"বেলাশেষ" এর চেয়ে "বেলাশুরু" তে সৌমিত্র-স্বাতীলেখার গাঁয়ে কাটা দেওয়ার মতো অভিনয়

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

"বেলাশেষ" এর মুক্তির ঠিক ৭ বছর পর মুক্তি পেল শিবপ্রসাদ এবং নন্দিতা রায়ের পরিচালিত সিনেমা "বেলাশুরু"। এই ছবিতেই শেষবারের মতন দেখা গেল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত অভিনয়। প্রথম থেকেই এই ছবি নিয়ে নস্টালজিক ছিলেন দর্শকেরা, সেই আবেগের প্রভাব পড়ল ছবির প্রথমদিনের বক্স অফিস কালেকশনে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও স্বাতীলেখা সেনগুপ্তর এই ছবি দেখতে হলে ভিড় জমাচ্ছে বাঙালি দর্শক। পরিচালক-দ্বয়  শিবপ্রসাদ-নন্দিতা আবারও ভালবাসার নয়া সমীকরণ বুনলেন সৌমিত্র-স্বাতীলেখার 'বেলাশুরু'র হাত ধরে। সিনেমার জটিল ব্যকরণের ধাঁধায় না গিয়ে সহজ-সরল ন্যারেটিভেই বারবার বাজিমাত করেছেন তাঁরা। অতিনাটকীয়তা, কাকতালীয় বিষয়, যুক্তিবুদ্ধির মারপ্যাঁচ বর্জিত আবেগঘন দৃশ্যায়ণে দর্শককে ভুলিয়ে রাখতে শিবু-নন্দিতার কলম-ক্যামেরা বরাবারই সাবলীল। 'বেলাশুরু'র ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হল না। আধুনিক সমাজে সম্পর্কের সমীকরণে যেখানে মনের থেকে শরীরী টানের পাল্লা ভারী, সেখানে দাঁড়িয়ে সিনেমার চরিত্র মিলির মুখ থেকে পরিচালকজুটি বলিয়ে নিলেন- 'একটা সময় পরে শরীর থাকে না, আকর্ষণ থাকে না। যেটা থেকে যায় বন্ধুত্ব.।' যে বন্ধুত্বে ভর করে হাতে হাত রেখে কাটিয়ে দেওয়া যায় গোটা জীবন।
এ যুগে এসে রবীন্দ্রনাথের বৈপ্লবিক প্রেমকে শিবপ্রসাদ-নন্দিতা গড়লেন মধ্যবিত্ত প্রবীণ দম্পতির সুখ-দুঃখের আদুরে সোহাগে। যার প্রথম পর্ব আমরা দেখেছিলাম 'বেলাশেষে'তে। আর দ্বিতীয় পর্ব 'বেলাশুরু'। কিন্তু দুটি ছবি দুটির ওপর নির্ভরশীল নয়। 'বেলাশুরু' নতুন দর্শকদেরও ভাল লাগবে যারা 'বেলাশেষে' দেখেননি। আর যারা 'বেলাশেষে' দেখেছেন তাঁদের আরও পরিণত সুরে মন ছুঁয়ে যাবে 'বেলাশুরু'। 'বেলাশুরু' (Belasuru) ছবির গল্প সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি। ঘোরতর অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত স্ত্রী গীতা নন্দীর স্মৃতি ফেরাতে ফের তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন পবিত্র চিত্ত নন্দী। তখন বরের বয়স আশি-অতিক্রান্ত, কনের বয়সও সাতের ঘরে। কারণ গীতা দেবীর মনের সিন্দুকে একমাত্র বিয়ের ঘটনাগুলিই অক্ষত রয়ে গিয়েছিল। স্মৃতিভ্রংশতায় সব ভুলে গেলেও বিয়ের আলো ও আনন্দ ভোলেননি গীতা। এরকমই এক সত্যি ঘটনা নিয়ে 'বেলাশুরু' ছবি তৈরি করলেন শিবপ্রসাদ-নন্দিতা পরিচালকদ্বয়। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের যুগলবন্দী দৃশ্যটি মন ছুঁয়ে যাবেই।

