অকারণ হাসি-কান্নার পিছনেই লুকিয়ে ভয়াবহ বিপদ! জেনে নিন বিস্তারিত

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

মধ্যমগ্রামের একজন বয়স্ক শিক্ষক, বয়স প্রায় ষাট ছুঁই ছুঁই করছে; মাঝে মধ্যেই অকারণেই নিজের মনেই হেসে উঠছিলেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল এই হাসি শুরু হলে থামার নামই উঠতো না। পরিবারের প্রায় সকলেই লক্ষ্য করেছিলেন এই বিষয়টি। কি ভাবছেন তো এ আবার কেমন হাসি যা একবার শুরু হলে আর থামার নামই হতো না!
ঠিক এমনি আরো একটি ঘটনা ঘটে বেহালা এলাকায়। একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মীর সাথে। কিন্তু এখানে বিষয়টি একটু আলাদা। জানা গিয়েছে, বছর পাঁচেক আগে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন এই ব্যক্তি, পরে সেরে ওঠার পর থেকেই বেশকিছুটা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। জানা যায়, প্রায় মাঝে মাঝেই অকারণেই কেঁদে উঠছেন তিনি। কি কারণে এরকম করে কাঁদছেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "আমি জানি না আমি কেন কাঁদছি। শুধু কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছিল।"

এই দুই ঘটনার ক্ষেত্রে ২জন ব্যক্তিকেই স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ দেখানো হলে জানা যায়, যে আদতে তারা দুজনেই স্ট্রোকের শিকার। ব্রেন স্ট্রোকের জেরে তাদের পক্ষাঘাত বা কথা জড়িয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা যায় নি, তবে মস্তিস্কের সেই অংশে প্রভাব পড়ছে, যা সম্পূর্ণ আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে। যার ফলে একজন অকারণে হেসে কুল পাচ্ছেন না আর একজন কেঁদে কুল পাচ্ছেন না।
ডাক্তারি ভাষায় এইটিকে বলে "সিউডো বালবার এফেক্ট(পিবিএ)। বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সের (বিআইএন) স্নায়রোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় জানান, কয়েক বছর আগেও সিউডো বালবার পলসি(পি বি পি ) বা সিউডো বালবার এফেক্ট(পিবিএ) তেমন একটা পরিচিত ছিল না। তার কথায়, শীতে স্ট্রোক বেড়ে যায়, রক্তবাহিকা বেড়ে ওঠে আর তার ফলেই বাড়ে এই পিবিএ বা পিবিপি। 
স্নায়রোগ বিশেষজ্ঞ অরিন্দম কর বলেন যে, "পিবিএ বা পিবিপি যাই হোক না কেন তার নেপথ্যে থাকতে পারে স্ট্রোক, মাথায় আঘাত, স্মৃতিভ্রংশ, ব্রেন টিউমার ইত্যাদি নানান কারণ। তার কথায়  পিবিপিতে আবেগের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মুখবয়বের অভিবেক্তিও হারিয়ে যায়। ফলে খাওয়ার চিবোতে এবং তা গিলতে পারে না ব্যক্তি। কিন্তু পিবিএ যে ব্যক্তির আবেগ তার বশে থাকে না তাই সে অকারণেই হাসতে থাকে বা অকারণেই কাঁদতে থাকে। 

এইদিকে প্রবীণ স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ তৃষিত রায় অবশ্য মনে করেন, "আবেগের চেয়ে সচেতনতা বেশ অনেকটাই বেড়েছে। আমার মতে এই অসুখটি বেড়ে যাওয়ার সব থেকে বড় কারণ হল মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়া। বয়স বাড়ার সঙ্গে মস্তিষ্কের আকার বাড়ে আর সাথে রক্ত সঞ্চালন কমে। আর একটি কারণ হল, ডায়াগনোসিস বেড়ে যাওয়া।" তিনি এও বলেন যে, এখন প্রতিটি জেলা সদরের পাশাপাশি, মহকুমা শহরেও সিটি স্ক্যান, এম আর আই প্রভৃতি হয় এবং জেলাস্তরেও ভালো ভালো স্নায়রোগ বিশেষজ্ঞ মেলে. সুতরাং, অসুখটিকে ধরা তেমন কঠিন হয়না।

Journalist Name : Sayantika Biswas

Tags:

Related News