নভেম্বর যত এগোচ্ছে, ততই অনুভূত হচ্ছে শীতের আমেজ। আর শীতকাল মানেই পরিণয়ের মধুমাস। কারণ ক্যালেন্ডারের বেশীরভাগ বিয়ের লগ্ন লেখা থাকে এই শীতকালেই। দাম্পত্য জীবনে পা দেওয়ার আগে যেমন কপোত-কপোতি একে অপরের গলায় পরিয়ে দেয় রজনীগন্ধার মালা, তেমনই প্রথমবার কাছাকাছি আসার মুহূর্তও তৈরি হয় রজনীগন্ধার সুগন্ধ গায়ে মেখে। অর্থাৎ দাম্পত্য জীবনের সঙ্গে রজনীগন্ধার একটা প্রভাব শুরু থেকেই রয়ে যায়। তবে শুধু বিয়ের সময় নয়; বাস্তুশাস্ত্র বলছে, রজনীগন্ধা হল এমন একটি ফুল, যেটি আমাদের দাম্পত্য সুখ নিয়ন্ত্রণ করে। আজ্ঞে হ্যাঁ, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা স্থাপন করে এই রজনীগন্ধা।
অনেকে প্রায়ই তাদের ঘর সুন্দরভাবে সাজাতে নতুন উপায় অবলম্বন করে। প্রায়শই লোকেরা তাদের বাড়িতে বিভিন্ন ধরণের পেইন্টিংয়ের সাথে বিভিন্ন ধরণের গাছপালা লাগায়। যদিও বাড়িতে গাছ লাগানো ইতিবাচক শক্তি নিয়ে আসে। মানি প্ল্যান্ট, ক্র্যাসুলা হল এক ধরনের গাছ যা আপনার বাড়িতে ইতিবাচক শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। বাড়িতে গাছপালা ও ফুল লাগালে ইতিবাচক শক্তি থাকে। সেই সঙ্গে সুখ-সমৃদ্ধিও বজায় থাকে। সেই সাথে রজনীগন্ধা গাছ লাগানোর পিছনে বাস্তুশাস্ত্রে অনেক শুভ ফলাফলের কথা বলা হয়েছে। রজনীগন্ধা গাছ বাড়ির মানুষের সম্পর্কের মাধুর্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নিই বাস্তু অনুসারে রজনীগন্ধার উপকারিতা।
বেশিরভাগ মানুষ ইতিবাচকতার পরিবেশ তৈরি করতে বাড়িতে ফুলের গাছ লাগান। বাস্তুশাস্ত্রের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাছপালা ঘরের বাস্তু দোষ দূর করে। এর পাশাপাশি গাছপালা সুখ, সমৃদ্ধি ও সাফল্যের পথ দেখায়। খারাপ বাস্তু অবস্থার কারণে কিছু পরিবারে প্রতিদিন ঝগড়া হয়। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে তিক্ততা রয়েছে। ঘরটা একটা ভাঙনের দিকে যেতে থাকে। অনেক সময় মানুষ লাখো চেষ্টা করেও সম্পর্ক ভালো হওয়ার নাম নেয় না। এমন পরিস্থিতিতে বাড়িতে রজনীগন্ধার গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন বাস্তুশাস্ত্রের বিশেষজ্ঞরা। রজনীগন্ধা গাছ দাম্পত্য জীবনে খুবই কার্যকরী।
১) রজনীগন্ধার সুবাস অপূর্ব। এটি বিবাহিত জীবনের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় এবং সম্পর্ককে মধুরতায় পূর্ণ করে। এটি একটি অনন্য ইতিবাচক শক্তি তৈরি করে যা পরিবারে শান্তি ছড়িয়ে দেয়। শোওয়ার ঘরে রজনীগন্ধার গাছ লাগালে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের তিক্ততা দূর হয়।
২) বাস্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, বাড়ির পূর্ব বা উত্তর দিকে রজনীগন্ধা লাগাতে হবে। এতে ঘরে আশীর্বাদ আসে। বাড়ির আঙিনায়ও লাগাতে পারেন। এতে করে প্রেমের সম্পর্কের তিক্ততা দূর হয়ে যায়। এর সুগন্ধে ঘরের নেতিবাচকতা দূর হয় এবং পরিবারের খ্যাতি, সম্পদ ও সমৃদ্ধি অটুট থাকে।
৩) বাস্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে রজনীগন্ধা গাছ আপনাকে বাড়িতে আর্থিক সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়। পূজায় দেব-দেবীর উদ্দেশে এর ফুল নিবেদন করলে তাদের আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
বাস্তুশাস্ত্র বলে, রজনীগন্ধার সুন্দর গন্ধে বাড়ি থেকে যাবতীয় নেগেটিভ এনার্জি দূরে সরে যায়। সুখ, শান্তি, সম্পদ ও সমৃদ্ধির প্রাচুর্য ঘটে ওই পরিবারে। এছাড়াও এই গন্ধ দাম্পত্য জীবনে মিষ্টতা বাড়ায়। বাস্তুবিদরা বলেন, বেডরুমে ফুলদানিতে রজনীগন্ধা রাখলে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে তিক্ততা দূর হয়। এর ফলে গোটা পরিবারে সুখ ও শান্তি বিরাজ করে। পরিবেশ থেকে যাবতীয় নেগেটিভ এনার্জি শুষে নেওয়ার ক্ষমতা থাকে রজনীগন্ধা ফুলের মধ্যে। এসব ছাড়াও রজনীগন্ধা ফুলের শুভ প্রভাবে আর্থিক সমস্যাও দূর হয় বলে জানাচ্ছেন বাস্তু বিশেষজ্ঞরা। সকালে রজনীগন্ধা ফুলের মালা ঠাকুরের মূর্তি ও ছবিতে পরিয়ে দিন, ঈশ্বরের আশীর্বাদ সব সময় থাকবে আপনার পরিবারে।
এসব কারণেই দাম্পত্য জীবনের মানসিক শুরুটা হয় রজনীগন্ধার মালাবদল দিয়ে। শারীরিক সম্পর্কের শুরুতেও থাকে রজনীগন্ধা। কারণ ফুলশয্যার বিছানা সাজানো থাকে রজনীগন্ধা দিয়েই। তবে শুধু বাস্তুশাস্ত্র নয়, ফুলের গন্ধ যে মনের উপর প্রভাব ফেলে, একথা স্বীকার করে বিজ্ঞানও।