সমাজে দাড়িয়ে বাল্যবিবাহ , বহুবিবাহ আইনত দণ্ডনীয়। তবে এখনো প্রত্যন্ত গ্রামের অনেক জায়গায় এইসব প্রথা প্রচলিত আছে। নিয়ম অনুযায়ী কোনো মেয়ের ১৮ বছর বয়সের আগে বিবাহ দেওয়া অপরাধ। তবে সে বিষয়ে অনেকেই কর্ণপাত করে না। বামের সময় ভীষণ ভাবে বেড়ে গিয়েছিল নাবালিকাদের বিয়ের সংখ্যা। এমনকি সুস্থ শরীরে মা হতে গিয়ে হয় মায়ের প্রাণ যাচ্ছে না হয় নবজাত শিশুর।
এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব থেকে বেশি জোর দেন মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর দিকে।
২০১৩ সালে তাঁর হাত ধরে বাংলায় চালু হয় 'কন্যাশ্রী' প্রকল্প, যা ইতিমধ্যেই শুধু বাংলাজুড়ে সাড়া ফেলেছে তাই নয়, বিশ্বেও পেয়েছে এর কদর। কিন্তু ২০২০ এর আতিমারির সময়েয়ের পরে দেখা যাচ্ছে কন্যাশ্রী প্রকল্পে যুক্ত থাকা মেয়েদের বিদ্যালয়ে না যাওয়ার পরিমাণ আবার যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে তাদের নাবালিকা অবস্থায় বিয়ের সংখ্যা। এই পরিস্থিতি বদলাতে রাজ্যের জেলায় জেলায় কন্যাশ্রীদের কাউন্সিলিং করানোর পথে হাঁটা এগিয়ে চলেছে জেলা প্রশাসনগুলি।
এই পদক্ষেপ প্রথম চালু হচ্ছে পূর্ব বর্ধমান জেলায়। গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের ১৮ পেরোনোর আগেই বই খাতা সিকেয় তুলে নাবালিক অবস্থায়তেই বিয়ের সাজে পড়তে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। এই অপরাধের বেড়াজাল রুখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 'কন্যাশ্রী' প্রকল্পের দ্বারা আবিবাহিত মেয়েদের মাসিক ৫০০ টাকা ও ১৮ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েদের এককালীন ২৫,০০০ হাজার টাকা দেওয়ার সিধান্ত নেন। এই টাকায় তারা পড়াশোনা করে যেতে পারে। তবে দেখা যাচ্ছে ২০ শতাংশ বিবাহিত কন্যারা নাবালিকা। ফলে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় যত কন্যাশ্রী সদস্য রয়েছে তাদের প্রত্যেকের কাউন্সিলিং করবে জেলা প্রশাসনগুলি। কন্যাশ্রীদের বোঝানো হবে তাদের জীবনে পড়াশুনো কতটা জরুরি। প্রত্যেকদিন স্কুল যাওয়া , নাবালিকা অবস্থায় বিয়ের পিড়িতে না ওঠা ইত্যাদি বিষয়েও সচেতন করা হবে তাদের।
আতিমারীর সময়ে অনেক পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতিতে মেয়েদের নাবালিকা অবস্থাতেই অনেকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। এই কাউন্সিলিং পর্বে সামিল হবে কন্যাশ্রী সদস্যদের বাবা-মায়েরাও। কাউন্সিলিংয়ে কন্যাশ্রীদের পাশাপাশি তাদের বাবা-মায়েদেরও বোঝানো হবে নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে দিলে কী কী সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। নবান্ন সূত্রে জানা যায়, শুধু নাবালিকা নয় নাবালকদেরও বিয়ের সংখ্যা বেড়েছে। অতএব শুধু নাবালিকা নয় , নাবালকদেরও কাউন্সিলিং করানোর কথা ভাবছে রাজ্য প্রশাসন। তবে আপাতত কন্যাশ্রীদের দিকে নজর দেওয়া হবে।