“বিজেপিতে যোগ দেওয়াটা আমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল ছিল”- সুনীল সিং

banner

#Exclusive Candid Interview:

সর্বপ্রথম ছিলেন তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কর্মী, হঠাৎ করেই বিজেপিতে যোগদানে কেমন যেন শোকাহত হয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্যরা। সদ্য আসন্ন এই ২০২১ য়ের পৌরসভার নির্বাচনে ফের ফিরে এলেন নিজের প্রথমদলের কাছে অর্থাৎ তৃণমূলে। আজ প্রভাতী সংবাদের প্রতিনিধি আমি সায়ন্তিকা বিশ্বাস এবং ক্যামেরায় মলয় মাইতি চলে এলাম গারুলিয়া পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শ্রী সুনীল সিংয়ের কাছে -

◆● "নমস্কার দাদা, আপনার রাজনৈতিক জীবন শুরু কিভাবে হলো?"
◆●  " আমার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই। ১৯৯৫ সালে আমি যখন কংগ্রেস করতাম, সেই সময় পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন মাননীয় স্বর্গীয় শ্রী সৌমেন মিত্র। সেই সময় ওনার সাথে আমার একটা ঝামেলা হওয়ার কারণে উনি আমার বাবাকে নির্বাচনে দাঁড়ানোর  কোনো টিকিট দেন নি। তখন মমতা দিদির আশীর্বাদ নিয়ে আমি, আমার বাবা, এবং আমার দাদা তিনজনে নির্দল দলের হয়ে নির্বাচনে দাঁড়াই এবং জয়ী হয়ে গারুলিয়া পৌরসভা থেকে জিতলাম। সেই ১৯৯৫ থেকেই আমার যাত্রা শুরু হলো। আমি আস্তে আস্তে রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করে গেলাম। ২০০২ সালে গারুলিয়া পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে আমি প্রতিষ্ঠিত হই, ফের ২০০৯ সালে দিদির হাত ধরে আমি তৃণমূল কংগ্রেস দলে যোগদান করি। আস্তে আস্তে আমি গারুলিয়া পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে বার বার নিযুক্ত হতে থাকি। ২০১০ সালে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের যৌথ প্রয়াসে আমি গারুলিয়া পৌরসভাতে একটি বোর্ড গঠন করি। ২০১৫ সালে  গারুলিয়া পৌরসভার নির্বাচনে ২১ টা সিটের মধ্যে ১৭ টা সিট পেয়ে আমি ফের চেয়ারম্যান হই। ২০১৯ য়ে লোকসভা নির্বাচনের পর আমি বিজেপি দলের সাথে যুক্ত হই। সেটা আমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল ছিল। যুক্ত হওয়ার পরেও আমি কোনোদিনও এটা মেনে নিতে পারি নি যে আমি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে চলে এসেছি। বিজেপিতে সব সময় একটা হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায় নিয়ে ভেদাভেদ লেগেই থাকতো, সেটা এখনো আছে। তাও সব কিছু মেনে আমি আড়াই বছর সেখানে থাকি। এখন সহ্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়াতে ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ফিরে এসেছি।"

◆  "আপনার এই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করা এবং সদ্য এই আসন্ন পৌরসভার নির্বাচনের মুখেই আবার তৃণমূলে ফেরা নিয়ে গেরুয়া শিবিরে যে অশনি ঝড় উঠেছে সে বিষয়ে কি বলবেন?"
◆● "দেখুন, আমি যখন প্রথম তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়ে উঠেছিলাম তখন সেটা পুরোপুরি নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে করেছিলাম। আমার কোনোদিনও ভালো লাগতো না বিজেপিতে থাকতে কিন্তু কোনো ব্যক্তিগত কারণবশত হোক চাই সেটা আমার নিজের ভুল সিদ্ধান্তেই হোক, আমাকে তখন সেটা মানিয়ে নিতে হয়েছিল। আড়াই বছর নিজের ইচ্ছে দমিয়ে রাখার পর বুঝলাম আমি আর পারবো না। সাথে সাথেই ফের নিজের দলের কাছে নিজের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ফিরে এলাম। এখন আমি অনেক শান্তিতে আছি, ভালো আছি।"
◆● "আপনার এবং আপনার ছেলে সৌরভ সিংয়ের বিজেপি ত্যাগের কথা প্রকাশে আসতেই অর্জুন সিংহ আপনাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন 'আপনারা গদ্দারী করেছেন', এই বিষয়ে আপনার কি বক্তব্য আছে?"
◆● "অর্জুন সিং তো নিজেও একটা সময় তৃণমূলে ছিলেন, পরে তো উনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গেছেন, তাহলে তো বলতেই হয় যে উনিও গদ্দারী করেছেন। আমরা তো খারাপ দল ছেড়ে ভালো দলে যোগ হয়েছি, কিন্তু উনি তো ভালো দল ছেড়ে খারাপ দলে যোগ হয়েছেন।"
◆● "ইতিমধ্যেই চারটি পৌরসভার নির্বাচনের ফল প্রকাশ হয়ে গিয়েছে তাতে বিরোধী দল এখনো কোনো উন্নতি করতে পারেনি, গারুলিয়া পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?"
◆● "দেখুন, আমাদের তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের উন্নয়ন যেভাবে দিন দিন বাড়িয়েই চলেছেন তাতে বিরোধী দল জীবনেও কোনো উন্নতি করতে পারবে না। সবথেকে বড় কথা হলো বিজেপি তো দিন দিন যা অবন্নতি করছে, তাতে বোঝাই যাচ্ছে বাংলায় ওরা জীবনেও জায়গা করতে পারবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই এই রাজ্য একা চালিয়ে নিয়ে যাবেন।"
◆● "ধীরে ধীরে বিজেপির ঘর যে ভাবে ছন্নছাড়া হচ্ছে তাতে কি মনে হচ্ছে অর্জুন সিং কি ফের তৃণমূলে ফিরতে চলেছেন?"
◆● "এটা আমি কি করে বলবো বলুন। এটা তো পুরোপুরি ওনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু বারবার বলবো বিজেপি দিন দিন নিজেদের সব সম্পত্তি হারাচ্ছেন, ঘর ভাঙছে, এবার তো এই দল আর খুঁজে পাওয়া যাবে না, এমনিতেও খুঁজে পাওয়াও যায় না।"
◆● "বিরোধীদের উদ্দেশ্যে কি বলতে চাইবেন?"
◆● "কি আর বলবো। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, এবং পারলে মানুষের জন্য কাজ করুন, এতে মানুষের ভালোবাসা এবং আশীর্বাদ পাবেন।"

Journalist Name : Sayantika Biswas

Tags:

Related News