গত বছরের শুরু থেকেই এখনও পর্যন্ত গোটা দুনিয়াই কাঁপছে করোনা ভয়ে, ২০২১ শেষের দিকে চলে এলেও ভারত এখনও পর্যন্ত নিজেকে করোনার কবল থেকে মুক্ত করতে পারেনি। ২০২১ সালের মার্চ মাস থেকে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ এখনও বর্তমান। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এর ভয়াবহতা আমদের কারোরই অজানা নয়। ভারত সহ গোটা বিশ্বই আস্তে আস্তে তাদের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে যাচ্ছে, ধীরে ধীরে নিম্নমুখী করোনা, কিন্তু রেস কাটতে না কাটতেই এসে হাজির নতুন ভ্যারিয়্যান্ট। দ্বিতীয় ঢেউ শেষ হতে না হতেই আরও এক ভয়াবহ ভ্যারিয়্যান্ট এসে হাজির। করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্টটির নাম B.1.1.529। ইতিমধ্যেই বিশ্বে একাধিক দেশে থাবা বসিয়েছে এই ভ্যারিয়্যান্ট। দক্ষিণ আফ্রিকায় এই ভ্যারিয়্যান্টের সন্ধান মিলেছে তার সাথে হংকং এও এই ভ্যারিয়্যান্টের সন্ধান মিলেছে। এবার এই বিষয়ে কেন্দ্র সতর্ক করল রাজ্য সরকার গুলিকে। তারা জানিয়েছে এই নতুন স্ট্রেন ডেল্টা ভ্যারিয়্যান্টের থেকেও ভয়ঙ্কর। এর ফলে দক্ষিণ আফ্রিকাতে একমাসের মধ্যেই কয়েকগুন বেড়ে গেছে করোনা সংক্রমন।
গবেষকদের মতে এই নতুন ভ্যারিয়্যান্টের তীব্রতা ডেল্টা ভ্যারিয়্যান্টের থেকেও ভয়ংকর হতে পারে। যদিও এই নতুন ভ্যারিয়্যান্টের এখনও কোন নামকরণ করেনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই ভ্যারিয়্যান্ট প্রথম ধরা পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বৎসোয়ানায়। দক্ষিণ আফ্রিকায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ১০০ এর বেশি মানুষের শরীরে এই ভ্যারিয়্যান্টের সন্ধান মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে করোনার এই নতুন প্রজাতি যদি ভারতে ঢুকে পড়ে তাহলে পরিস্থিতি আরও বাজে দিকে যাবে, যদিও এখনও পর্যন্ত ভারতে এই ভ্যারিয়্যান্টের হদিশ মেলেনি, তাই আগে থেকেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ সমস্ত রাজ্য গুলিকে সতর্ক করেছেন। বিমান বন্দরে নজরদারি চালানো হচ্ছে বহিরাগতদের ওপর, যাতে কোন ভাবেই এই অতিসংক্রামক ভ্যারিয়্যান্ট ভারতে প্রবেশ করতে না পারে।
এখনও পর্যন্ত ৫০ বার এই নতুন স্ট্রেনের রূপ পরিবরতনের খবর পাওয়া যাচ্ছে, যার মধ্যে বার তিরিশের বেশি শুধু মাত্র স্পাইক প্রোটিনের পরিবর্তন লক্ষণীয়। এই নতুন প্রজাতি যাদের শরীরে প্রবেশ করেছে তাদের উপসর্গ খুব বেশি দেখা গিয়েছে। তবে বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কোন এইচআইভি পসিটিভ রোগীর মধ্যেই এই নতুন প্রজাতির উৎপত্তি। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে নতুন এই ভ্যারিয়্যান্টের বেশি প্রভাব দেখা গেছে, আর যাদের মধ্যে দেখা গেছে তাদের বেশিরভাগই স্কুল পড়ুয়া। অর্থাৎ এটা বলাই যায় এই নতুন প্রজাতিতে আক্রান্ত হচ্ছেন কম বয়সীরা। ভারতে এখনও পর্যন্ত ১৮ অনূর্ধ্বদের টিকাকরণ শুরু হয়নি, এই দিকে দেশের প্রায় সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তবে ১৮ অনূর্ধ্বদের টিকাকরনের আওতায় আনতে উঠেপড়ে লেগেছে কেন্দ্র সরকার।
নয়াদিল্লির এমসের সেন্টার ফর কমিউনিটি মেডিসিনের চিকিৎসক সঞ্জয় রায় জানান, “এই নতুন ভ্যারিয়্যান্টের ব্যাপারে গোটা বিশ্বই এখনও পর্যন্ত বেশি কিছু জানে না, জানতে কিছুটা সময় লাগবে, তবে টিকাকরণ হয়ে গেলেও যে মানুষ এই প্রজাতি থেকে নিরাপদ তা এখনই বলা যাচ্ছে না”। এদিকে ডিসেম্বর মাসে ভারত ক্রিকেট দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে, এদিন বিসিসিআই এর পক্ষ থেকে জানা যায় তারা কেন্দ্র সরকারের নির্দেশের অপেক্ষাই আছে। দেশে সংক্রমন নিম্নমুখী হলেও আবার ১০ হাজারের গণ্ডি পেরিয়েছে, সবমিলিয়ে করোনার হাত থেকে কবে মুক্তি তা এখনও ধোঁয়াশা।