সুপ্রিম কোর্ট কী পারছে মানুষের গোপনীয়তা রক্ষা করতে

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় এক যুগান্তকারী নজির গড়েছেন। সাংবাদিক, কর্মী এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর নজরদারির জন্য সরকার বেআইনিভাবে বিতর্কিত পেগাসাস সফটওয়্যার ব্যবহার করেছে কি না, তা নিয়ে একটি স্বাধীন তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা। ‘জাতীয় নিরাপত্তার উদ্বেগ উত্থাপন করে রাষ্ট্র সব সময় পার পেতে পারে না’ বলে আদালত যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী। বিচারপতিরা বলেছেন, নির্বিচার গুপ্তচরবৃত্তির অনুমতি দেওয়া যায় না, যা বাক্‌স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর ভীতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। ২০১৭ সালে দেশের শীর্ষ আদালতে গোপনীয়তা প্রসঙ্গে তাদের রায়ে এই কথাটি বলেছিল,প্রতিটি ব্যক্তি মানুষের কাছে “গোপনীয়তা” একটি মৌলিক অধিকার। দেশের কেন্দ্রীয় সরকারকে তারা এই বিষয়ে আইন বানানোর পরামর্শও দেয়।
আজ বহু মানুষ যে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করছে, তাতে নিজেদের বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য দিচ্ছে, তা কি কোন  ভাবে রাষ্ট্রের কাছে পৌছতে পারে? অবশ্যই পারে। একজন ব্যক্তি মানুষের বিভিন্ন ব্যবহারিক কাজ, তার পছন্দ-অপছন্দ যদি সামাজিক মাধ্যমগুলো জেনে যায়, তাহলে কি সেই পছন্দ-অপছন্দ অনুযায়ী একজন মানুষকে চালনা করা কি খুব বেশি কঠিন? ভারতে বারংবার যখন এই সামাজিক মাধ্যমগুলির সঙ্গে ভারতীয় শাসকদলের যোগসাজশের অভিযোগ নাগরিকদের গোপনীয়তার অধিকার রক্ষার বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ন হয়ে ওঠে না?


বর্তমানে পেগাসাস বলে একটা সাইবার গুপ্তচরের কথা শোনা যাচ্ছে, যা ভারতীয় নাগরিকদের বলে অভিযোগ। সাংবাদিক থেকে মন্ত্রিসভার সদস্য, এমনকি বাদ জাননি প্রাক্তন সিবিয়াই অধিকর্তারাও। বিশেষত মহিলা সমাজকর্মী ও সাংবাদিকের ফোনে আড়িপাতার জন্য ব্যবহার হয়েছিল এই পেগাসাস স্পাইওয়্যার, এই অভিযোগ উঠেছে। দেশের শীর্ষ আদালতে এই নিয়ে মামলা চলছে। এই অবস্থায় আমাদের কাছে “গোপনীয়তা” বা “তথ্য সুরক্ষা” এই শব্দগুলির কি কোন তাৎপর্য আছে? আমরা কি আদৌ চিন্তিত, কিভাবে কারা আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে আমাদেরই তাদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে ব্যবহার করেছ? বিভিন্ন জায়গায়, আমরা যে আমাদের ফোন নাম্বার না চাইতেই দিয়ে থাকি, বিভিন্ন কেনাকাটার সময়ে আমাদের ফোন নাম্বার নেওয়া হয় এবং আমরাও যে আনন্দিত হয়ে তা দিয়েও দিই, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই কি আমাদের গোপনীয়তা প্রথমেই লঙ্ঘিত হয়না? এবং এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই বেশ কিছু বহুজাগতিক সংস্থা এবং রাষ্ট্র আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
আমাদের উপমহাদেশের বিচারব্যবস্থায় আইনকানুন, রীতিনীতি প্রায় অভিন্ন। ভারতের উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত ও রায়গুলো উপমহাদেশের অন্যান্য দেশেও নজির হিসেবে অনুসৃত হয়। তাই আমরা আশান্বিত হতে পারি যে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার অজুহাতের যথেচ্ছ অপব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের আদালতও একই রকম নীতি অনুসরণ করবেন। ফোন হ্যাকিংয়ের প্রসার আমাদের দেশে যে প্রায় শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছেছে, সে কথা বলাই বাহুল্য। ভুক্তভোগীরা সরাসরি আদালতের শরণাপন্ন হলে ভারতের এই দৃষ্টান্ত তাঁদের সহায়ক হতে পারে। যদিও এর আগে কয়েকজন আইনজীবী জনস্বার্থে এ বিষয়ে চেষ্টা করে বেশি দূর এগোতে পারেননি।  
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ অপব্যবহারের কারণে যখন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে এবং টেলিফোন ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমের যোগাযোগে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ঝুঁকি লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে, সেহেতু ঝিনাইদহের এই রায় নিঃসন্দেহে উৎসাহজনক। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সরকারের সমালোচকদের হেনস্তা ও হয়রানির জন্য এই আইন এবং জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পছন্দের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে, তখন আদালত নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবেন, সেটাই তো প্রত্যাশিত।

২০২০ সালের মাঝামাঝি বারাক ওবামা, বিল গেটস সহ বেশ কিছু বড়সড় ব্যক্তিদের টুইটার অ্যাকাউন্টের নাগাল পেয়েছিল এক তরুণ হ্যাকার। সে ক্ষেত্রে এমন কিছু হয়নি বলে জানিয়েছে, কিন্তু তা বললেই তো আর সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাচ্ছে না। বিরোধীরা সঙ্গত ভাবে প্রশ্ন করেছে যে প্রধানমন্ত্রীর অ্যাকাউন্টের সুরক্ষা ভাঙা গেলে, হ্যাকাররা কি সাধারণ মানুষের ডিজিটাল তথ্যের নাগাল পেতে পারে না? এরকম হলে কত বড় বিপদ হতে পারে, সেটা ভাবতেও পারা যাচ্ছে না।এখন আবার বলা হচ্ছে রিজার্ভ ব্যঙ্কের তরফ থেকে ডিজিটাল মুদ্রা আনা হবে। এই প্রক্রিয়া কতটা সুরক্ষিত, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। যে সরকার নিজেদের নাগরিকদেরই বিশ্বাস করে না, যাদের সম্পর্কে ব্যক্তিগত ফোনে নজরদারি চালানোর জন্য পেগাসাসের মতো স্পাইওয়ার প্রোথিত করার অভিযোগ উঠতে পারে, সেই সরকার নাগরিকদের গোপনীয়তার কথা কি আদৌ ভাবে?  

Journalist Name : Aditi sarker

Tags:

Related News