বুর্জ খলিফায় আবার লাইটিং চালু হয়েছে, লেজার আলোক সজ্জায় স্বমহিমায় শ্রীভূমি

banner

#Kolkata:

বিশ্বের অন্যতম সেরা আকর্ষণ বুর্জ খলিফার আদলে ১৩৫ ফুটের পুজো মণ্ডপ তৈরি করে চমক দিয়েছিল শ্রীভূমি। তার জেরেই পঞ্চমী থেকে মানুষের ঢল উপচে পড়েছিল শ্রীভূমির দিকে। দেখানো হচ্ছিল লেজার বিমের খেলা। কিন্তু সপ্তমীর দিনে বুর্জ খলিফার লেজ়ার লাইট প্রদর্শন বন্ধ করে দেওয়া হয়… শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবে এবারও সোনার গয়নায় সাজানো হয়েছে মা-কে। প্রতিমা সেজেছে প্রায় ৪৫ কেজি সোনার গয়নায় ৷ যার বর্তমান বাজারদর প্রায় ২০ কোটি টাকা। কর্মকর্তারা জানান, এই গয়নার জন্য কোনও খরচই হয়নি ৷ গয়না দিয়েছে নামী একটি অলঙ্কার প্রস্তুতকারী সংস্থা। পুজোর পর সবই ফেরত নিয়ে যাবে তারা। শ্রীভূমি স্পোর্টিং-এর এবারের পুজোর গান গেয়েছেন অভিজিত্‍। সুর দিয়েছেন জিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায়। কাচ এবং অ্যালুমিনিয়ামের প্লেটের সহযোগে করা হয়েছে এই মণ্ডপসজ্জা।

“এটা ঠিক করেনি।“ দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর শ্রীভূমির "বুর্জ খলিফা" পুজো নিয়ে সাফ মন্তব্য শাসকদলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায়।শ্রীভূমিতে "বুর্জ খলিফা" পুজো মণ্ডপ ও লেসার শো ঘিরে দর্শনার্থীদের ভিড় নিয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সাফ কথা এরফলে করোনা বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে। ব্যহত হচ্ছে সরকারি উদ্দেশ্য।

করোনা আবহেও শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো দেখার ভিড় চোখে পড়ার মতো। সকলেই এখন শ্রীভূমির “বুর্জ খলিফা” মুখী। এই পুজোর কর্ণধার রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু। এই মণ্ডপের আলোকসজ্জা নিয়ে সম্প্রতি বিতর্ক শুরু হয়। কলকাতা বিমানবন্দরের কাছে এই সর্বজনীন পুজোর মণ্ডপের আলোকসজ্জায় নাকি অসুবিধা হচ্ছে পাইলটদের । মঙ্গলবার সংবাদসংস্থা এএনআই বিমানবন্দর সূত্র উদ্ধৃত করে দাবি করে, তিন পৃথক ফ্লাইটের বিমান চালকরা অভিযোগ জানিয়েছেন কলকাতা এটিসি-র কাছে।

শ্রীরামপুর গান্ধী ময়দানে এদিন নবমী পুজো করেন শ্রীরামপুর সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায়। সেখানেই তিনি শ্রীভূমির পুজো নিয়ে বলেন, "সুজিত এমনিতে খুব ভালো ছেলে কিন্তু এব্যাপারে তাঁর আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল। বিমানবন্দের একটা নির্দিষ্ট রেডিয়াসের মধ্যে বাড়ি হোক বা আলো, অনুমতি নিয়ে করতে হয়। আমার মনে হয় না, সেই দিকটা লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এই জিনিসটা ঠিক হয়েছে বলে আমি মনে করছি না। আর দু-নম্বর হচ্ছে যে, কেন আমি এত ভিড় ডাকব? লোককে আমন্ত্রণ করব? আজকে কোভিডে আমাদের মূল উদ্দেশ্যটা কী? পুজো হচ্ছে হোক, কিন্তু ভিড় যাতে বেশি না হয়। তাই এমন একটা কাজ করা উচিত না, যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ এসে ভিড় জমাল, আর তাতে করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে! ভাইরাস যাতে ছড়াতে না পারে, সেজন্য় খোলামেলা জায়গা চাই। কিন্তু তুমি এমন একটা করে দিলে যেখানে বদ্ধ জায়গায় সবাই আসছে, তাহলে তো এটা বিরোধী হয়ে যাচ্ছে!" মণ্ডপে মাত্রাতিরিক্ত ভিড় সামলাতে হিমশিম খায় পুলিশ। এরপর বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে পুজো উদ্যোক্তাদের (Sreebhumi || Durga Puja 2021) কাছে অনুরোধ করা হয় যাতে বুর্জ খলিফার  (Burj Khalifa) আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু সাফ জানিয়ে দেন,  এই ধরনের কোনও অভিযোগ তাঁর পুজোর বিরুদ্ধে নেই। এমনিতেই এই মণ্ডপে এত মানুষের ভিড় হচ্ছে যে,  আলোকসজ্জা কমানো হয়েছে।

পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। শ্রীভূমির পুজো মণ্ডপের সামনে আবাসিকরা ছাড়া আর কোনও দর্শনার্থীদের নবমীর সকালে দেখা গেল না। শুধুমাত্র আবাসিকরাই পরিচয়পত্র দেখিয়ে মণ্ডপে (Burj Khalifa) প্রবেশ করতে পারছেন। এই প্যান্ডেলের নির্মাণ প্রসঙ্গে পুজোর উদ্যোক্তা ও দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু বলেছেন, দুবাইয়ে এত বড় একটা বিল্ডিং রয়েছে। আমার মনে হয়েছিল, এটা এখানে করা যায় কি না ! আমি প্রথমে এক্সপেরিমেন্ট করেছিলাম। পরে মনে হয়েছিল, এটা করা যেতে পারে। এই প্যান্ডেলটা যাঁরা বানিয়েছেন, তাঁদের পাঠিয়েছিলাম বুর্জ খলিফা দেখে আসতে। বলেছিলাম, গিয়ে দেখে আসতে। কারণ, দেখলে মানুষের একটা আইডিয়া হয়। ওঁরা এসে বলেছিলেন, এই এই জায়গাগুলি ঠিক করতে হবে। আমি বলেছিলাম, তা করুন। কিন্তু, যেটা করবেন পারফেকশন আনতে হবে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বালুরঘাটের একটি কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে সুকান্ত মজুমদার বলেন, “খোদ দমকল মন্ত্রীর পুজো নিয়ে এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার তরফে পুজো মণ্ডপের হাইট ও লেজ়ার লাইট বন্ধের কথা বলা হয়। দমকল মন্ত্রীর পুজোতে যদি এমন ঘটনা ঘটে, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের দমকল মন্ত্রীর দমও নেই।” এখানেই শেষ নয়। তিনি আরও বলেন, এই পুজোকে কেন্দ্র করে যে রকম ভাবে অরাজকতা চলছিল এবং রাস্তায় জ্যাম সৃষ্টি হয়েছিল প্রশাসনের আরও আগে উচিত ছিল এই পুজো বন্ধ করা। এই পুজোর জ্যামে তিনি একবার নিজেই পড়েছিলেন বলে দাবি করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তাই শ্রীভূমির পুজো দর্শন আগে বন্ধ করা হলে করোনার প্রকোপ অনেক আগেই কমত বলে দাবি করেন তিনি।

রাত বাড়লেই বাড়ছিল ভিড়। ঘটনার জেরে বন্ধ করা হয় লেক টাউনের দিকের রাস্তা। তাতেও কমেনি ভিড়। উল্টোডাঙার দিকের রাস্তায় ভিড় জমাতে থাকেন অগুণিত মানুষ। এবার তার জেরেই এই বছরের মত পুজো মণ্ডপ দর্শনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে শ্রীভূমি পুজো কমিটির আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, মানুষের ভিড় সামলাতে যখন হিমশিম খেতে হচ্ছিল পুলিশ প্রশাসনকে সেই সময় কভিডের আতঙ্ক আরও বেড়ে চলেছিল রাজ্য সরকারের উপর। তার জেরেই নবান্নের তরফ থেকে এবং বিধাননগর পুলিশের পক্ষ থেকে বৈঠকে বসা হয় শ্রীভূমির পুজো কমিটির সঙ্গে।

এদিকে, শ্রীভূমির ভিড় ঠেকাতে ট্রেন পরিষেবায় কোপ। বিধাননগর স্টেশনে দাঁড়াবে না ডাউন ট্রেন। এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। শ্রীভূমি সহ অন্য পূজা মণ্ডপে অতিরিক্ত ভিড়ের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল।

Journalist Name : Abhinaba Poddar

Related News