'বেলাশেষে'র পরেও 'বেলাশুরুর গান থাকে। মেজো জামাইয়ের চরিত্রে সুজয়প্রসাদ যেটুকু সুযোগ পেয়েছেন ভালই করেছেন। তাঁর নিরুচ্চারিত কথা যেন ঋতুপর্ণা বলে দিয়েছেন। খরাজ মুখোপাধ্যায় আর অপরাজিতা আঢ্য এই ছবিতে জমিয়ে দিয়েছেন আগের ছবির মতোই। বিশেষ করে শাশুড়ি যখন বারবার বড় জামাইকে মেথর, চাকর, মাছওলা ভাবতে থাকেন তখন সেসব দৃশ্য দুর্দান্ত মজার এত বিষাদের সুরের মাঝেও। খরাজ এ ছবির কমেডি রিলিফ। তবে 'বেলাশেষে'র স্টাইলে চাকরের সঙ্গে তিন জামাইয়ের মদ খাওয়ার রগড় এবার অত জমল না। যদিও জয় গোস্বামীর বহুল ব্যবহৃত কবিতা রোমান্টিক দৃশ্যে ক্লিশে লেগেছে। সঙ্গীতে অনুপম রায়ের সঙ্গীত পরিচালনায় সেরা লাগল কবীর সুমন ও শ্রেয়া ঘোষালের গান। ছবি জোড়া বিষাদ সুরকে এক লহমায় আনন্দে ভরেছে ইমন-খ্যাঁদার 'টাপা টিনি'।ঋতুপর্ণা-মনামী-অপরাজিতা-ইন্দ্রাণী নাচের তালে বেশ রঙিন।গোটা সিনেমাটা দেখতে দেখতে মনে হয় এই বুঝি আরতির স্মৃতি ফিরে এল একেবারে ক্লাইম্যাক্স অবধি অপেক্ষা করিয়ে রাখেন পরিচালকজুটি। বিয়ের প্রস্তুতি, ছাদনাতলা সাজানো, জল সইতে যাওয়া, সোহাগ কুড়নোর পর শুভদৃষ্টির সময় একবার হলেও মনে হয় আরতি বুঝি এবার স্বামীর চোখের দিকে তাকিয়ে চিনতে পারবেন! কিন্তু তেমনটা ঘটেনি। আর এখানেই পরিচালকজুটি শিবু-নন্দিতার স্বার্থকতা। নাটকীয় মোড় ঘুরেও কোনও অতিকথন জোড়েননি শেষে।বর্তমান সমাজে যৌথ পরিবার যেখানে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে, নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি কনসেপ্টেই বিশ্বাসী সিংহভাগ মানুষ। আসলে আজকালকার ব্যস্তজীবনে রাখার বিষয়টাই তো উবে গিয়েছে।
পর্দায় বাবাকে দেখে আবেগান্বিত পৌলমী। তিনি বলেন,'ছবির প্রত্যেক কলাকুশলী ভীষণ ভালো অভিনয় করেছে, এমনকী ছোট বাচ্চাগুলোও খুব ভালো। এটা আমার কাছে একটা কমপ্লিট সিনেমা মনে হয়েছে। এই ছবিটা আমার কাছে অবশ্যই আবেগের। এতোদিন পরে মনে হচ্ছে বাবাকে দেখতে পাচ্ছি, বাবাকে ছুঁতে পারছি। আমার বাবাকে আমি যেভাবে চিনি সেভাবেই এই ছবিতে দেখলাম। অসম্ভব ভালো লেগেছে। স্বাতী কাকিমার অভিনয় অতুলনীয়। ভাবা যায় না। সিনগুলো দেখতে দেখতে গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল।' আবার ছবির প্রসঙ্গে কথা বলতে আবেগঘন হয়ে পড়েন স্বাতীলেখা কন্যা সোহিনী। বলেন, 'এমন মানুষ ফিরে আসবে না।'

Journalist Name : SRIJITA MALLICK

Related News