কলকাতায় চিকেন পক্সে মৃত বেড়ে ২৬

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

করোনার মতোই কি ছড়াচ্ছে চিকেন পক্স? চিন্তায় মাথায় হাত পড়েছে স্বাস্থ্য দফতরের। গত কয়েক মাসে কলকাতা শহরেও চিকেন পক্সে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে এখনও অবধি ২৬ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। সংক্রমণ ছড়ানো বন্ধ করতে করোনার মতোই ফেস-মাস্ক ও পারস্পরিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। চিকিৎসকদের মতে, চিকেন পক্স খুবই ছোঁয়াচে রোগ। খুব দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে সুস্থ মানুষের শরীরে তা ছড়িয়ে পরে। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি বা থুতুর মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ায়। এমনকি, রোগীর সংস্পর্শে এলেও রোগ ছড়াতে পারে। শরীরে ভাইরাস ঢোকার সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে ধীরে ধীরে উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে। চিকেন পক্সের ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে এই রোগের প্রকোপ থেকে রেহাই মেলে। বাচ্চাদের আগে থেকেই তাই পক্সের ভ্যাকসিন দিয়ে রাখা হয়। আইডি হাসপাতালের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. বিশ্বনাথ শর্মা সরকার জানিয়েছেন, 'কোনও ব্যক্তির গায়ে র‍্যাশ বা দানার মতো জলভরা গুটি দেখা দিলেই আলাদা ঘরে রাখতে হবে। রোগীর ব্যবহৃত সামগ্রী কেউ ধরবে না। দেখা গিয়েছে, শুরুর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডাক্তার দেখিয়ে পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেলে চিকেন পক্স নিয়ন্ত্রণে আসে। যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বা যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের বেশিরভাগেরই চিকিৎসা শুরু হয়েছিল দেরিতে।' বিশ্বনাথবাবু বলেন, 'জলবসন্তে মৃত ও আক্রান্তদের কেস হিস্ট্রি পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ ব্যক্তিরই তীব্র শ্বাসকষ্ট হয়েছে। অর্থাৎ, ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছে। ফুসফুসের কোষগুলো রসস্থ হয়ে পড়ায় অক্সিজেন ফুসফুসে ঢুকতে পারে না। একইভাবে মস্তিষ্কেও অক্সিজেন পৌঁছতে বাধা পায়। ফলে রোগী ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পরে, কিডনি, ফুসফুসের স্বাভাবিক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে রোগীর মৃত্যু হয়।' কিছুদিন আগেই বেলেঘাটা আইডিতে চিকেন পক্সে মৃত্যু হয়েছিল এক ব্যক্তির। দু'জনের অবস্থা সংকটজনক ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের বয়স ৬৭ বছর। স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন থেকে তাঁকে বেলেঘাটা আইডিতে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু বাঁচানো যায়নি।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঋতু পরিবর্তনের সময়ে হাম ও বসন্তের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। তবে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে এখন এই সব রোগ হওয়ারও কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। জলবায়ু যেভাবে বদলাচ্ছে, তাতে সংক্রামিত রোগগুলো ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ও ইউনিসেফের সমীক্ষা বলছে, বিশ্বজুড়েই হাম, পক্সে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। স্মল পক্স বা গুটিবসন্তের মতো সাংঘাতিক না হলেও জলবসন্তের (chickenpox) সাম্প্রতিক দাপট দেখে চিকিত্‍সকদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। কারণ একটা সময় ছোটবেলায় চিকেন পক্স হলেও তা সেরে যেত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ভ্যারিসেলা জুস্টার নামক ভাইরাস যা চিকেন পক্সের জন্য দায়ী তাই ক্রমশ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। সংক্রমণ এমন পর্যায়ে পৌঁছচ্ছে যে মানুষজনের প্রাণহানি হচ্ছে। বাঁকুড়া, উত্তরবঙ্গ থেকেও সংক্রমণ ও মৃত্যুর খবর আসছে।
বেলেঘাটা আইডির কোভিড নোডাল অফিসার কৌশিক চৌধুরী বলছেন, করোনার সময় যে ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তা আবারও মেনে চলার সময় এসেছে। কারণ কোভিডের মতোই ছড়িয়ে পড়ছে চিকেন পক্স। স্পর্শ থেকে এই সংক্রমণ ছড়ায় না ঠিকই, তবে আক্রান্তের হাঁচি-কাশি, মুখ থেকে বেরনো থুতু-লালার মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই সাবধান থাকতেই হবে। 
স্বাস্থ্য আধিকারিকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেই চিকেন পক্সের মতো রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই ভাইরাস ঘটিত রোগ। ভ্যারিসেলা জুস্টার (ভি-জেড ভাইরাস) নামে এক ধরনের ভাইরাসের জন্য এই রোগ হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাধারণত পক্সের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাময়িকভাবে কমে যায়। সচেতন না হলে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, হাঁচি-কাশি, পেটের গোলমাল দেখা দিতে পারে। কোনও পুরনো বা জটিল রোগ থাকলে পক্সের কারণে তা আরও বাড়তে পারে। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রাণহানির আশঙ্কাও থেকে যায়। তাই উপসর্গ দেখা দিলেই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Journalist Name : Sampriti Gole

Tags:

Related News