কার্তিক পূজা শুধু বাড়িতেই নয় রীতিমতো শোভাযাত্রা করে পালন হয়,জানেন কী?

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

মহাদেব শিব ও আদি পরাশক্তি পার্বতীর সন্তান হলেন কার্তিকেয় বা কার্তিক। যুদ্ধ বিদ্যায় পারদর্শী কার্তিক হলেন দেবতাদের সেনাপতি। প্রাচীন ভারতে বহুযুগ ধরে সর্বত্রই কার্তিক পূজার প্রচলন ছিল। ভারতীয় এই প্রাচীন দেবতা একাধিক নামে অভিহিত হয়ে থাকেন। যেমন- কৃতিকা সূত, আম্বিকেও, স্কন্দ, শৌরসেন ইত্যাদি।

ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ ভারতের কার্তিক পুজো অধিক জনপ্রিয়। তামিল ও মালায়ালাম ভাষায় কার্তিক মুরুগান বা ময়ূরীর স্বামী, তেলেগু ভাষায় সুব্রহ্মণ্যম নামে পরিচিত। তামিল বিশ্বাস অনুযায়ী বলা হয় মুরুগান তামিল দেশের রক্ষাকর্তা। তাই দক্ষিণ ভারত শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মরিশাস যে সকল স্থানে তামিল জাতি গোষ্ঠীর প্রভাব আছে সেখানে মুরুগান এর প্রচলিত আছে।


তারকাসুর বধ এর জন্য একটি তেজময় শিশুর জন্ম হয়েছিল। শিব ও পার্বতীর আত্ম মিলনের মাধ্যমে অগ্নিপিণ্ড সৃষ্টি হয়। পার্বতী সে সময় ধ্যানমগ্ন ছিলেন। অগ্নিদেব সেই নব তেজময় জ্যোতিপিণ্ড নিয়ে পালিয়ে যান। ধ্যান সমাপ্ত হলে পার্বতীর সে অগ্নিপিণ্ড দেখতে না পেয়ে ভীষণ রেগে যান ফলে অগ্নিদেব সে তাপ সহ্য করতে না পেরে অগ্নিপিণ্ড টি গঙ্গায় ভাসিয়ে দিলেন। গঙ্গায় ভাসতে-ভাসতে সেই অগ্নিপিণ্ড সরবন এ গিয়ে এক সুন্দর শিশুর রূপ ধারণ করেন। কৃতিকা গণ জন্মের পরে তাকে স্তন্যপান করানো ফলে তার নাম হয় কার্তিক। এরপর দেবী পার্বতী তাকে কৈলাসে ফিরিয়ে নিয়ে যান।


পশ্চিমবঙ্গে কার্তিক পুজো নিয়ে এক ছড়া প্রচলিত আছে। "কার্তিক ঠাকুর হ্যাংলা/একবার আসে মায়ের সাথে/একবার আসে একলা।" পশ্চিমবঙ্গে কার্তিক ঠাকুর কে কোন পরাক্রমশালী যুদ্ধে পারদর্শী রূপে পূজা করা হয় না।  বরং এক শিশু সুলভ রূপে কার্তিক পুজো হয়ে থাকে। যেকোনো সৌম্যদর্শন পুরুষকে কার্তিক ঠাকুরের সাথে তুলনা করা হয়। আবার নববিবাহিত দম্পতি সন্তান লাভের আশায় কার্তিক পূজা করে থাকেন। কার্তিক ঠাকুরের সাথে ৬ সংখ্যা জড়িত তাই অনেকে ষষ্ঠী দেবীর সাথে তুলনা করেন শিশুদের রক্ষা কর্তা রূপে। মনে করা হয়, তিনি বাচ্চা বড় না হওয়া অবধি তাদের রক্ষা করেন। তার কৃপাতে ধন-সম্পদ ও সন্তান লাভ হয়। তাই, নববিবাহিত দম্পতির বাড়ির সামনে কার্তিক ঠাকুরের মূর্তি ফেলা হয়। মজা করে তো করা হলো তা এখন প্রায়ই রীতিতে পরিণত হয়েছে। 


পশ্চিমবঙ্গে কাটোয়ার কার্তিক, হালিশহরের জ্যাংরা কার্তিক ও ধুমো কার্তিক খুব বিখ্যাত পুজো। কাটোয়া তে কার্তিক পুজোর শোভাযাত্রা বেরোয় এবং কার কার্তিক আগে যাবে সেই নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে। একে কার্তিক লড়াই বলে। এছাড়াও বর্ধমানের গৌরবাজার গ্রামে পালবাড়ির প্রায় ১৬৬ বছর ধরে চলে আসছে। পাল জমিদাররা তিন ভাই নিঃসন্তান ছিলেন পরে তারা ধুমধাম করে কার্তিক পুজো করেন এবং এক পুত্র ও দুই কন্যা সন্তান লাভ করেন তিন জমিদার ভাই সেই থেকে আজও কার্তিক পুজো হয়ে থাকে পাল জমিদার বাড়িতে।


কার্তিক ঠাকুর কে অবিবাহিত বলে জানলেও তার দুই স্ত্রী আছে। দেবরাজ ইন্দ্রের কন্যা দেবসেনা ও নম্বিরাজের কন্যা বালির সাথে তার বিবাহ হয়। কথিত আছে যে কৈলাস ফেরার পথে এক দেবকন্যা ঊষার সাথে কার্তিকের দেখা হয়। ঊষা কে বিবাহ প্রস্তাব দিলে তিনি রাজি হয়ে যান। কার্তিক তখন ঊষা কে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে কৈলাসের দিকে রওনা দেন। পরে তার মনে পড়ে মায়ের অনুমতি নেওয়া হয়নি। তিনিও সাক্ষী এক ধানক্ষেতে দাঁড়াতে বলে মায়ের অনুমতি নিতে আসে। পার্বতী তাকে অনুমতি দেন। বর বেশে কৈলাস থেকে বেরোবার আগে পার্বতী কে জানাতে গেলে কার্তিক দেখেন যে তার মা রান্না ঘরে বসে গোগ্রাসে খাবার খাচ্ছেন। এমন করে খাবার খাচ্ছে কেন তা জিজ্ঞেস করতে পার্বতী বলেন পুত্রবধূ এসে যদি খেতে না দেয় তাই আগে খেয়ে পেট ভরিয়ে নিচ্ছেন তিনি। মায়ের এমন কথায় কার্তিক লজ্জা পান এবং বিবাহ না করার সিদ্ধান্ত নেন। ঊষা একথা শুনে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ধানক্ষেতে লুকিয়ে পড়েন। 

মনে করা হয় কার্তিক মাসে আমন ধানের শীষ বেরোয় ঐ শিষেই ঊষা লুকিয়ে আছে। তাই কার্তিক পুজো নতুন ধানের শীষ ব্যবহার করার প্রচলন আছে।

Journalist Name : Satarupa Karmakar

Related News