বিশদে জানুন : সারোগেসি আসলে কী ?

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

' সারোগেসি ' এই শব্দটা আজকালকার দিনে খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু এটি আসলে কী?-সাধারণত একজন নারীর গর্ভে অন্য দম্পতির সন্তান ধারণের পদ্ধতিকে 'সারোগেসি' বলে। ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতিতে নারীদেহ হতে ডিম্বাণু ও পুরুষ দেহ হতে শুক্রাণু দেহের বাইরে টেস্টটিউবে নিষিক্ত করে তা সারোগেট নারীর গর্ভাশয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। সারোগেসি আসলে একটি সহায়ক প্রজনন-ভিত্তিক পদ্ধতি। যেখানে কাঙ্খিত বাবা-মা অন্য নারীর গর্ভ ভাড়া করেন। ওই গর্ভধারিণী মাকে বলা হয় সারোগেট। ওই নারীরাও অর্থের বিনিময়ে অন্যের শিশু গর্ভে ধারণ করেন। সারোগেসির অর্থ হলো অন্যের সন্তানকে নিজের গর্ভে ধারণ করা। গর্ভকালীন সময়ে ওই দম্পতি সারোগেট মায়ের গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যের সম্পূর্ণ যত্ন নেয় ও সব ধরনের খরচের দায়িত্ব নেয়। যে সব দম্পতি সহজে গর্ভধারণ করতে পারেন না কিংবা কেউ যদি সিঙ্গেল প্যারেন্টস হতে চান, তারাই সারোগেসি পদ্ধতি বেছে নেন সন্তানলাভে। ইনফার্টি‌লি, স্বাস্থ্য জনিত সমস্যা, সমলিঙ্গের অভিভাবক ও অন্যান্য সমস্যার কারণেই মূলত অন্যের গর্ভ ভাড়া নিয়ে সন্তান লাভ করা হয় এ পদ্ধতি। এ বিষয়টি সবারই জানা যে, সন্তান ধারণের জন্য নারী ও পুরুষের মধ্যে যৌনসম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। তবে যেসব নারীর সন্তান হয় না কিংবা একক বাবা-মা বা সমলিঙ্গের অভিভাবক যারা সন্তান জন্ম দিতে পারেন না তারাই সারোগেট মাকে ভাড়া করেন। 

