রিয়েল লাইফ এর ' মিসেস চ্যাটার্জি ' কেমন আছেন

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

কিছুদিন আগেই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে বঙ্গকন্যা রানী মুখার্জি অভিনীত ' মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে '। ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাতে অভিনয় করেছেন বাংলার হার্টথ্রব অনির্বাণ ভট্টাচার্য। দুজনের অনবদ্য অভিনয় আর ছবির অসাধারন থিম মন জয় করেছে বহু দর্শকদের। আর তাই এক সপ্তাহের মধ্যেই বক্স অফিসে দুর্দান্ত কালেকশন করেছে সিনেমাটি। ছবির মূল বিষয় হলো বিদেশের মাটিতে সন্তানদের ফিরে পাওয়ার জন্য এক মায়ের লড়াই। তবে গল্পটি নেহাৎই কোনো ফিকশন নয়। এর পেছনে রয়েছে এক সত্য। কারোর বাস্তব জীবনের সংগ্রামই গল্পের রূপ নিয়েছে এই ছবিতে। ঘটনাটি ঘটেছিল আজ থেকে বারো বছর আগে, ২০১১ সালে। ওই বছরই স্বামী অনুরূপ এর চাকরির সূত্রে নরওয়েতে পাড়ি দিয়েছিলেন বাংলার মেয়ে সাগরিকা চক্রবর্তী। তাদের সঙ্গে ছিল দুই দুধের শিশু। তাদের ছেলে অভিজ্ঞান এর বয়স তখন তিন আর মেয়ে ঐশ্বর্য তখন সবে এক বছরের। আর পাঁচটা ভারতীয় মা এর মতই বড়ো করছিলেন সন্তানদের। হঠাৎই একদিন ছবিটা পাল্টে গেলো। নরওয়ে এর শিশু সুরক্ষা কমিশন এসে একদিন আচমকাই তুলে নিয়ে গেলো দুই সন্তানকে।অভিযোগ ছিল এই সন্তানদের বাবা মা এরা ঠিক ভাবে শিশুদের বড়ো করতে পারছেন না। নরওয়ে প্রশাসন এর মতে সাগরিকা তার সন্তানদের নিজে হাতে খাইয়ে দিতেন। ভারতীয় সমাজে এটি খুব সাধারণ চিত্র হলেও নরওয়েতে এটিই অপরাধ হয়ে দাঁড়ায়। তাদের মতে সন্তানকে হাতে খাওয়ানো মানে তাকে জোর করে ইচ্ছের বিরুদ্ধে খাওয়ানো। এছাড়াও তারা দাবি করেন সাগরিকা এখনো বাচ্চাদের কোলে নেন। ছেলে তিন বছরের হয়ে গেলেও এখনো বাবার কাছে ঘুমোয় অভিজ্ঞান। তার জন্য আলাদা কোনো ঘরের ব্যাবস্থা নেই। এমন কি বাড়িতে খেলার জায়গার অভাব বলেও দাবি করেছিল প্রশাসন। দুধের শিশুদের কেড়ে নেয় মা এর থেকে।

তারপর থেকে শুরু হয় সাগরিকার লড়াই। অনেক অনুনয় বিনয় করেও কাজ হয়নি। পড়ে ভারত সরকার নরওয়ে সরকারকে অনুরোধ করলেও ফল পাওয়া যায়নি। পরে আর কোনো রাস্তা না পেয়ে আইন এর পথ বেছে নেন সাগরিকা। দীর্ঘ লড়াই চালিয়ে যান। ততদিনে স্বামীর সাথে ঝামেলা বৃহৎ আকার নিয়েছে।অবশেষে ডিভোর্স হয়ে যায় তাদের। বিদেশের মাটিতে একা মা লড়াই করে যান সন্তানদের ফিরে পাওয়ার জন্য। অবশেষে ২০১৩ সালে দুই বছর লড়াই এর পর সাগরিকাকে তার সন্তানদের কাস্টডি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সাগরিকা নরওয়ে থেকে কলকাতাতে ফিরে আসেন। ছবিতে রয়েছে তার এই সংগ্রাম এর কথা। তবে এখন সাগরিকা কেমন আছেন? কিভাবে কাটছে তার দিন? দুই সন্তান কে নিয়ে একাই দেশে ফেরেন সাগরিকা। প্রাক্তন স্বামী অনুরূপ এখনো নরওয়ে এর বাসিন্দা। সন্তানদের ভরণপোষণ এর কোনো দায়িত্বই নেননি অনুরূপ। কোনো যোগাযোগই রাখেননি। সাগরিকার ঘরেই রয়েছে এখন বৃদ্ধ বাবা মা আর দুই সন্তান এর দায়িত্ব। কলকাতাতে দাদু দিদার কাছেই বড়ো হচ্ছে অভিজ্ঞান ও ঐশ্বর্য্য। এত লড়াই এর পর এখন ও সন্তানদের কাছে থাকতে পারেন না সাগরিকা। সংসারের ভার সামলাতে কাজে যোগ দিয়েছেন। কাজের সুত্রে নয়ডা তে থাকতে হয় তাকে। আজ ও সন্তানদের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন একলা মা।

Journalist Name : Srimita Sasmal

Tags:

Related News