স্কুল ফি নিয়ে মামলা হাই কোর্ট পর্যন্ত গেছিল আগেই, আর এবার সেই একই মামলাই হাই কোর্টের সিদ্ধান্তেই অনড় সুপ্রিম কোর্ট। করোনা পরিস্থিতিতে নাজেহাল দেশের সমস্ত মানুষ, নিজের প্রিয়জনকে হারিয়েছে অনেক পড়ুয়া, কারোর বাড়িতে এবার একজনই রোজগেরে করোনা কেড়েছে তাঁর প্রাণ, অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছে। এমত অবস্থাই দুই বেলা দু মুঠো অন্নের যোগার করাই এখন অনেক পড়ুয়ার কাছে দুর্বিষহ। তাঁর মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের মুল্য বৃদ্ধি তো আছেই, তাঁর সাথে স্কুলের ফি। অনেক বেসরকারি স্কুলের ফি আকাশ ছোঁয়া, স্বাভাবিক ভাবেই পড়ুয়া থেকে অভিবাবক কারোরই দুশ্চিন্তা কম নয়।
করোনাকালীন পরিস্থিতিতেও ফি এর বোঝা কমেনি এতটুকুও। বরং চিন্তা বাড়িয়েছে অভিভাবকদের। স্কুল ফি নিয়ে মামলা এগিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত। অভিভাবকদের দাবি অনুযায়ী দেড় বছর ধরে স্কুল বন্ধ থাকলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ নিয়েছেন স্কুল ফি এবং কেন নেওয়া হবে এই স্কুল ফি। বেসরকারি স্কুলগুলোতে অভিভাবকদের করা মামলা এখনো পর্যন্ত চলছে। সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত এগিয়ে গেছে সেই মামলা। কিন্তু এর প্রভাব যাতে কোনোভাবেই শিক্ষার্থীদের উপরে না পরে সেই দিকটাই বেশি নজর দিচ্ছে ডিভিশন বেঞ্চ। পড়াশোনায় যাতে কোনরকম বাঁধা না আসে তাই জন্য আদালত আগেই নির্দেশ দিয়েছিল ফি নিয়ে। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে কোন শিক্ষার্থীর স্কুল ফি বাকি থাকলে তাকে অনলাইন ক্লাসের যোগদান বন্ধ বা রেজাল্ট অ্যাডমিট কার্ড না দেওয়া এই সমস্ত কোন কিছুই করা যাবে না এমনটাই নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট।
শুক্রবার অর্থাৎ ৪ঠা ডিসেম্বর সেই পুরনো নির্দেশে মনে করিয়ে দেন বিচারপতি ইন্দ্র প্রসন্ন মুখোপাধ্যায় এবং মৌসুমী ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। হাইকোর্টের রায় এরপর বহু স্কুল কর্তৃপক্ষ আদালতের শরণাপন্ন হয় কিন্তু তাতেও আদালত আগের সিদ্ধান্তেই অনড় থাকে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পারিবারিক অবস্থান কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কোন পড়ুয়া যদি বেতন দিতে না পারে তাহলে তাকে বহিস্কৃত করা যাবে না।
স্কুল কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে বেতন সংক্রান্ত বিবাদ চলে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে এবং সেই কারণেই অভিভাবক গোষ্ঠী তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ এফআইআর পর্যন্ত করে। বিষয়টা অতদূর না গেলেও শিশু সুরক্ষা কমিশনের তাদের নামে অভিযোগ করা হয়। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের এই সমস্ত কথায় বিরক্তি প্রকাশ করেছে উচ্চ আদালত এবং বার বার তাদের দেওয়া নির্দেশ মনে করিয়ে দিয়েছে। যদিও বেসরকারি স্কুলগুলোতে অধিকাংশ আয়ের উৎস পড়ুয়াদের দেওয়া বেতনই।
করোনাকালীন পরিস্থিতিতে উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে সব জিনিসের দাম। কাজহীন হয়ে দেশে ফিরেছে বহু মানুষ। সেই কাজহীন মানুষগুলোর মধ্যে কেউ কেউ পড়ুয়াদের অভিভাবকও। তাই সবদিক বিবেচনা করেই এরূপ সিদ্ধান্ত উচ্চ আদালতের। মামলাটি বিচারাধীন ডিভিশন বেঞ্চ এ নির্দেশই। হাইকোর্টের অনুমতি ছাড়া কোনভাবেই কোনরকম প্রশাসনিক পদক্ষেপ এই মামলায় নেওয়া যাবে না। তাছাড়াও করোনা পরিস্থিতি এখনো স্থিতিশীল হয়নি। তাই আগের থেকে অনেক বেশি এখনো বহাল রাখা উচিত। সবদিক ঠিক থাকলে এই মামলা সংক্রান্ত পরবর্তী শুনানি ১৭ই ডিসেম্বর হওয়ার কথা।