#Pravati Sangbad Digital Desk:
স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো, স্বপ্ন হল সেটাই যা পূরণের অদম্য ইচ্ছা তোমায় ঘুমাতে দেবে না' - সত্যি, সেদিন তাঁর অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনেছিল জীবনের প্রত্যেকটি প্রতিকূলতা। চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল একটির পর একটি বাধা। তাইতো বাড়ি বাড়ি খবরের কাগজ বিক্রি করে দারিদ্র্যতার সঙ্গে প্রচন্ড লড়াই করে তিনি হয়ে উঠেছিলেন ভারতের মিসাইল ম্যান। হয়ে উঠেছিলেন দেশের ১১ তম রাষ্ট্রপতি। তিনি আর কেউ নন, যুব সমাজের আইকন - স্যার এপিজে আব্দুল কালাম। আজ দেশজুড়ে পালন হচ্ছে তাঁর ৯১ তম জন্মদিবস। কিন্তু তাঁর সফলতার পথটা কি এতটাই সহজ ছিল? কীভাবে অর্জন করলেন একের পর সাফল্য? কীভাবেই বা হয়ে উঠলেন দেশের মিসাইল ম্যান? দিনটা ছিল ১৯৩১ সালের ১৫ই অক্টোবর। ব্রিটিশ অধিনস্ত ভারতের রামেশ্বরাম নামক একটি গ্রামে আগমন হলো ছোট্ট কালাম এর। জন্মেছিলেন অত্যন্ত সাধারণ এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে। জানা যায়, ছোটো থেকেই পড়াশোনায় অত্যন্ত মনোযোগী ছিলেন কালাম। স্কুল ছুটির পরে সকলে যখন ছুটত মাঠে, তখন বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে তিনি খবরের কাগজ হাতে বেড়িয়ে পড়তেন রাস্তায়। কাগজ বিক্রির টাকাতেই চালিয়েছেন নিজের পড়াশোনা। কেবলই দারিদ্রতা নয় তাঁর সাফল্যের নেপথ্যে থেকে যায় পারিপার্শ্বিক পরিবেশের বিরাট অবদান। কালামের বাবা ছিলেন পেশায় মৎস্যজীবী। ছিলনা পুঁথিগত বিদ্যা। কিন্তু বাল্যকালেই তিনি নিজের পুত্রের মধ্যে বিস্তার করেছিলেন আধ্যাত্মিকতার জাল। শিক্ষা দিয়েছিলেন মানুষের মত মানুষ হওয়ার। পাশাপাশি কালামের মাও তাঁর জীবনে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছেন। প্রবল মাতৃস্নেহ আনন্দে ভরিয়ে তুলেছিল কালামের জীবন। বাবা-মায়ের পাশাপাশি তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকজন বন্ধু ছিলেন রামনাথ শাস্ত্রী, অরবিন্দন আর শিব প্রকাশন। প্রত্যেকে সনাতন ধর্মের অন্তর্গত থাকলেও কালাম ছিলেন ইসলাম ধর্মাবলম্বী। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ছিলনা কোনো পারস্পরিক বিভেদ। কালাম তাঁর শিক্ষকদের থেকেও পেয়েছিলেন প্রচুর সহযোগিতা। সবমিলিয়ে শৈশবেই তাঁর অন্তরে অঙ্কুরিত হয়েছিল সাফল্যের বীজ। যা পরবর্তীকালে পরিণত হয়েছিল বটবৃক্ষে। কালাম ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। সমস্ত বিতর্কের উর্ধ্বে থেকে তিনি হয়ে উঠেছিলেন একজন সফল মহাকাশ বিজ্ঞানী (Aerospace Scientist)।
প্রথম জীবনে তিনি যোদ্ধা হিসাবে যোগ দিতে চেয়েছিলেন ভারতীয় বিমান বাহিনীতে। পরীক্ষায় অর্জন করেছিলেন নবম তম স্থান। প্রথম আটজনকে নেওয়া হলেও সেদিন বাদ পড়েছিলেন তিনি।
পরবর্তীকালে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কালাম। ১৯৬৯ সালে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিযুক্ত হন তিনি। এরপর প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উত্ক্ষেপণকারী যানের (SLV- III) পরিচালনার দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন নিজের কাঁধে। DRDO এবং ISRO তে কর্মরত থাকাকালীন তিনি মহাকাশ গবেষণায় সামরিক মিসাইল তৈরিতে যে অবদান রেখেছেন তা এযাবৎ ভোলার নয়। ব্যালেস্টিক মিসাইল (Ballistic Missile) আর উত্ক্ষেপণ যান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি ভূষিত হন 'মিসাইল ম্যান' এর তকমায়।
১৯৮১ সালে 'পদ্মভূষণ' এবং ১৯৯০ সালে 'পদ্মবিভূষণ'-এ ভূষিত হন স্যার এপিজে আব্দুল কালাম। ১৯৯৭ সালে ভূষিত হন ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান 'ভারতরত্ন'-এ।
পরবর্তীকালে বিজেপি এবং কংগ্রেস উভয়ের সমর্থনে ভারতবর্ষের ১১ তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হন আব্দুল কালাম। ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি সামলেছেন স্বাধীন ভারতের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব।
প্রখর আত্মবিশ্বাস আর কঠোর পরিশ্রম তাঁর প্রত্যেক কাজে এনে দিয়েছে চূড়ান্ত সফলতা। যার মাধ্যমে ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পেয়েছেন 'ডক্টরেট' উপাধি। এছাড়াও তাঁর সাফল্যতাকে মাথায় রেখে ২০১০ সাল থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী তাঁর এই জন্মদিবস টিকে পালন করা হয় 'বিশ্ব ছাত্র দিবস' (World Students Day) হিসাবে। যা ভারতবর্ষের ইতিহাসে চিরকাল অত্যন্ত গর্বের একটি দিন হিসাবে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image
Journalist Name : Uddyaloke Bairagi