" ইস্টবেঙ্গল ভাঙতে পারে, হারতে পারে কিন্তু মরার আগে মরে না,কইমাছের জান"

banner

#pravati sangbad Digital desk:

"এই লোটা তোর দেশ কী? উদবাস্তু"
"এটাই আমার দেশ, আমার ভারতবর্ষ..."
বিশ্বের ইতিহাস বলে শাসক কিংবা অভিজাতের মুঠি যত শক্ত হয়, তত সে মুঠির ভেতর কাঁটা হয়ে ওঠে বিক্ষোভ, বিদ্রোহ। যে ক্লাবের জন্মই হল দ্রোহ থেকে তার ইতিহাসে দেশের সীমানা কবেই বা শাসক নির্ধারিত হতে পারে? জন্মের মাত্র ১৯ বছরের মধ্যে দলটা আই এফ এ-তে মোহনবাগানের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে ফেডারেশন ত্যাগ করে বিকল্প কমিটি বেঙ্গল ফুটবল আসোসিয়েশন গড়ে তোলে। বনেদি বাবুদের স্নেহ থাকার পরেও স্রেফ লড়াই আর জেদের জোরে ব্রিটিশ কর্তা নিকলস সাহেব পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং সসম্মানে সেই আই এফ এ-তেই ফিরিয়ে আনতে হয় ইস্টবেঙ্গলকে, সেই দলটার রক্তে লড়াই শব্দটা গেঁথে দিয়েছিলেন সূর্য চক্কোত্তি,হারাণ সাহারা। জন্মের পর থেকে ইস্টবেঙ্গলের শক্তি হল সমর্থকরা, মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় ইস্টবেঙ্গলের যে জনপ্রিয়তা তৈরী হল খাস কলকাতায় তা মেনে নেওয়া কঠিন ছিল অভিজাত ক্লাবগুলির। কিন্তু যে বারুদ একবার আগুনের ছোঁয়া পায় তাকে কি রোখা যায়? 
গেল ও না। দেশভাগের পর অসহায় সর্বহারা মানুষ দলে দলে এসে ভিড় জমালো কলকাতায়, ছড়িয়ে পড়ল বাংলার কোনায় কোনায় অসংখ্য রিফিউজি কলোনিতে। নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে এসেও তারা তখন উদবাস্তু। দেশ কোনো সীমানা নয়। দেশ একটা চেতনা। গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠা অনুভূতি যা ভূগোল মানে না। মানল না।  অন্ধকার জীবনের পরতে পরতে একটা লড়াই করার রং দরকার ছিল তাদের। সেই রং হয়ে উঠল লালহলুদ। রক্তাক্ত ইতিহাস পরোক্ষভাবে মিশল লালহলুদের গায়ে, সেই আঘাত কালে কালে হয়ে উঠল অলংকার। যত অপমান, আঘাত পেয়েছে এই দলটা তত চোয়াল শক্ত করে নেমেছে লড়াই-এর ময়দানে। হেরে গেছে, ভেঙে পড়েছে কিন্তু ফিনিক্সের মতো উঠে দাঁড়িয়েছে আবার...

ইস্টবেঙ্গল লড়াই করেছে। নিরন্তর লড়াই। জন্মের পর থেকে অস্তিত্বের লড়াই, তারপর শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। আর এই লড়াই তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে একটার পর একটা সম্মান। ১৯৫১ সালে ব্রিটিশ ফেডারেশন এফ এ যে ক্লাবটাকে দ্যা বেস্ট ক্লাব অফ ইন্ডিয়া বলে তাঁদের অ্যালমানাক এ উল্লেখ করে তার নাম ইস্টবেঙ্গল, ১৯৫৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন,রোমানিয়া ফুটবল ফেস্টে এশিয়ার একমাত্র ক্লাব হিসেবে যে দলটি ডাক পেয়েছিল তার নাম ইস্টবেঙ্গল, ১৯৭০ সালে স্বাধীনতার পর প্রথম বিদেশী ক্লাব ইরাণের পাস-কে হারিয়েছিল যে দল তার নাম ইস্টবেঙ্গল  ১৯৭২ আর ১৯৯১ সালে যে দলটা একটিও গোল না খেয়ে লীগ জিতেছিল তার নাম ইস্টবেঙ্গল,এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ টুর্নামেন্ট এ এফ সি কাপে ভারতের যে দলটি সর্বাধিক ৮১ম্যাচ খেলে আজও এক নম্বরে তার নাম ইস্টবেঙ্গল, অমল দত্তের ডায়মন্ডের বিরুদ্ধে যে দলটা ডায়মন্ডকাটার সাজিয়ে দেয় তার নাম ইস্টবেঙ্গল, প্রতিপক্ষের ঘরের মাঠে গিয়ে যে দলটা সর্বাধিক ব্যবধানে বড়ম্যাচ জেতে তার নাম ইস্টবেঙ্গল, এক মরশুমে ১১১ গোল করে ৭০ বছর পরেও অটুট রেকর্ডধারী দলটার নাম ইস্টবেঙ্গল, জ্যোতিষ গুহ থেকে পল্টু দাশ অবধি ময়দান মাতানো মস্তিষ্কের নাম ইস্টবেঙ্গল, প্রতিটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে বেপরোয়া ঔদ্ধত্য দেখানোর নাম ইস্টবেঙ্গল, .হাজারে হাজারে ভেঙে পড়া মানুষের বুকে উঠে দাঁড়ানোর প্রাণমন্ত্রের নাম ইস্টবেঙ্গল।
একশো বছরের বৃত্ত জুড়ছে ইতিহাসের পাতা, সে ইতিহাসে আভিজাত্যের অস্তিত্ব থাকুক কিংবা না থাকুক আছে পিছিয়ে পড়ে ফিরে আসার লড়াই, একবার নয়, বারে বারে। বিপ্লবের ইতিহাসও তো তেমনই, তাই না? 
মোহনবাগানের অঞ্জন মিত্র বলতেন - "ময়দানে কোনোকিছুই স্ট্যাটিক না"৷ আর ময়দানী মিথ বলে- " ইস্টবেঙ্গল ভাঙতে পারে, হারতে পারে কিন্তু মরার আগে মরে না,কইমাছের জান..."
আর একশোবছর পরেও সবচেয়ে বড় সত্যিটা বোধ হয় বিশুদাই বলে গিয়েছিলেন-
" ইস্টবেঙ্গল কাঁপে না, কাঁপায়..."

Journalist Name : Avijit Das

Related News