বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেউচা পাঁচামি কয়লা খনি: বাংলার শিল্পায়নের উজ্জ্বল সম্ভবনা

banner

#বীরভূম:

খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হতে চলেছে দেউচা-পাঁচামি কয়লাখনির। কাজ শুরু হবে, খাস জমি থেকেই। এই নিয়ে আদিবাসীদের সঙ্গে বৈঠক সেরে ফেলেছেন বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায়। আদিবাসীদের সঙ্গে বৈঠকের পর এমনটাই জানালেন বীরভূমের জেলাশাসক।  যাঁরা খাস জমিতে রয়েছেন তাঁরাও পাবেন পুনর্বাসন। সরকারের নির্ধারিত প্যাকেজ হাতে তুলে দিয়ে এভাবেই আশ্বস্ত করল প্রশাসন।

বীরভূমের দেউচা পাঁচামি কয়লা খনি বা দেউচা পাঁচামি কয়লা ব্লক হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার মহম্মদ বাজার সমষ্ঠি উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত দেউচা পাঁচামি এলাকায় অবস্থিত একটি কয়লা খনি। এই খনি ২৩°৫৯'২৬"উত্তর ৮৭°৩১'২৭"পূর্ব স্থানাঙ্ক রেখায় অবস্থান করছে। এই কয়লা খনি বা ব্লকটি বীরভূম কয়লা খনি অঞ্চলের অন্তর্গত। দেউচায় প্রায় ২১০ কোটি ২০ লাখ টন কয়লা মজুত রয়েছে। দেউচা-পাঁচামি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হলে এটাই ভারতের এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা খনি হবে। এটি পশ্চিমবঙ্গের নবীনতম কয়লা খনি। ইতিমধ্যে সাড়ে তিন হাজার একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে খাস জমি রয়েছে এক হাজার একর জমি। সেই খাস জমির কোথাও বনভূমি হিসাবে চিহ্নিত, আবার কোথাও ভূমিহীন আদিবাসীরা বসবাস করছেন কয়েক দশক ধরে। ফলে এই জায়গায় কয়লা খনি হলে তাঁরা বাস্তুচ্যুত ও জীবিকা হারানোর ভয়ে আশঙ্কিত। তাঁদের আশ্বস্ত করতে এবং সরকারের প্যাকেজ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে এদিন আদিবাসী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলাশাসক সহ প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। তাঁদের হাতে সরকারের ঘোষিত আট পাতার প্যাকেজের প্রস্তাবটি তুলে দেওয়া হয়। ওই প্যাকেজ নিয়ে গ্রামে আলোচনার জন্য সময়ও দেওয়া হয়েছে।

এই কয়লা খনি থেকে নিকটতম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন হল সাঁইথিয়া জংশন রেলওয়ে স্টেশন।এবং পানগড়-মোরগ্রাম হাইওয়ে এই কয়লা খনি বা ব্লক দিয়ে গিয়েছে। যার ফলে এইখানের পরিবহন ব্যবস্থা খুব সচ্ছল।যে কারণে কয়লা আমদানী- রপ্তানি করতে সুবিধা হয়।


কয়লাখনি থেকে কয়লা তোলার কাজ শুরু হলে কমপক্ষে ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। প্রায় এক লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে এই কাজে। এই খনি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হলে এনটিপিসি-কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা দেওয়া সম্ভব হবে।

বীরভূমে ডেউচা পাঁচামি কয়লা ব্লকের তৈরি হয়ে যাওয়ার এক লাখ কর্মসংস্থান হবে। এমনই দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে জানালেন, সেই প্রকল্পের ফলে আগামী ১০০ বছর রাজ্যে বিদ্যুতের কোনও অভাব হবে না।

বোলপুরে প্রশাসনিক সভায় ডেউচা পাঁচামিতে প্রস্তাবিত কয়লা খনি ব্লকের জমির প্রসঙ্গে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। মহম্মদবাজারের যে প্রস্তাবিত খনি এলাকায় ইতিমধ্যে সমীক্ষা চালানো হয়েছে। যে রিপোর্ট সমীক্ষার রিপোর্টও মমতাকে পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সেই সমীক্ষা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন স্থানীয়রা। সেই ভুল বোঝাবুঝি এখনও পুরোপুরি কাটেনি। তবে অসন্তোষের বিষয়ে জানতে পেরেই প্রশাসনের তরফ বাড়তি তৎপরতা নেওয়া হয়েছে। একাধিক বৈঠক করেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা। বীরভূমের জেলাশাসক বিজয় ভারতী আশ্বাস দেন যে জোর করে একচুলও জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। সরকার কারও জমি কেড়ে নেবে না বলেও জেলা প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

বোলপুরের প্রশাসনিক সভায় একই কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, ডেউচা পাঁচামিতে প্রস্তাবিত কয়লা খনি এলাকায় কারও জমি হাতছাড়া হবে না। তাছাড়া আপাতত ফাঁকা জমিতে কাজ শুরু করা যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভবিষ্যতে পরবর্তী পর্যায়ের কাজের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হতে পারে। তবে তাতে বলপ্রয়োগ করা হবে।কেউ ধান খেত, বাড়ি-জমি থেকে বঞ্চিত হবেন নাবলে আশ্বাস দেন মমতা। বলেন, 'কথা না বলে কিচ্ছু করব না। এখন যেখানে খালি আছে, সেখানে কাজ হচ্ছে।'


একইসঙ্গে মমতা দাবি করেন, ডেউচা পাঁচামি কয়লা ব্লক কাজ শেষ হলে এক লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হবে। সেখানে স্থানীয়দের চাকরির বন্দোবস্ত করা হবে। শুধু তাই নয়, সেই প্রস্তাবিত কয়লা খনির কাজ শেষ হলে বাংলার বিদ্যুতের অভাব থাকবে না বলে দাবি করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘এই প্রোগামটা হয়ে গেলে ১০০ বছর বাংলায় বিদ্যুতের কোনও অভাব হবে না। মানে আমরা ১০০ বছরের জন্য বাংলার ছেলেমেয়েদের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করে দিয়ে যাচ্ছি। ১০০ বছর বিদ্যুতের কোনও অভাব হবে না। বিদ্যুৎ সস্তা হবে। এটা পশ্চিমবঙ্গের জন্য একটা সোনার খনি।

Journalist Name : SANGITA RANA

Related News