এক সুনীল আকাশ

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

ই বয়সে টানা নব্বই মিনিট একই দমে দৌড়ে যাওয়ার ক্ষমতা সুনীল তার ফিটনেসের মাধ্যমে বজায় রেখে গেছে। কিন্তু সে আর কদ্দিন! তবে কর্মকর্তাদের মনে রাখতে হবে সারাজীবন ভারতের ফরোয়ার্ড লাইনে সুনীল থাকবে না। কাউকে না কাউকে কিন্তু  উঠতেই হবে। 
বহু বছর আগে মোহনবাগানে খেলতে আসা এক বাচ্চা ছেলে ভাবত, ১৫ জনের টিমে ঢুকতে পারবে কি না! ১৫ দিন খেলতে পারাটাই বড় ব্যাপার ছিল! একবার তার ১৫ বছর খেলার পূর্তি উপলক্ষ্যে এক সংবাদপত্রকে ফোনে বলে দেন, ‘১৫ বছর খেলব দেশের হয়ে, ভাবতেই পারিনি। নো চান্স।’
সবচেয়ে বড় বদল এসেছে সচেতনতায়। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ,’ বারবার ইন্টারভিউতে জানানো সাফ কথা তাঁর। সঙ্গে জুড়লেন, ‘টেকনিক, স্ট্র্যাটেজি, আধুনিকতা ও প্রচারেও বদল এসেছে। পরিকাঠামোর কথাই বলুন বা দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিভা খুঁজে আনা, সব কিছুতেই ১৫ বছরে আমরা অনেকটা এগিয়েছি।’ এখানেই আসল কথাটা বলে দিচ্ছেন সুনীল, ‘আমাদের আত্মতুষ্ট হলে হবে না। এখনও অনেক এগোতে হবে। এশিয়ার প্রথম দশ টিমের মধ্যে ঢুকতে গেলে আমাদের অনেক-অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে। এটাই আমাদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য।’
একটা সময় ভারতীয় ফুটবলের তারকা ছিলেন ভাইচুং। অনেকে তুলনা করতে শুরু করলেন ,  সবাই আমরা জানি ভাইচুং এর  সঙ্গে তুলনা হওয়াটা বাড়তি চাপ তো বটেই। কিন্তু তা দারুণ সামলালেন সুনীল। সুনীল নিজেই বলেন, সেই সময়ের জেসিটিতে ছিল ভারতীয় ফুটবলের সব বড় বড় নাম। তাদের মধ্যে গিয়ে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু গুটিয়ে না থেকে নিজেকেএ প্রমাণ করেছিলেন। জেসিটির জার্সিতে ৪৮ ম্যাচে ২১টি গোল রয়েছে তাঁর নামের পাশে। সেই ২০০৫ সালেই সুনীল ছেত্রীর সামনে খুলে যায় ভারতীয় সিনিয়র দলের দরজা। সেই যে চলার শুরু তা এখনও চলছে সাফল্যের সঙ্গে। কয়েক মাস আগেই মুম্বইয়ের মাটিতে ইন্টার কন্টিনেন্টাল কাপে করে ফেলেছেন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সেঞ্চুরি। গোলের সংখ্যা ৬৪। যা ছুয়ে ফেলেছে মেসিকে। সামনে শুধু ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। যদিও মেসি, রোনাল্ডোর সঙ্গে তাঁর তুলনাটা একদমই মেনে নিতে পারেননা সুনীল। তিনি বলেন, ‘‘মেসি-রোনাল্ডোর সঙ্গে আমার তুলনাটা ঠিক নয়। আমি ওদের ফ্যান। ওরা অনেক বড় ফুটবলার।’’

তবুও স্ট্যাটিসটিক্স যখন বলছে তখন তো মানতেই হবে। দেশের জার্সিতে চূড়ান্ত সফল সুনীল ছেত্রী। এখন খেলেন দেশের সব থেকে পেশাদার ক্লাব বেঙ্গালুরু এফসির হয়ে। আর আগে ইস্টবেঙ্গল, ডেম্পো, চিরাগ ইউনাইটেড, চার্চিল ব্রাদার্স, মুম্বই সিটি এফসির হয়ে খেলেছেন আইলি ও আইএসএল-এ। বিদেশের মাটিতেও ভারতীয় ফুটবলের ঝান্ডা উড়িয়ে এসেছেন যখন কানসাস সিটি স্পোর্টিং ক্লাব দি পর্তুগালে নাম লিখিয়েছিলেন। সুনীলের নামের পাশে রয়েছে পর পর তিনটি নেহরু কাপ জয়। ২০১১ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। ২০০৮ এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ জিতে ২৭ বছর পর এএফসি এশিয়ান কাপে যোগ্যতা অর্জন করা। সব কিছুর পিছনেই রয়েছে সুনীল ছেত্রীর ভূমিকা। আর সুনীলের জীবনে পরিবার ছাড়াও কি ভাবে জায়গা করে নিয়েছে কলকাতা তা তিনি নিজেই বলেন সোচ্চারে। বলেন, ‘‘কলকাতা আমাকে চিনিয়েছে। ওখানে প্রচুর ভালবাসা পেয়েছি যখন মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলে খেলেছি।’’ কলকাতা তাঁর মনে। তাই ব্যাক্তি জীবনেও জড়িয়ে গিয়েছে এই শহর।
দীর্ঘদিনের প্রেমিকা সোনম ভট্টাচার্যের সঙ্গে কিছু  বছর আগেই বিয়েটা সেরে ফেলেছেন। এখন তো সুনীলের সব সাফল্যে দেখা যায় সোনমকে। ঠিক যেভাবে মুম্বইয়ে ১০০তম ম্যাচের সময় সুনীলের পাশে থাকতে পৌঁছে গিয়েছিলেন সোনম। সে ভাবেই এখন সব সময় থাকেন পাশে।

Journalist Name : Avijit Das

Related News