সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেতে নেই কেন

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

ছোট থেকে আমরা সবাই শুনে আসছি পুজোর আগে কুল খেতে নেই। বাড়ির বড়রা ছোটদের কুল খাওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য এটাও বলেছেন যে, সরস্বতী ঠাকুর রাগ করবেন, তিনি রাগ করলে পরীক্ষায় পাশ করতে পারবে না, ভালো ফল করতে পারবে না, কিন্তু কেন এই নিয়ম সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না। যুগ যুগ ধরে এমন মনখারাপ করা রীতির কথাই আমরা শুনে আসছি অভিভাবকদের কাছ থেকে। খারাপ ফলাফলের ভয়ে একপ্রকার বাধ্য হয়েই সেই গতানুগতিক নিয়ম মেনে চলতে বাধ্যও হয় পড়ুয়ারা। সরস্বতী পুজোর আগে বাজার জমিয়ে ক্রেতাদের হাতছানি দেয় টোপা, বিলাতি, নারকেল কুলের সম্ভার। তবুও কাছে পেয়েও তাদের আপন করার উপায় থাকে না। তবে কুল খাওয়ার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। রয়েছে যুক্তিসম্মত ব্যাখ্যাও। বসন্তপঞ্চমীর আগেই গাছে গাছে কুলে ভরে যায়। হাল্কা বা গাঢ় সবুজ রঙের কুলের গন্ধ মাতাল করে দেয় আট থেকে আশি সকলকেই। আসলে বসন্ত শুরু হওয়ার সময় থেকে পেটের রোগ, জ্বর, সর্দি-কাশির প্রকোপ বাড়ে। কুল তো আর গোনাগুনতি খাওয়া চলে না। তাই মুঠো ভর্তি কুল মখের মধ্যে চলে যায় টপাটপ। এ ছাড়া কাঁচা কুলের মারাত্মক টক স্বাদ দাঁতকে একপ্রকার কষ্ট দেওয়া।
কৃষি প্রধান আমাদের এই দেশ যেখানে দেব দেবীদের পূজাতে বিভিন্ন ধরনের ফসল, ফল, ফুল অর্পণ করা হয়। আর শীতকালে যেহেতু এই সরস্বতী পূজা হয়ে থাকে, তাই এই সময়ে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ফল হলো কুল, আর সরস্বতী পূজা তো বসন্ত পঞ্চমীর সময়ই হয়, তাই এই সময় কুল খুব ভালো হয়। আর প্রথমে এই ফলটিও দেবতাকে উৎসর্গ করা হয় আর এটাই প্রসাদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
শাস্ত্র মতে দেবী সরস্বতীকে তুষ্ট করতে ব্যাসদেব দীর্ঘদিন তপস্যা করেছিলেন। সে তপস্যার আগে দেবী সরস্বতী তাঁর তপস্যাস্থলের পাশেই একটি কুল বীজ রেখে একটি শর্ত দিয়েছিলেন। সেই শর্তানুযায়ী বলা ছিল, যতদিন না কুল বীজ অঙ্কুরিত হয়ে বড় গাছ হবে এবং সেই গাছের ফল পেকে ব্যাসদেবের মাথার উপর পড়বে। ততদিন অবধি দেবীর তপস্যা করতে হবে।তারপরেই দেবী তাঁর তপস্যায় তিনি তুষ্ঠ হবেন। সেই শর্তানুযায়ী, ব্যাসদেব তপস্যা শুরু করেন। যেদিন গাছের নতুন ফল তাঁর মাথায় পড়ে, তিনি বুঝতে পারেন দেবী তাঁর তপস্যায় তুষ্ঠ হয়েছেন। বিশেষ দিনটি ছিল পঞ্চমী। সেই দিন দেবীকে কুল নিবেদন করে ব্যাসদেব ব্রহ্মসূত্র রচনা আরম্ভ করেছিলেন। সেইজন্যই শ্রীপঞ্চমীর দিনই সরস্বতী দেবীকে নিবেদন করার পর কুল খাওয়া হয়।আবার শোনা যায় মা সরস্বতী যেদিন ব্যাসদেব কে তপস্যার জন্য আশীর্বাদ করতে ছুটেছিলেন শাস্ত্রে বলা হয় সেই দিনটি ছিল তার সঙ্গে বিষ্ণুর বিবাহের তিথি। দেবী ছুটলেন ভক্তকে আশীর্বাদ করতে। আর বিষ্ণু যোগ বলে সমস্ত টা জানতে পেরে তখনই বর রূপে চলে গেলেন। পাত্রী হিসেবে তখন দেবী সরস্বতীর ডাক পড়লো। কিন্তু দেবী তো নেই সবকিছু জেনেও বিষ্ণু প্রত্যাখ্যান করলেন দেবীকে। দেবী ফিরে এসে সমস্ত টাই জানতে পারলেন রাগে দুঃখে অপমানে তিনি বিবাহের বস্ত্র পরিত্যাগ করলেন এবং হলেন শুভ্রবসনা। সেই থেকে দেবীর শুভ্র বসন। তিনি সকল জ্ঞানের আধার।তিনি বাগদেবী। একজন নারী যে শুধু নিজের পরিচয় ছাড়াও পরিচিত হতে পারে তাই তিনি প্রতিষ্ঠা করে গেছিলেন।দেবীর শুভ্রবসনা হওয়ার আরো একটি কারণের কথা বলা হয়। তিনি হচ্ছেন জ্ঞানের দেবী। জ্ঞান হয় সবসময় শুদ্ধ ও নির্মল।

কিন্তু বৈজ্ঞানিক কারণ বলছে, কুল খেলে পেট ব্যাথা হতে পারে। তাই সুস্বাদু এই ফল খাওয়াতে লাগাম টানতেই এই বিশ্বাসের প্রলেপ। এই সময় জ্বর সর্দি কাশির প্রকোপ বাড়ে। আর অন্যদিকে সরস্বতীর পুজোর আগের সময়ে টক ও কাঁচা থাকে কুল। যা গলা, পেট ও দাঁতের জন্য ক্ষতিকারক। কিন্তু সরস্বতীর পুজোর সময় কুল পেকে যায়। তখনই একমাত্র খাওয়ার উপযোগী। সরস্বতী পুজো চলে যাওয়ার পর খুব বেশি কুল পাওয়া যায় না বাজারে। বিশেষ করে একেবারে কমে যায় টোপা কুল। কারণ, সে সময় সম্পূর্ণ পেকে যায়। কাজেই, সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেলে সমস্যা হয় শরীরে। বিদ্যায় তার প্রভাব পড়ে না।

Journalist Name : Aparna Dutta

Tags:

Related News