বাঙালীর পহেলা বৈশাখ

banner

#pravati sangbad Digital desk :

বাংলা মাস শুরুর ইতিহাস আপামর জনসাধারণ তথা কৃষকদের জন্য সুখকর কিছু ছিল না। সম্রাট আকবর ফসলী খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য চান্দ্র মাসকে পরিবর্তন করে সৌর বৎসর চালু করে। এইভাবে সৌর বৎসরের নাম হয় ফসলি সন। সেই ফসলি সন পরবর্তিতে বাংলা সন নামে প্রচলিত হয়। বাংলা সনের সাথে মূলত সুদখোর মহাজন ও ব্যবসায়ীদেরই লাভ জড়িত ছিল। কালপরিক্রমায় রাজা-প্রজা আর মহাজনীয় ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটেছে। এখন আর খাজনা নামক অন্যায় ব্যবস্থার চালু নেই। পয়লা বৈশাখের আদি আচারও ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়েছে। সবার কামনা থাকে যেন নতুন বছরটি সমৃদ্ধ ও সুখময় হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা একে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ্য হিসেবে বরণ করে নেয়। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৪ই এপ্রিল অথবা ১৫ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হয়। আধুনিক বা প্রাচীন যে কোন পঞ্জিকাতেই এই বিষয়ে মিল রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়। বাংলা একাডেমী কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক পঞ্জিকা অনুসারে এই দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এদিন বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭সালে। প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্ত্তণ ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ কর্মকান্ডের উল্লেখ পাওযা যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৭ সনের আগে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ পালনের রীতি তেমন একটা জনপ্রিয় হয় নি।

কোন কোন ঐতিহাসিকদের মতে ৭ম শতাব্দীতে গৌড় বঙ্গের প্রথম সার্বভৌম রাজা শশাঙ্ক বঙ্গাব্দ চালু করেছিলেন। আর এখান থেকেই বাংলা বর্ষপঞ্জির সূচনা হয়। আবার কারো কারো মতে মোগল সম্রাট আকবরের হিজরি সাল হিসাবে ভারতবর্ষে ফসলের কর আদায়ের অসুবিধে হত, আসলে হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে মিলত না এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করতে হত। তাই তিনি খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে রাজকীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম চালু করেন। চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সব বকেয়া পরিশোধ করা এবং পরবর্তী দিন পয়লা বৈশাখে ভূমির মালিক ও ব্যবসায়ীরা তাঁদের প্রজা ও পণ্য ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করিয়ে নতুন বছরে দেনাদার ও পাওনাদারের মধ্যে বিশ্বাস, আস্থা ও গভীর সম্পর্কের প্রকাশের নববর্ষ উদযাপনে আনুষ্ঠানিকতার নাম ঐতিহ্যের হালখাতা উৎসব। পয়লা বৈশাখে নবাব ও জমিদারেরা ‘পুণ্যাহ’ উৎসব পালন করতেন নবাবি আমলে খাজনা আদায় ও হিসাব নিকাশের পাশাপাশি চলত মেলা, গান বাজনা ও হালখাতা অনুষ্ঠান।

Journalist Name : Aankhi Banerjee

Related News