Flash news
    No Flash News Today..!!
Sunday, May 12, 2024

মা- বাবার স্মল ফিনিক্স থেকে মার্শাল আর্টের ব্রুস লী, জন্মদিনে ফিরে দেখা এই কিংবদন্তির জীবন

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

সানফ্রান্সিসকোর চায়নাটাউনে আজকের দিনে ১৯৪০ সালে এমন একজন মানুষের জন্ম হয়েছিলো যিনি পশ্চিমা বিশ্বে চীনা সংষ্কৃতির ধারণা বদলে দিয়েছিলেন। জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন সনাতন মার্শাল আর্টের চর্চা।

তিনি ব্রুস লী। পুরো নাম ব্রুস ইয়ুন ফান লি । জন্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে হলেও আদপে ছিলেন চিনা। যদিও শৈশব থেকে শুরু করে জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে হংকংয়ে। ছোটবেলা থেকেই তিনি সিনেমা ও টিভিতে শিশু শিল্পী হিসেবে কাজ করেন। বারো বছর বয়সে এক দিন রাস্তার কিছু বখাটে ছেলে শত্রুতাবশত তাঁকে মারধর করে। আর এ ঘটনাটাই আমুলে পাল্টে দেয় তাঁর জীবন, সেই সঙ্গে মার্শাল আর্ট আর বিশ্ব চলচ্চিত্রের ভবিষ্যতও।


আঠারো বছর হওয়ার আগেই তিনি বিশটির মতো ছবিতে অভিনয় করে ফেলেন। শিশু চরিত্রে তার প্রথম পর্দায় আসা, গোল্ডেন গেইট গার্ল ছবিতে।

১৯ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের চায়নাটাউনে এক আত্মীয়ের রেস্টুরেন্টে কাজ শুরু করেন। পরে ওয়াশিংটনের সিয়াটলে এসে দর্শনশাস্ত্র পড়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সাথে চালিয়ে যেতে থাকেন মার্শাল আর্টের অধ্যয়ন। মার্শাল আর্টে প্রাতিষ্ঠানিক তালিম নিয়েছিলেন মাত্র পাঁচ বছর। পরে এই শিল্পে যোগ করেন নিজস্ব ধাঁচের কুংফু কৌশল। মার্শাল আর্টের সঙ্গে আরও অনেক শারীরিক কলা জুড়ে  তৈরি করেন নতুন আর্ট ‘জিৎ কুনে দো’।


শিশু চরিত্রে অভিনয় করলেও মার্শাল আর্টে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি রুপালী পর্দা থেকে দূরে চলে গিয়েছিলেন। ১৯৬৬ সালে প্রযোজক উইলিয়াম ডজিয়েরের হাত ধরে আবার এবিসি টেলিভিশন সিরিজ দ্যা গ্রিন হর্নেটে তাকে দেখা যায় কেটো চরিত্রে। তার পরের বছরেই এই সিরিজটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বহু ছবিতে ও টেলিভিশনে বিভিন্ন সহকারী বা পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেছেন। একই সাথে তিনি মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও চালিয়ে গেছেন। আমেরিকায় তার দুটি মার্শাল আর্টের স্কুল ছিল। কয়েকটি ছবির কোরিওগ্রাফ্রার হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। ব্রুস লি নামকরা একজন চা-চা ড্যান্সার ছিলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি হংকং চা-চা ড্যান্স চ্যাম্পিয়নশিপে বিজয়ী হন।

১৯৭১ সালে তিনি আবার হংকং-এ চলে যান। তার গ্রিন হর্নেট ছবির জন্যে ততোদিনে তিনি হংকং-এর এক পরিচিত নাম হয়ে উঠেছিলেন। হংকং-এ তিনি প্রথম প্রধান একটি চরিত্রে অভিনয় করেন দ্য বিগ বস ছবিতে। এই ছবিটি বক্স অফিসে বড় রকমের সাফল্য পায় সাথে লী কে এনে দেয় খ্যাতি। 


