র্যাগিং হল একটি অপসংস্কৃতি।বলা হয়,র্যাগিং এর অর্থ হল 'পরিচয়পর্ব'।কিন্তু বাস্তবে পরিচয়পর্বের সাথে চলে নোংরা অসভ্যতামি এবং মানসিক নির্যাতন।মূলত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সাথে এই র্যাগিং বিষয়টি সংযুক্ত।জেনারেল ডিগ্রি কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট কলেজ গুলোতে জুনিয়র ছাত্র-ছাত্রীদেরকেই খুব বেশি র্যাগিং করানো হয় থাকে। এই র্যাগিং পর্ব চলে মূলত প্রথম সেমিস্টারে পরিচয়পর্ব চলাকালীন এবং হোস্টেলের মধ্যে।র্যাগিং দিন দিন একটি ধারাবাহিক নোংরা প্রথায় পরিণত হয়েগেছে।সিনিয়ররা তাদের জুনিয়রদের র্যাগিং করলো আবার সেই জুনিয়ররা যখন সিনিয়র হচ্ছে তারাও ঠিক একইভাবে তাদের জুনিয়রদের র্যাগিং করছে।এইভাবে র্যাগিং একটি ধারাবাহিক অপসংস্কৃতিতে পরিণত হয়েগেছে।র্যাগিং এর ধরণ গুলো যেমন- জোরপূর্বকভাবে গান-নৃত্য করানো,বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করতে বলা,অশ্লীলভাবে অপমান করে পরিচয়পর্ব করা,বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা(যেমন- কান ধরে ওঠবস করানো, চড় মারা,সিগারেটের আগুনে ছ্যাঁকা দেওয়া, গাছে উঠানো, ভবনের কার্নিশ দিয়ে হাঁটানো, আর মানসিক নির্যাতনের মধ্যে আছে যেমন- গালিগালাজ করা,নেশা করতে বাধ্য করা, সবার সামনে প্রপোজ করানো,সেক্সচুয়াল বিষয়ক অশ্লীল কথাবার্তা বলা ইত্যাদি)।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল জ্ঞান অর্জনের জায়গা।নতুন শিক্ষার্থীরা একবুক স্বপ্ন নিয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে আসে।কিন্তু তারপর যখন তারা এই নোংরা র্যাগিং এর শিকার হয় তখন তাদের মনোবল ভেঙে যায়,তারা মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।এই র্যাগিং এর অত্যাচারে বহু পড়ুয়া তাদের পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে,কেউ কেউ মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে, এমনকি এই অত্যাচারের জন্য আত্মহত্যাও করে নিয়েছে অর্থাৎ পড়ুয়াদের মৃত্যু অবধি হয়েছে। শুধুমাত্র এই র্যাগিং এর জন্যই শত শত তরুণ পড়ুয়ার ভবিষ্যত নষ্ট হয়েগেছে,ভেঙেগেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বপ্ন।এই র্যাগিং এর ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে ভয় পায় এমনকি ভর্তি হতেও ভয় পায়।কিন্তু অবাক করার বিষয় হল,এই নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষকদের পাশে অভিযোগ করলেও তেমন কিছু কাজ হয়না।যদিও প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিং প্রতিরোধ করার জন্য এন্টি র্যাগিং কমিটি রয়েছে এবং বিভিন্ন আইনও রয়েছে।কিন্তু তাসত্বেও র্যাগিং চলতেই থাকে।তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে র্যাগিংকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।র্যাগিং মুক্ত ক্যাম্পাস কেবল লিখে রাখলেই হবে না।বাস্তবে র্যাগিং মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে হবে।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং হোস্টেলে যাতে র্যাগিং নাহয় তার জন্য বিশেষ বিশেষ কমিটি গঠন করতে হবে,বিশেষ বিশেষ আইন চালু করতে হবে এবং এই গুলোকে কেবল খাতা-কলমে নয় বাস্তবে কার্যকরী করতে হবে।র্যাগিং নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমস্ত কর্তৃপক্ষদেরকে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে,প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে সামাজিক ও মানসিকভাবে থাকতে হবে।সর্বোপরি র্যাগিং মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে হবে।কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল জ্ঞান অর্জনের জায়গা এবং স্বপ্ন পূরণের জায়গা,র্যাগিং করার জায়গা নয়।তাই কঠোর আইন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হোক।
(লেখক তরুণ কবি, প্রাবন্ধিক, সমাজকর্মী, সমাজতত্ত্বের গেস্ট লেকচারার এবং সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক)