#Exclusive Candid Interview:
পৌরসভা ভোট নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি, গত ডিসেম্বরেই কোলকাতা পৌরসভার ভোট পর্ব শেষ হয়েছে, বিপুল ভোটে জয় লাভ করেছে ঘাসফুল শিবির। তারপরেই ভোট হওয়ার কথা ছিল রাজ্যের ৪ পুরো নিগমে, কিন্তু করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কাই খানিকটা পিছিয়ে গত ১২ই ফেব্রুয়ারি ভোট শেষ হয়েছে। রাজ্যের ৪ পুরো নিগমের ফলাফল ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে, আর তাতে জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস। তবে রাজ্যে এখনও বাকি ১০৮ পৌরসভা নির্বাচন, আগামী ২৭শে ফেব্রুয়ারি রাজ্যের ১০৮ পৌরসভাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। তার মধ্যেই প্রভাতী সংবাদের পক্ষ থেকে আমি সব্যসাচী এবং প্রিয়শ্রী পৌঁছে গিয়েছিলাম বোলপুর পৌরসভার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান শ্রী নরেশ চন্দ্র বাউরি মহাশয়ের কাছে, তার ব্যাস্ত প্রচার কর্মসূচীর থেকে খানিকটা সময় আমাদের দিয়েছিলেন।
§ “ প্রথমে আপনাকে স্বাগত জানাই, আপনার রাজনৈতিক জীবনের পথচলা কিভাবে শুরু হয়েছিল?”
§ “ আমার বাড়ি ছিল দুবরাজপুর থানার অন্তর্গত হেতমপুর গ্রামে। প্রথমে ১৯৮৪ সালে আমি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে আসি, সেই সময় থেকে আমি ছাত্র পরিষদের সাথে যুক্ত হয়, তখন থেকেই আমার রাজনৈতিক জীবন শুরু। ১৯৯১ সালে আমি এমএ পাশ করি, পাশ করার ঠিক এক মাস আগে বোলপুর নিচুপট্টি হাইস্কুলে চাকরির সুযোগ আসে। আমাদের রাজ্যের বর্তমান মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা মহাশয় তখন আমাদের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিষদের নেতৃত্ব দিতেন, তার হাত ধরেই আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু। পরবর্তীকালে আমাদের বর্তমান বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, ওরফে কেষ্টদা, তিনিই আমার রাজনৈতিক গুরু। এই ভাবেই আমি ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসেছি।
§ ১৯৯৫ সালে আমাদের এই ওয়ার্ড অর্থাৎ বোলপুর ৬ নম্বর ওয়ার্ড ছিল সিপিএম এর দুর্গ, ১৯৯৫ সালে অভিবক্ত কংগ্রেসে আমি নমিনেশন ফাইল করি, কিন্তু আমার শ্রদ্ধেয় মাস্টারমশাই শিবশঙ্কর ব্যানার্জী আমাকে বলেন, নরেশ তুমি নমিনেশন তুলে নাও, আমি এই বছর লড়বো, আমি তার কথা মতো নমিনেশন তুলে নিয়ে শিবশঙ্কর ব্যানার্জীর হয়ে প্রচার করি এবং ১৩১ ভোটে এই বাম দুর্গ থেকে আমরা জয় লাভ করি। পরবর্তীকালে ২০০০ সালে প্রথম তৃণমূল কংগ্রেসের মহিলা কাউন্সিলার আমার স্ত্রী তাপসী বাউরি এবং ১৯৯৮ সালে যখন কংগ্রেস থেকে তৃণমূল হয়, আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন থেকে এই তৃণমূল কংগ্রেস দল গঠন করলেন সেদিন থেকে আমরা এই দল করে আসছি। এবং এই ভাবেই আমার রাজনৈতিক জীবন শুরু।“
§ “আমরা সাধারণত দেখে থাকি কোন স্কুল শিক্ষক সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন না, আপনি একদিকে স্কুল শিক্ষক এবং অন্য দিকে রাজনীতিতে কীভাবে অংশগ্রহণ করেন?”
