আজকাল মানুষ ননস্টিকের ব্যবহার বেশি করছেন, জেনে নিন এর ক্ষতিকারক দিকটি

banner

#pravati sangbad digital desk:

বর্তমানে অনেকেই স্বাস্থ্য সচেতন। শরীর ফিট রাখতে করছেন নিয়মিত ওয়ার্কআউট। সেই সঙ্গে ফাস্টফুড, তেলে ভাজা, মশলাদার খাবার ছেড়ে দিয়েছেন। টাটকা শাকসবজি-ফল খাচ্ছেন বেশি করে। কিন্তু শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে শুধু খাওয়া বা শরীরচর্চার দিকে মনোযোগ দিলেই চলবে না। পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে কোন ধরনের পাত্রে খাবার রান্না হচ্ছে। 
বর্তমানে সকলের  সময়ের খুব অভাব। তাই চটজলদি কিছু রেসিপি হাতের কাছে থাকলেও আজকাল মানুষ বেশি ভরসা করছে বাইরের খাবারের উপর। কিন্তু সপ্তাহান্তে যখন আসছে শনিবার এবং রবিবার তখন ভোজনপ্রিয় বাঙালি কিন্তু কব্জি ডুবিয়ে খাচ্ছে মাছ, মাংস প্রভৃতি। আর তেল কম লাগার সুবাদে সেই রান্না করা হচ্ছে ননস্টিকে। এখন যুগের পরিবর্তনে রান্নাঘরে এসেছে আমূল বদল। আধুনিক যুগে বেড়েছে মডিউলার কিচেন কনসেপ্ট। সেই সঙ্গে গত কয়েক বছরে খুব বেড়েছে ননস্টিক পাত্রের ব্যবহার। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, এ পাত্রে খাবার রান্না করলে তেল কম লাগে এবং পাত্রের তলায় খাবার লাগে না। 
কিন্তু গবেষণা বলছে, ননস্টিকের ফ্রাইং প্যান বা কড়াই স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। রান্নায় এ পাত্রগুলো ব্যবহারের ফলে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগও হতে পারে। 
ননস্টিকের পাত্রে থাকে বিষাক্ত কেমিক্যাল।ননস্টিক পাত্রগুলো ‘টেফলন' দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি হলো পলিটেট্রা ফ্লোরোইথিলিনের কোটিং। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টেফলনের সঙ্গে পারফ্লোরো অক্টানয়েট অ্যাসিড পলিমার দিয়ে প্রসেস করা হয়। এটি বিষাক্ত পদার্থ। ফলে অত্যাধিক তাপে ননস্টিকের পাত্রে রান্না করলে কিংবা পাত্রটি খুব গরম হলে ধোঁয়া উঠতে থাকে, যা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে রক্তের সঙ্গে মেশে। এটি স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। এখন অনেক ননস্টিক পাত্রে জেনেক্স ব্যবহৃত হচ্ছে। যে কারণে এখন এগুলোতে লেখা থাকে পিএফওএ ফ্রি। তবে এটিও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। 

 ননস্টিক পাত্র বেশি ব্যবহারের ফলে যে সমস্যা হতে পারে-
৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর বেশি তাপমাত্রায় ননস্টিক পাত্রের টেফলন কোটিং বাষ্পীভূত হয়ে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি করে। রান্নার উপাদান বা খাবারে এ গ্যাস মিশে যায়। এ ধোঁয়া নাকের মধ্যে গেলে শরীরের নানা সমস্যা দেখা দেয়। ঠাণ্ডা লাগা, জ্বর, মাথাব্যথার মতো সাধারণ লক্ষণ দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, টেফলনের অত্যধিক গরম হওয়ার কারণে ফুসফুসের সমস্যা হয়। 
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই ননস্টিক প্যান তৈরী হয় পারফ্লুওরোয়ালকাইল কম্পাউন্ড (পিএফসি) দিয়ে। আর এই যৌগটিকেই ভয়ের মূল কারণ বলে ব্যাখ্যা করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা এই যৌগটিকে ইতিমধ্যেই কার্সিনোজেনিক অর্থাৎ এই  যৌগটি থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা তীব্র বলে চিহ্নিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, শুধু ক্যান্সারই নয় এর সাথে বন্ধ্যাত্ব, থাইরয়েড প্রভৃতি রোগের সৃষ্টিও হয় এই যৌগটির থেকে। এই যৌগটি যে মানুষের পক্ষে ক্ষতিকর তা স্বীকার করেছেন একাধিক ননস্টিক বাসন নির্মাণকারী সংস্থা। তারা জানিয়েছেন, ননস্টিক তৈরিতে এই যৌগটির ব্যবহার প্রায় ১০ বছর হয়ে গেলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ননস্টিক ফ্রাই প্যান থেকে ক্ষতির সাবধানবাণী হাতে কলমে প্রমান করার জন্য গবেষকরা ৩৮৩ জন ছাত্রের উপর একটি পরীক্ষা চালান। দেখা গেছে, এদের মধ্যে ২১২ জন ছাত্রের রক্তে এই যৌগটির উপস্থিতি রয়েছে। দেখা গেছে, পুরুষের জননতন্ত্রের উপর মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করেছে এই যৌগটি। গবেষকরা জানিয়েছেন,  শুধু ননস্টিক প্যানে নয় ফাস্ট ফুড মোড়ার প্লাস্টিকের মধ্যেও এই যৌগটি বর্তমান। তাই জন্য এই যৌগটির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজেকে বাঁচাতে গেলে শুধু ননস্টিক বাসনের ব্যবহার বন্ধ করলেই চলবে না। তার সাথে ফাস্ট ফুড মোড়ার কাগজের ব্যবহারও কমাতে হবে।
তাই যুগের তালে তালে ভেসে না গিয়ে অভ্যেস রাখুন আগের মতোই অর্থাৎ রান্না করুন স্টিলের বাসনে এবং অ্যালুমিনিয়ামের বাসনে। এইসব বাসন থেকে ক্ষতির হার অনেক কম। আর তেল যদি কমই খেতে হয় তাহলে ননস্টিকের বাসনের দরকার নেই, অল্প তেল রান্নায় ঢালুন তাহলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

Journalist Name : SANGITA RANA

Tags:

Related News