মানুষ নয়! প্রথম মহাকাশচারী ছিল পশু পাখিরা!

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

কিছু বছর আগেও মহাকাশ সফর মানুষের কাছে ছিল একটি কল্পনার বিষয়। এবং সেই পুরনো সময় থেকেই এই কল্পনার জগতে পা রেখে ফেলেছিল বহু প্রাণীরা। প্রাণীদের মহাকাশ অভিযানে পাঠানোর পিছনে বিজ্ঞানীদের অনেক কারন ছিল। তখনও তাঁরা জানতেন না মানবদেহ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ থেকে মুক্ত হয়ে মহাশূন্যের ভরশূন্য পরিবেশে কেমন আচরণ করবে। প্রাণীর শরীর বায়ুমন্ডল ত্যাগ করার পর কী প্রতিক্রিয়া করে এবং মহাশূন্যের নানা মহাজাগতিক রশ্মির আঘাত পৃথিবীর কার্বনভিত্তিক প্রাণের উপর কি প্রভাব ফেলতে পারে? এই সমস্ত উত্তর খুঁজতেই প্রাণীদের পাঠানো হতো মহাকাশে। আর এর পরে মহাকাশে মানুষ পা রাখতে সক্ষম হয়েছিল। এই গবেষণায় নেমে ছিল বহু দেশ।   
*ফলের মাছি* 
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রায় শেষে অর্থাৎ ১৯৪৪ সালে পিছিয়ে পড়া নাৎসি বাহিনী শেষ চেষ্টা হিসেবে তৈরি করেছিল ভি-২। যা ছিল ইতিহাসের সর্বপ্রথম ব্যালিস্টিক মিসাইল। এই ব্যালিস্টিক মিসাইলটি আবিষ্কার করেছিলেন ভন ব্রাউন নামে এক জার্মান ইঞ্জিনিয়ার। এই মিসাইলটি পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিলোমিটার বা ৫০ মাইল উপরে উঠে যেতে পারত, যা কিনা বায়ুমণ্ডল আর মহাকাশের সীমানার খুব কাছাকাছি এবং ১৯০ কিলোমিটার দূর থেকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম ছিল। ভি-২ পৃথিবীর প্রথম স্পেস রকেটের তকমা পেয়েছিল। ১৯৪৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি, জার্মানির থেকে দখল করা একটি ভি-২ রকেট যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর হোয়াইট স্যান্ডস মিসাইল রেঞ্জ থেকে মহাকাশে পাঠানো হয়। রকেটের বিস্ফোরক বসানোর স্থানে ফ্রুট ফ্লাই, বা ফলের মাছি রাখা হয়েছিল। আর এটি করার কারণ হিসাবে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন যে প্রাণীর ডিএনএ-র উপর মহাজাগতির রশ্মির প্রভাব কেমন হতে পারে সেটা জানতে। এই জ্ঞান ভবিষ্যতে তাদের মনুষ্যবাহী রকেট তৈরি করতে সাহায্য করবে। এই রকেটের গন্তব্য ছিল বায়ুমণ্ডল আর মহাকাশের সীমানা, যা ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০৯ কিলোমিটার উপরে শুরু হয়েছে। এই দূরত্ব পর্যন্ত রকেটি যেতে পারলেই বিজ্ঞানীদের কাজ সমাধান হবে। ঠিক সেই সীমানায় রকেটটি পৌঁছে যায়। এরপর রকেটটি আকাশ থেকে খসে পড়ার সময় ফ্রুট ফ্লাই বহনকারী অংশটি আলাদা হয়ে যায় এবং প্যারাসুটের মাধ্যমে নিউ মেক্সিকোর নির্দিষ্ট স্থানে পতিত হয়। এরপর বিজ্ঞানীরা দেখতে পান যে ওই মাছিগুলো আবদ্ধ স্থানে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং তাদের কোনোরকম কোন ক্ষতিই হয়নি।
   
*ইঁদুর* 
যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা ১৯৫০ সালের ১৪ অগাস্ট মহাকাশ অভিযানে পাঠায় একটি ইঁদুরকে। ১৩৭ কিলোমিটার উপরে উঠতে সফল হলেও ফেরার পথে তার বাহনের প্যারাসুট কাজ না করার কারণে তীব্র বেগে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ে। এরপর আরেকটি ইঁদুরকে পাঠানো হলে সেই একই সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়েছিল যার ফলে ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল সেই অভিযানও। তবে থেমে যায়নি বিজ্ঞানীরা। তারা তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৬০ সালের ১৯ আগস্ট উৎক্ষিপ্ত করা ৪৪ টি ইঁদুর সফলভাবে জীবিত অবস্থায় পৃথিবীর বুকে ফিরে আসে। এর ফলে বিজ্ঞানীদের পক্ষে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়েছিল যে মহাকাশের পরিবেশে মানুষকে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে।
*লাইকা* 
আমাদের গ্রহের কক্ষপথ ভ্রমণ করা সর্বপ্রথম মহাকাশচারী কে ছিল? এই প্রশ্নের উত্তরে লাইকার নামই চলে আসে আমাদের মনে। এই কুকুরটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া। তাকে ১৯৫৭ সালের ৩ নভেম্বর, মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল। লাইকাই ছিল পৃথিবীর কক্ষপথ ঘুরে আসা প্রথম প্রাণী। তবে দুর্ভাগ্যবশত এই কুকুরটি জীবন্ত অবস্থায় আর পৃথিবীর বুকে ফিরে আসতে পারেনি। অভিযোগ করা হয় যে, লাইকাকে মাত্র সাত দিনের অক্সিজেন এবং একদিনের খাবার দিয়ে রকেটে তুলে দেওয়া হয়েছিল। সোভিয়েতরা দাবি করে যে, সাত দিন জীবিত ছিল লাইকা, তবে সমালোচকরা দাবি করেন যে সম্ভবত রকেটি উৎক্ষেপণ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হয়েছিল লাইকার। জীবিত হোক বা মৃত, আমাদের গ্রহের কক্ষপথ ভ্রমণ করা সর্বপ্রথম মহাকাশচারীর তকমাটা জুটেছিল লাইকার কপালেই।

Journalist Name : Ashapurna Das Adhikary

Tags:

Related News