ইনকাম ট্যাক্স এ নিয়ম বদল : সংকটে আমজনতা!

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

 অনেকেই হয়ত ভাবতে পারেন, নিজের খেটে রোজগার করা টাকার থেকে আয়কর আবার কেন দিতে যাবেন সরকারকে! তাহলে জেনে নিন আয়কর ব্যবস্থা উঠে গেলে কী হতে পারে। প্রত্যেক বছর বাজেটে চাকরিজীবীদের সবথেকে বড় আশার জায়গা থাকে আয়করের স্লাব নিয়ে। আয়করের স্লাবে কোনও বদল হচ্ছে কি না, সেই সব দিকে তো নজর অবশ্যই থাকবে. কিন্তু অনেকেই হয়ত ভাবতে পারেন, নিজের খেটে রোজগার করা টাকার থেকে আয়কর আবার কেন দিতে যাবেন সরকারকে! তাহলে জেনে নিন আয়কর ব্যবস্থা উঠে গেলে কী হতে পারে। দেশের মাত্র ১ শতাংশ নাগরিকই আয়কর দেন। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ আর্থিক বছরে সরকারের বিভিন্ন কর থেকে যত টাকা আয় হয়েছিল, তার মধ্যে ২৮শতাংশ উঠেছিল শুধুমাত্র নাগরিকদের আয়কর থেকেই। কিন্তু শুনলে অবাক হবেন, মাত্র এক শতাংশ ভারতীয়ই নিজেদের আয়কর দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ, দেশের মাত্র এক শতাংশ নাগরিকই সরকারের কর থেকে মোট আয়ের এক চতুর্থাংশ দিচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি বিশিষ্ট রাজনীতিক সুব্রমনিয়ান স্বামী বিজনেস টুডেকে জানিয়েছিলেন, এই আয়কর ব্যবস্থাটাকেই তুলে দেওয়া উচিত। তাঁর মতে, ভারতের ৫ ট্রিলিয়ন অর্থনীতির দেশ হতে গেলে আর্থিক উন্নতির গতি থাকতে হবে ১৪.৮শতাংশ। আর এটা সম্ভব হবে একমাত্র আয়কর ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে উঠে গেলে। গত আর্থিক বছরে আয়কর জমা পড়েছে ৪.৭১ লাখ কোটি টাকা ভারতীয় কর ব্যবস্থায় মূলত দুটি ভাগ রয়েছে। ‘ডিরেক্ট’ কর এবং ‘ইনডিরেক্ট’ কর। ডিরেক্ট অর্থাৎ সরাসরি যে করগুলি দেওয়া হয়-যেমন আয়কর, কর্পোরেশন কর, সম্পত্তি কর ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট করদাতা সরাসরি সরকারকে কর দিচ্ছে। এখানে কোনও তৃতীয় কিছু থাকে না।

অন্যদিকে জিএসটি বা পণ্য ও পরিষেবা কর, কাস্টমস কর, আবগারি শুল্ক ইত্যাদি হল ইনডিরেক্ট বা পরোক্ষ কর। সম্প্রতি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী, গত আর্থিক বছরে প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে কেবল কর্পোরেট এবং ব্যক্তিগত করের থেকে আয় করেছিল বিশাল অঙ্কের টাকা। একদিকে কর্পোরেট করের মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্থাগুলি সরকারি কোষাগারে ৪.৫৭লাখ কোটি টাকা জমা করেছিল। অন্যদিকে আয়কর বা ব্যক্তিগত কর থেকে সরকারের কাছে জমা পড়েছিল ৪.৭১লাখ কোটি টাকা। এমনকী ২০২০ সালে প্যানডেমিক পরিস্থিতির মধ্যেও প্রত্যক্ষ করের গ্রাফ ছিল ঊর্ধ্বমুখী। আয়কর বন্ধ করার হিসেব এতটাও সহজ নয় কিন্তু, দেশের পিছিয়ে পড়া নাগরিকরা, যাঁরা আর্থিকভাবে তুলনামূলকভাবে পিছনের সারিতে – তাঁদের দেখভালের দায়িত্বও সরকারের। এ ক্ষেত্রে সরকারের থেকে অনেক জনহিতকর প্রকল্প করা হয়, তাঁদের কথা মাথায় রেখে। যেমন, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প ও ভাতা। গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে শুরু করে ট্রেনের টিকিট, বিদ্যুতের মাশুল থেকে শুরু করে বিনামূল্যে রেশন – এমন অনেক প্রকল্প রয়েছে। আর এই প্রকল্পগুলির উপর ভরসা করেই দেশের একটি বড় অংশের মানুষ আজও নিজেদের দু’বেলা খেতে পান। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক রিপোর্ট বলছে, ভারতে এখনও ২২ কোটিরও বেশি মানুষের দৈনিক আয় ৩২ টাকা। আর এখানেই এই প্রকল্পগুলির গুরত্ব। এখন যদি আয়কর বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে তার সরাসরি প্রভাব গিয়ে পড়বে এই প্রকল্পগুলির উপর। বিশ্বের যে দেশগুলিতে আয়কর বন্ধ বা নামমাত্র আয়কর রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিশ্বের প্রেক্ষিতে দেখলে, আয়করের ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত অনেক দেশই নিয়েছে। অনেক দেশেই আয়কর পুরোপুরি উঠিয়ে দিয়েছে বা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে একটু ভাল করে নজর দিলেই বোঝা যায়, সেই সব দেশগুলিতে হয় আয়কর ছাড়া অন্যান্য করগুলি অনেকটা বেশি বা ওই দেশগুলির আয়ের অন্য কোনও উৎস রয়েছে। যেমন সংযুক্ত আরব আমিরশাহী বা কুয়েত –পেট্রোলিয়াম রফতানি করেই সরকার চালানোর টাকা তুলে নেয়। আবার সিঙ্গাপুরের মতো দেশে, সেখানে উন্নয়ন এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে সেখানে সরকারকে কোনও ভাতা চালু রাখার দরকার পড়ছে না। সেই কারণে, ওখানে আয়কর অনেকটা কম থাকলেও সমস্যা হয় না। আবার অন্যদিকে বাহামাস বা বেলিজ়ের মতো ছোট দেশগুলি পর্যটন দ্বারা সমৃদ্ধ। পাশাপাশি এই দুই দেশের জনসংখ্যাও অনেকটা কম। আবার আমেরিকায় আয়কর কম, তবে সেখানে সামাজিক সুরক্ষা কর এবং অন্য়ান্য সুবিধার জন্য কর নেওয়া হয়ে থাকে, যা অনেকটাই বেশি।

Journalist Name : Debopriya Banerjee

Tags:

Related News