চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্গত সদর বা আলিপুর মহকুমার অধীন জয়নগর মজিলপুর একটি প্রসিদ্ধ স্থান। মহানগরী কোলকাতার প্রায় ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং জয়নগর থানা ও জয়নগর মিউনিসিপ্যালিটির মধ্যে অবস্থিত। এই মিউনিসিপ্যালিটি ১৮৬৯ সালে জয়নগর ও মজিলপুর নামে প্রসিদ্ধ দুটি গ্রাম নিয়ে গঠিত হয়েছে। জয়নগর মজিলপুর মিউনিসিপ্যালিটির টাউনে বর্তমানে দুটি বালিকা বিদ্যালয়, দুটি মধ্য ইংরাজী বিদ্যালয় ও তিনটি উচ্চ ইংরাজী বিদ্যালয় রয়েছে। এই জয়নগর মজিলপুর গ্রাম দুটির মধ্যে জয়নগর গ্রামটি বহু প্রাচীন। জয়নগরের পূর্ব দিকে মজিলপুর গ্রাম অবস্থিত, এই গ্রামটি জয়নগর অপেক্ষা বয়সে নবীন। প্রাচীন কালে এর অস্তিত্ব ছিল না, তখন এর উপর দিয়ে ভাগীরথী নদী প্রবাহিত হত। গ্রামটিতে বর্তমানে অনেক গুলি দেবদেবীর মন্দির দেখা যায় এবং রাস, জন্মাষ্টমী, রথও চড়ক প্রভৃতি হিন্দু পূজা পার্বনাদি উপলক্ষে অনেকগুলি ছোটো ছোটো মেলা হয়ে থাকে। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে যখন এই অঞ্চল দিয়ে আদি গঙ্গার প্রবাহ ছিল সেই সময়ে এখানে একটি শ্মশান ছিল। ন্যাতড়া থেকে স্বামী ভৈরবানন্দ নামক একজন সাধক ঐ স্থানটিকে সাধনার উপযুক্ত ভেবে এখানে সাধনায় রত হন। স্বামীজী ওই পুকুরে সন্ধান করে একটি কালো পাথরের কালীমূর্তি পান। অতঃপর শুরু হয় পূজার্চনা। ন্যাতড়া নিবাসী রাজেন্দ্র চক্রবর্তীকে তিনি এখানে নিয়ে আসেন ও পূজার্চনা শেখান। তার সবিনয়ে সন্তুষ্ট হয়ে আদ্যাশক্তি একটি বাতের ঔষধ দেন। তা পানের মধ্যে দিয়ে খেলে বাত থেকে মুক্ত হওয়া যায়। সেখান থেকে এই কালী বাড়িটি ধন্বন্তরী কালী বাড়ি নামে প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠে। প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমাতে এখানে বিশেষ পূজা হয়। হাজার হাজার মানুষ রোগ মুক্তির জন্য মায়ের পুকুরে স্নান করে খান ও পূজা দেন। মায়ের মন্দিরের পাশেই একটি শিব মন্দির স্মরণাতীতকাল থেকেই রয়েছে।
মন্দিরের সঙ্গে আরো একটি শিব লিঙ্গও পূজিত। পাশে একটি শনি দেবতার মন্দির ও বর্তমান। সম্প্রতি দালান মন্দিরটির উপরে একটি মঠ আকারে চুড়া তৈরী হয়েছে। প্রতি শনিবার হাজারো মানুষ এই মন্দিরে পুজা দেন। মায়ের আদ্যাশক্তির অনুকরণে একটি দারুমূর্তি পূজিত। ঐ মূর্তিকে বৈশাখ মাসে সন্ধ্যা বেলায় হাত, পা, অঙ্গ, বদলিয়ে চণ্ডী মতে ১৫টি দশ্যের মাহাত্ম্য পরিবেশিত হয়। পালিত হয় মহামেলা। বৈশাখ মাসে মেলাটি হয় বলে ইহা বেশের মেলা নামেও খ্যাত। কয়েকশো দোকান, দোলা, ম্যাজিক, চিড়িয়াখানা, খাবার ও মনিহারীর দোকানে অঞ্চলটি মুখরিত হয়ে ওঠে। দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ এসে ভিড় জমায় এই মহা মেলায়। বৈশাখ মাসের মাঝে মাঝে শুরু হয় এই মেলা।