সারোগেসির জন্য শুধু সারোগেট মাকে প্রয়োজন। প্রথমে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত করা হয়। এরপর যে দম্পতি সন্তানের মা-বাবা হতে চাচ্ছেন, ওই পুরুষের শুক্রাণু নিয়ে আইভিএফ কৌশলের মাধ্যমে সারোগেট নারীর গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়। আইভিএফ প্রযুক্তি সারোগেসির অন্যতম এক মাধ্যম। আইভিএফ হলো ‘ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন’। ডয়চে ভেলের এক স্বাস্থ্য প্রতিবেদনে ইশা ভাটিয়া স্যানন ব্যাখ্যা করেন, নিষিক্তকরণের অর্থ হলো পুরুষের শুক্রাণু ও নারী ডিম্বাণুর মিলন।
যেখান থেকে ভ্রূণ তৈরি হয়। ইন ভিট্রো অর্থ কাচের ভেতরে। এক্ষেত্রে বলা হয় টেস্টটিউব পদ্ধতি। এ কারণেই কৌশলটি টেস্টটিউব বেবি নামেও পরিচিত।
এ পদ্ধতির মাধ্যমে নারীর শরীরের ভেতরে যে প্রক্রিয়াটি ঘটে, সেটিই টেস্টটিউবের মাধ্যমে ল্যাবে করা হয়। পুরুষের শুক্রাণু গ্রহণের পর নারীর শরীর থেকে ডিম্বাণু বের করে একটি সূচের মাধ্যমে শুক্রাণুতে প্রবেশ করানো হয়। এরপর কাচের ভেতর ভ্রূণ প্রস্তুত করা হয়। এরপর একটি মেডিকেল টিউবের মাধ্যমে সারোগেট নারীর জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়। এই পুরো ব্যবস্থাটিই হলো সারোগেসি পদ্ধতি। এভাবেই নিঃসন্তান দম্পতি অন্যের গর্ভ ভাড়া নিয়ে সন্তানের জন্ম দেন।
সারোগেসিতে কী স্বাস্থ্যের ঝুঁকিও আছে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সারোগেসি খুব একটা সহজ পদ্ধতি নয়। এর ফলে একাধিক জটিলতা ও ঝুঁকি থাকে। প্রথমত, ভ্রূণের জীবনের প্রিইমপ্ল্যান্টেশন, প্রসবপূর্ব ও নবজাতক সময়কালে ব্যর্থতার সম্ভাবনা থাকে।
ডিম্বাশয় উদ্দীপনা, পরবর্তী আইভিএফ চক্র ও আইভিএফ ও জেনেটিক ল্যাবরেটরির মধ্যে ভ্রূণ, পেরিনেটাল ও নবজাতক সময়ের মধ্যে নিযুক্ত কৌশলগুলোর মতো একাধিক জটিল চিকিৎসা পদ্ধতি আছে। এক্ষেত্রে কষ্টের বিষয় হলো, সারোগেট মায়েরা যদিও অর্থের বিনিময়ে সন্তানের জন্ম দেন, তবুও তো তারা সন্তানকে গর্ভে ধরেন।
কখন সারোগেসি করা যায়-
১) যখন কোনো দম্পতি বারবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও সন্তান ধারণ করতে বা প্রেগনেন্সি টেস্টে পজিটিভ আসতে ব্যর্থ হন তখন তারা সারোগেসির সাহায্য নেয়।
২) যখন কোন মহিলার ঋতুস্রাব বা মাসিক সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায় তখন বিকল্প পদ্ধতি হিসাবে আইবিএ করতে তিনি ব্যর্থ হন তাহলে সারোগেসি পদ্ধতির মাধ্যমে সারোগেট মাদার এর সাহায্য নিয়ে সন্তান ধারণ করতে পারেন।
৩) যখন ইনফার্টিলিটি এক্সপার্ট ডক্টর চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে দেখেন যে কোন নারী তার সন্তান ধারণ বা গর্ভধারণ করতে অক্ষম হন এবং বারবার আইভিএফ চিকিৎসার মাধ্যমে সন্তান ধারণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন তখন সারোগেট মাদার এর মাধ্যমে সারোগেসি করতে বলেন।
৪) যখন কোনো নারীর জরায়ুতে বিশেষ সমস্যা দেখা দেয় টিউমারের জন্য বা অন্য কোন ওভারি সিস্ট এর জন্য জরায়ু বাদ দিতে হয় জরায়ু সন্তান ধারনে যদি অক্ষম হয় তখন সারোগেসি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।

৫ ) যখন কোনো নারী গর্ভধারণকালীন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সম্মুখীন হতে অপ্রস্তুত এবং গর্ভধারণ কালীন বিভিন্ন কষ্ট ও যন্ত্রণা নিতে আগ্রহী হন না তখন সারোগেট মাদার এর মাধ্যমে এবং সারোগেসি পদ্ধতি অবলম্বন করে মা হওয়ার চেষ্টা করেন।
উপরোক্ত কারণগুলোর যেকোনো একটি হলে বা কোন বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন হলে দম্পতিরা বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ গাইনী বিশেষজ্ঞ আইভিএফ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হয় সারোগেসি পদ্ধতিতে পিতা-মাতা হওয়ার সুযোগ নিতে পারেন।
আইভিএফ বা টেস্টটিউব বেবির ক্ষেত্রে ভারতের খরচ আনুমানিক ৬০হাজার থেকে ২লক্ষ টাকা। এছাড়াও সারোগেসি পদ্ধতিতে সারোগেট মাদারকে যদি আর্থিক অনুদান বা সাহায্যের জন্য কিছু দিতে হয় সেটি অনেক ক্ষেত্রে ভারতীয় টাকায় এক লক্ষ থেকে কুড়ি লক্ষ কাছাকাছি খরচ হয়। যদিও সারোগেসি পদ্ধতির খরচ আইভিএফ পদ্ধতি খরচ সমকক্ষ কিন্তু সারোগেসি পদ্ধতিতে গর্ভ ভাড়া নেওয়া হয় তাই সারোগেট মাদার ভরণপোষণ ও তার যত্ন পৌষ্টিক আহারের ব্যবস্থা করা ও তা গর্ভধারণ কালীন যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ব্যবস্থা করার জন্য খরচের পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। 

Journalist Name : Debopriya Banerjee

Related News