দীর্ঘ দেড় বছরেরও বেশি সময় স্কুল বন্ধ থাকার পরে ১৬ই নভেম্বর ২০২১ পুনরায় নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য খুলেছে স্কুলের তালা। শুধু নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেনি নয়, ধাপে ধাপে সমস্ত স্তরের পঠনপাঠন করোনা পূর্ববর্তী সময়ের মতো সুস্থ এবং স্বাভাবিক করা হবে বলে আশ্বাস দেন শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। যদিও স্কুল খোলা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ এবং ভয় সৃষ্টি হয়, জনস্বার্থ মামলা গড়াই হাই কোর্ট পর্যন্ত, কিন্তু কোর্ট এই মামলাই কোন রকম হস্তক্ষেপ করেনি। অনেক স্কুল কতৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় তাদের পঠনপাঠন অনলাইন এবং অফলাইন দুই ভাবেই হবে, কিন্তু অনেক স্কুল সর্বস্তরের পড়ুয়াদের কথা মাথাই রেখে তাদের শিক্ষা ব্যাবস্থা পুরোপুরি অফলাইন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এত সমস্যা সত্বেও ১৬ই নভেম্বর স্কুলে পঠনপাঠন শুরু হয়।
স্কুল খোলার বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় নবম এবং একাদশ শ্রেণির ক্লাস হবে সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ৩ টে পর্যন্ত এবং দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস হবে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪ টে পর্যন্ত, কিন্তু পড়ুয়াদের জন্য কোন রকম মিডডে মিলের ব্যাবস্থা থাকবে না। প্রথম সপ্তাহ স্বাভাবিক নিয়মে পঠনপাঠন হলেও সোমবার অর্থাৎ ২২এ নভেম্বর এক বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়। ২১এ নভেম্বর অর্থাৎ রবিবার রাতে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তি বের করা হয়, যাতে সরাসরি বলা হয় দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের সোম, বুধ এবং শুক্র এই তিন দিন স্কুলে হাজির থাকতে হবে, নবম এবং একাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা ক্লাস করবে সপ্তাহে দুই দিন অর্থাৎ মঙ্গল এবং বৃহস্পতিবার, শনিবার স্কুল বন্ধ থাকবে। সকাল ১০.৫০ থেকে বিকাল ৪.৩০ পর্যন্ত ক্লাস হবে।
এই দিন সকালে স্কুলে উপস্থিত হয়েই পড়ুয়ারা এই নতুন বিজ্ঞপ্তির কথা জানতে পারে, এই নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। যদিও বেশির ভাগ স্কুল কতৃপক্ষের দাবি, যেহেতু পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ রবিবার রাতে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তাই স্কুলের পক্ষ থেকে যথা সময়ে পড়ুয়াদের এই বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে অবগত করা সম্ভব হয়নি। এই সবকিছু ছাড়াও একটি কারণে শিক্ষক পড়ুয়া থেকে শুরু করে অভিভাবকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ লক্ষণীয়, তা হল এই অল্প সময়ে তাও আবার সপ্তাহে দুই কিংবা তিন দিন করে স্কুল গিয়ে কীভাবে সিলেবাস সম্পূর্ণ করা সম্ভব। ইতি মধ্যেই মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করা হয়েছে।
কিছু কিছু অভিভাবকদের মতে, “২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে সিলেবাসে কিছু কাটছাট করা হয়েছে তবুও, অনেক পড়ুয়া পরিকাঠামোর অভাবে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতেই পারেনি, অনেকের প্রাইভেট টিউটার নেবার সামর্থ্য নেই তারা পর্ষদের এই বিজ্ঞপ্তিতে আরও অসহায় হয়ে পরবে।“
যদিও এইদিন বেশিরভাগ স্কুলই তাদের পড়ুয়াদের নিরাশ করেনি, তারা যথারীতি আগের নিয়মে ক্লাস করে বাড়ি ফিরেছে। কারণ পড়ুয়াদের অনেকেই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্কুলে আসে, তাদের বাড়ি ফিরে যাবার সমস্যার কথা বিবেচনা করেই তাদের স্কুলে প্রবেশে অনুমতি দেওয়া হয়। পড়ুয়াদের অনেকের মতে, সপ্তাহে দুই বা তিনদিন ৫-৬ ঘণ্টা ক্লাস করানোর থেকে রোজ ৩ ঘণ্টা করে ক্লাস করালে হয়ত সিলেবাস শেষ করা যেত। এছাড়া বিভিন্ন প্র্যাক্টিকাল নির্ভর বিষয় যেমন- ভূগোল, কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন, কেমিস্ট্রি, ফিজিক্স ইত্যাদি বিষয়ের নিয়ে যে সব ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করে তারা এমনিতেই অনেক পিছিয়ে আছে দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে। তারা ভেবেছিল স্কুল খুললে তাদের শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাদের প্র্যাক্টিকাল ক্লাস নিয়ে তাদের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে দেবেন, কিন্তু সপ্তাহে দুই-তিন দিন ক্লাস হলে তাদের পক্ষে প্র্যাক্টিকাল শেষ করা সম্ভব নয়।