১৯৭২ সালে ব্রুস লী অভিনয় করেন ফিস্ট অফ ফিউরি ছবিতে। দ্য বিগ বস এর রেকর্ড ভেঙে দেয় এই ছবিটি। তার তৃতীয় সিনেমা- ওয়ে অফ দ্যা ড্রাগনে, কাহিনীকার, পরিচালক, প্রধান তারকা এবং কোরিওগ্রাফার ছিলেন তিনি নিজেই। ব্রুস লীর ছবির সাফল্য তাকে জনপ্রিয় করে আর মার্শাল আর্ট ও ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে সারা বিশ্বে। প্রাচ্যের দেশগুলোতেও মার্শাল আর্টের নতুন এক স্টাইলের সূচনা ঘটে যা পরিচিত হয়ে উঠে কুং-ফু হিসেবে।

এরপর তার চার নম্বর ছবিটি মুক্তি পায়। নাম- এন্টার দ্য ড্রাগন। পঞ্চম চলচিত্রটি নির্মানের কাজ যখন চলছিলো তখনই হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। মস্তিস্কে এক ধরনের সমস্যা ধরা পড়ে যা চিকিৎসা শাস্ত্রে পরিচিত সেরেব্রাল এডেমো হিসেবে।


দিনটা ছিলো ১৯৭৩ সালের ২০শে জুলাই। হংকং এ কাউলুন টং-এর একটি বাড়িতে  তিনি মাথাব্যাথার ওষুধ খেয়ে শুয়েছিলেন, আর ওঠেননি। মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিলো মাত্র ৩২ বছর। ব্রুস লীর মৃত্যু নাড়া দিয়েছিলো হংকং থেকে হলিউডকেও। তার মরদেহ বহনকারী কফিন দেখার জন্যে রাস্তায় নেমে এসেছিল শোকাহত হাজার হাজার অনুগামী। তাদের নায়ককে বিদায় জানাতে হংকং-এর রাস্তায় সেদিন লাইন ধরে নেমে এসেছিলেন ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ। শোকাহত ভক্তদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশের ব্যারিকেড বসাতে হয়েছিলো। তার মরদেহ রাখা হয়েছিলো খোলা একটি শবাধারে, যাতে লোকজন তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তাকে একবার হলেও শেষবারের মতো দেখতে পারেন এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারেন। তারপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে, তার নিজের বাড়িতে। সেখানেও জড়ো হয়েছিলো হলিউড এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী স্থানীয় চীনা ভক্তরা। 

ব্রুস লী তাদের একজন যিনি পশ্চিমা ও প্রাচ্যের সংস্কৃতির মধ্যে বৈষম্য দূর করে কিছুটা মিলন ঘটাতে পেরেছিলেন। তরুণ সমাজ তাঁকে দেখে মার্শাল আর্টের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তাঁর মৃত্যু রহস্য আজও অমীমাংসিত। কেউ বলে ড্রাগ ওভারডোজ, কেউ বলে বিষ খাওয়ানো হয়েছিল। টাইম ম্যাগাজিন বিংশ শতাব্দীতে সবচেয়ে প্রভাবশালী যে একশোজনের নামের তালিকা তৈরি করেছিলো তাতে স্থান লাভ করেছিল ব্রুস লীর নামও। লস অ্যাঞ্জেলেসের চায়নাটাউনে তার একটি ভাস্কর্যও স্থাপিত আছে। তবে এতো ব্ছর পর ব্রুস লীর প্রভাব আজও টিকে থাকার পেছনে  আছে কিছু ধারণা। হয়তো ব্রুস লী হচ্ছেন এমন একজন ব্যক্তি যার মতো হওয়ার ইচ্ছা রাখে এখনকারও তরুণ সমাজ। মা - বাবা তাকে আদর করে ডাকতেন স্মল ফিনিক্স বলে। মৃত্যুর পরেও সেই ফিনিক্স এখনও বেঁচে আছেন বিশ্ববাসীর অন্তরে।

Journalist Name : Satarupa Karmakar

Related News