§ “ আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাত্র রাজনীতি থেকে এই জায়গাই পৌঁছে গেছেন, আমাদের বেস ছাত্র রাজনীতি থেকেই, রাজনীতি আমার নেশা এবং পেশা শিক্ষকতা। আমি শিক্ষক হিসাবে যেমন পাঠ দান করি আর আমার পাড়ার মানুষ এবং আমার দলের মানুষের সাথে মিলে মিশে আমি সেবা করি। আমি যখন স্কুলে প্রবেশ করি তখন আমি সাধারণ শিক্ষক হিসাবে আমি ছাত্রদের কাছে শিক্ষা উপস্থাপন করি। ২০১০ সালে যখন আমি তৃণমূলের প্রার্থী হয়, তখন আমি বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে পৌরসভায় ভাইস চেয়ারম্যান হয়। সেই সময় ২০১০ সালে আমাদের দলের পক্ষ থেকে যা ইস্তেহার প্রকাশ করা হয়েছিল তার ৯৯ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম রেলব্রিজ সংস্করণ, আমাদের কেষ্টদা এবং চন্দ্রনাথ সিংহ ওরফে চাঁদু দার সহায়তাই বোলপুর লালপুল রেলব্রিজ সম্প্রসারণের কাজ হয়েছে, এটা বোলপুরের মানুষের দাবি ছিল।
আমাদের পরবর্তী প্রকল্প পানীয় জলের ব্যাবস্থা এখন চালু হয়ে গিয়েছে কেষ্ট দার হাত ধরে। পরবর্তীকালে বোলপুরে প্রথম মাটির তলা দিয়ে ইলেকট্রিফিকেশনের কাজ হয়ে গেছে। এই যে বোলপুর বাইপাস, আমাদের কেষ্ট দা জেলা সভাপতি উন্নয়নের কারিগর, বীরভূম জেলার পাশাপাশি বোলপুরকেও সাজিয়ে তুলেছেন। মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ এবং বর্তমান চেয়ারপার্সন পর্ণা ঘোষের নেতৃত্বে বোলপুর ঝকঝক করছে। শুধু বোলপুর বাইপাস নয়, বোলপুর থেকে কংকালি মায়ের মন্দির যাওয়ার রাস্তা, রাস্তার ধারে লাইট সব কিছুই তাদের হাত ধরে। মনে হবে রাত্রি বেলাই আমি যেন নিউ টাউনে এসে গেছি। কংকালি মায়ের মন্দির কেষ্ট দা এবং চন্দ্রনাথ সিংহের হাত ধরে সংস্করণ হয়েছে। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন এসেছিলেন তখন মায়ের দর্শন করে কয়েক কোটি টাকা উন্নয়নের জন্য তিনি বরাদ্দ করে গেছেন। আমাদের উন্নয়নের কারিগর কেষ্ট দা দিদির কাছে যা আবদার করেন এবং তিনি সব সময় ন্যায্য আবদার করেন, দিদি টা সব সময় মেনে নেন। আমরা বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছি, যা আগামী দিনে আমাদের এলাকার ছেলে মেয়েদের বর্ধমান, কোলকাতা কল্যাণী, উত্তরবঙ্গ না গিয়ে এখানেই স্নাতকোত্তর হতে পারবে, এর ফলে আমাদের ঘরের ছেলেরা খুব উপকৃত হয়েছে। তাছাড়া বোলপুরের মানুষের দীর্ঘদিনের আবদার ছিল হাসপাতাল, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল করেছেন আমাদের নেত্রী, এবং সেখানে উদ্যোগ নিয়েছিলেন কেষ্ট দা এবং চন্দ্রনাথ সিংহ ওরফে চাদু দা। শুধু তাই নয় বোলপুরে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় এবং অনুব্রত মণ্ডলের উদ্যোগে আমরা পেয়েছি আগামী দিনে আমাদের আর বর্ধমান চিকিৎসার জন্য যেতে হবে না, আমরা এই মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ্য ভাবে দীর্ঘ আয়ু লাভ করতে পারবো। বর্তমান চেয়ারপার্সন পর্ণা ঘোষের উদ্যোগে ফুটপাত উচ্ছেদ এবং বোলপুর নেতাজী বাজার আমরা পেয়েছি। আজ মা ক্যান্টিন আমরা পেয়েছি, আমাদের ২টি হেলথ সেন্টার আমরা পেয়েছি আগামিদিনে আরও ৩টি হেলথ সেন্টার আমরা পেতে চলেছি।“
§ “ আপনি ১০ বছর বোলপুর পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন, তাছাড়া আপনি আর কি কি পদে ছিলেন?”
§ “২০১৪ সালে আমি প্রথম বীরভূম জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছিলাম, আমাদের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমার নাম পাঠিয়েছিলেন, আমি ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বীরভূম জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ছিলাম। ২০১৬ সালে দুবরাজপুর বিধানসভা থেকে ৪০ হাজার ভোটে প্রথম ডান পন্থী এমএলএ হয়ে বিধানসভায় গিয়েছিলাম, সেই সময় আমি যুব সভাপতি পদে ইস্তফা দিই। আবার ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের যুব সভাপতি নির্বাচিত হয়, বর্তমানে আমি বোলপুর শহরের সভাপতি।“
§ “ আগামী পৌরসভা নির্বাচনে আপনাদের দল জয়লাভ করবে বলে কতটা আশাবাদী, এবং জিতলে আর কি কি উন্নয়ন করবেন?”
