিণ ভারতের জবাব নেই।
উটি, তামিলনাড়ু:
দক্ষিণ ভারতের শৈলশহরের কথা্ ভাবলে যার নাম সবার আগে মনে আসে সে হল উটি। এটি দক্ষিণ ভারতের কাশ্মীর। আর ১৮৮৫ সাল থেকে চালু হওয়া নীলগিরি পার্বত্য রেলপথ দিয়ে খেলনার গাড়ি চড়ে উটি যাওয়ার আনন্দই আলাদা। কোয়েম্বাত্তুরের মেট্টুপালায়ম থেকে কুন্নুর হয়ে উটি যায় এই রেলগাড়ি। ২০০৫ সালে একে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করে ইউনেসকো। ৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথে আড়াইশোটি সেতু এবং ১৬টি সুড়ঙ্গ পার করে। দেশের মধ্যে একমাত্র এই নীলগিরি পার্বত্য রেলপথই মিটার গজে চলে। সম্প্রতি অবশ্য এটি খনিজ তেলের বাষ্পইঞ্জিনে চলতে শুরু করেছে। উটির প্রাকৃতিক সৌন্দ্রর্য্য অপূর্ব সুন্দর। নীলীগিরি এবং পূর্বঘাট পর্বতমালা, চায়ের বাগান, সবুজ বনানী, বোটানিক্যাল গার্ডেন, উটি লেক, কফির বাগান, ঝর্না, ডোডাবেতা শৃঙ্গ ইত্যাদি দেখে নিন ভাগে ভাগে। উটিতে গেলে অবশ্যই নানা স্বাদের চকোলেট খেতে ভুলবেন না।
মুন্নার, কেরালা :
কেরালার নাম করলে সবার আগে মনে পড়ে মুন্নারের নাম। কেরলের যাবতীয় সৌন্দর্য্যের নির্যাস এই ছোট্টো পাহাড়িয়া গ্রামটিতে এসে জমা হয়েছে। পশ্চিমঘাট পর্বতের সবচেযে সুন্দর স্থান এটি। পাহাড়ের গায়ে থরে থরে সাজানো চা বাগান, আর তার সারা শরীরে আলতো স্পর্শ করে যাওয়া মেঘের রাশি দেখে শরীরে শিহরণ জাগে।ট্রেকিং, রক ক্লাইম্বিং-এর দারুণ ব্যবস্থা আছে এখানে, সঙ্গে রয়েছে নৌকা বিহার এবং চা-বাগানে ডুয়েট গাওয়ার দারুণ সুযোগ।
আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এই শহরের যেদিকেই তাকাবেন দেখবেন শুধু সবুজ আর সবুজ। মুন্নার যাওয়া যায় বছরের যে কোনও সময়ই। মুন্নারের সবচেয়ে কাছের রেলস্টেশন এর্নাকুলাম জংশন। দূরত্ব ১২৮ কিলোমিটার। স্টেশন থেকে মুন্নার পৌঁছোতে ঘণ্টা চারেক সময় লাগে। মুন্নারে দেখতে পারেন এরাভিকুলাম জাতীয় উদ্যান, মাত্তুপেট্টি বাঁধ, পোথামেড়ু ভিউ পয়েন্ট, আনাইমুদি, ব্লসম পার্ক, দেবীকুলাম, পল্লিভসল, টাটা টি মিউজিয়াম, ভত্তভড়া, আত্তুকল জলপ্রপাত, চিয়াপারা জলপ্রপাত, কুদালা হ্রদ, ন্যায়ামকড়, মীসাপুলিমালা, কোক্কুমালাই, লক-হার্ট গ্যাপ, চিথিরাপুরম, রাজামালা, টপ স্টেশন, মারায়ুরডলমেনস্, ইন্দো সুইস ডেয়ারি ফার্ম, লাইট অফ পাই চার্চ।
সোলাং ভ্যালি: হিমাচল মানেই সিমলা, কুলু, মানালি নয়। মানালি থেকে লেহ-মানালি হাইওয়ে ধরে রোটাং পাস যাওয়ার পথে ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সোলাং ভ্যালি। হিমাচল প্রদেশের আকর্ষণীয় জায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম। সমুদ্রতল থেকে ৮ হাজার ৪০০ ফুট উঁচুতে এর অবস্থান। রোটাং পাস খোলা থাক বা না থাক, ফেরাবে না সোলাং ভ্যালি। সব সময়ে জমজমাট থাকে এই উপত্যকা। কুলু জেলার সোলাং ভ্যালি অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের স্বর্গরাজ্য। পাহাড়ের চূড়া ছুঁয়ে ঘন জঙ্গলের মাথার উপর দিয়ে প্যারাগ্লাইডিং করে ডানা মেলে পাখির মতো ওড়ার মজাই আলাদা! এ ছাড়াও রয়েছে ট্রেকিং, ক্যাম্পিং করার সুযোগ।
কুর্গ: পশ্চিমঘাট পর্বতের ঢালে কোদাগু জেলায় পাহাড়ঘেরা এক অনন্ত স্বপ্নের, যার নাম কুর্গ। তার শরীর জুড়ে সবুজের আধিক্য এবং কাবেরীর স্পন্দন। ইদানীং টুরিস্ট স্পট বাছতে গিয়ে বাঙালি কর্নাটকের এই মনোরম জায়গাটিতে একটু বেশিই ‘টিকমার্ক’ বসাচ্ছে। উঁচুনিচু পাহাড়, আঁকাবাঁকা পথ, বিরামহীন ছোট-ছোট ঝর্না, নদী, একরের পর একর জমিতে কফি চাষ— শহুরে কোলাহলের বাইরে যেন এক টুকরো স্বর্গ। মিলবে রিভার রাফটিং, জ়িপলিং, ট্রেকিং ও কায়াকিং-এর সুযোগ।
পঞ্চগনি: গরমে স্বস্তির খোঁজ করতে চাইলে আপনার গন্তব্য হতে পারে মহারাষ্ট্রের পঞ্চগনি। মুম্বইয়ের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে এই শৈলশহরের অবস্থান। মহাবালেশ্বর থেকে যেতে সময় লাগবে প্রায় আধ ঘণ্টা। দুপুরের দিকে রোদ ঝলমলে পাহাড়ের দৃশ্য আর সন্ধ্যা নামলেই হালকা হিমেল হাওয়া! ঘুরে আসতে পারেন ধুম ধাম লেক, পারসি পয়েন্ট, সিডনি পয়েন্ট, টেবলল্যান্ড, লিঙ্গমালা ঝর্না! গরমের ছুটি জমবে বেশ ভালই।