§ “ তৃণমূল কংগ্রেস বোলপুর শহরে ২২শে ২২ হবে, কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের ডালা ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। আজ লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প আমার মতো সিডুল কাস্ট যারা আছেন প্রত্যেকে ১০০০ টাকা করে পাচ্ছেন, সাধারণ মানুষ ৫০০ টাকা করে পাই এটা কোনোদিন বামফ্রন্ট সরকার ভেবেছিল? কোনোদিন ভাবেনি, এতে মহিলারাই আমাদের জিতিয়ে দেবে। আজ প্রতিটি ওয়ার্ডে মেয়েরা জেভাবে এগিয়ে এসে ভোটে অংশগ্রহণ করছে, তাতে ২০০ শতাংশ গ্যারান্টি দিচ্ছি ২২শে ২২ আমরা জয়লাভ করব।“
§ ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে যারা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গেছেন আবার তৃণমূল জেতার পরে ফিরে এসেছেন তাদের উদ্দেশ্যে আপনি কি বলবেন?”
§ “ দেখুন আমি তৃণমূল কংগ্রেসের একজন সৈনিক, আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর আদর্শ নীতিতে আমি বিশ্বাসী। আমাদের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচীকে আমি মনে প্রাণে মেনে নি। আর আমার রাজনৈতিক গুরু কেষ্ট দা এবং মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ আমাকে যা নির্দেশ দেন আমি মনে করি আমাদের নেত্রী নিজে সেই নির্দেশ আমাকে দিচ্ছেন। আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে সব দিয়েছে, আজ কাস্ট সার্টিফিকেট খুব সহজ ভাবে আমরা পেয়ে যায়, আজ সমাজের বুকে পিছিয়ে পরা মানুষেরা মাথা তুলে বেচে থাকে, এখানে কোন অস্পৃশ্যতা নেয়, কোন জাতি প্রথা নেয়, আজ আমদের ছেলে মেয়েরা বিনা পয়সাই বই পাচ্ছে, খাবার পাচ্ছে, টেস্ট পেপার পাচ্ছে শুধু তাই নয় ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসের জন্য স্পেশাল কোচিং দিচ্ছে যা কোন রাজ্যে নেয়। তারপর ১০ লক্ষ টাকা লোণ দিচ্ছে পড়ার জন্য। আমি মনে করি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবার সাথে সাথে আমাদের মতো পিছিয়ে পরা মানুষদের কোথাও চিন্তা করেন, আমি আজীবন তৃণমূল কংগ্রেসে থাকবো, আরও একটা বিষয় আমদের দল ধর্ম নিরপেক্ষ দল। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন একজন মুখ্যমন্ত্রী তিনি যা রেখে যাবেন, আগামী ১০০ প্রজন্ম তাকে মনে রাখবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ সহজ সরল জীবন যাপন করা এবং সবাইকে বুকে টেনে নেওয়া, সকলের কথা শোনা, সকলের সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করা, অনার নীতিতে আমরা বিশ্বাস করি। সুতরাং কে গেলো কে এলো তাতে কিছু যায় আসে না, তবে যারা ভুল করে দল ছেড়ে গিয়েছিলো এবং পরে ফিরে এসেছে তাদের সাদর অভ্যর্থনা জানিয়ে দলে কাজ করছে।“
§ “ আপনি ১০ বছর ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন এরপরে যদি কোনোদিন সুযোগ আসে আপনি কি চেয়ারম্যান পদে বসতে চাইবেন?”
§ “ সেটি দল ঠিক করবে, সবার ওপরে দল। ব্যাক্তি বড় না আমাদের দল বড়। আমার সেই রকম কোন ইচ্ছে নেয়, আমাকে দল অনেক কিছু দিয়েছে, দুইবার ভাইস চেয়ারম্যান করেছে, কয়েকমাসের জন্য চেয়ারম্যান করেছে, বীরভূম জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি করেছে আমার মতো এক বাউরি ঘরের ছেলেকে বিধায়ক করেছে সুতরাং দল আমাকে অনেক দিয়েছে, চেয়ারম্যান পদ বড় নয়, বড় কথা মানুষের পাশে থাকা।“