শাসক দলের কাউন্সিলর হয়েও সবজি বিক্রি করেই সংসার চালাছেন...!

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

ভোর হলেই একজন কাউন্সিলর গলায় গামছা জড়িয়ে এলাকার বাজারে বসে যান সবজির পসরা সাজিয়ে। তবে সকালবেলার বিক্রি শেষে খুচরা ব্যবসায়ী থেকে তিনি আবার জনপ্রতিনিধির ভূমিকা নেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এই নেতার নাম শিপুল সাহা এবং তার বাড়ি পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে। তিনি ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর।
জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর অনেকেরই যখন সম্পত্তি বেড়েছে চোখ টাটানোর মতো, জীবনযাপনের ধারাটা বদলে গিয়েছে পুরোপুরি, তখন শিপুল যেন অন্য ধারা তৈরি করছেন। শিপুল বলেন, 'সবজি বিক্রি আমার পেশা। পেশাকে কখনও ছোট করে দেখি না। আগামিদিনে সবজিই বিক্রি করব।'
আগে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাবড়ার বাসিন্দা ছিলেন শিপুল। তার বাবা জহর সাহা ডালমিলের শ্রমিক ছিলেন। তার বাবা ৮ বছর বয়স থেকে হাওড়া রেল স্টেশনে শশা বিক্রি করতেন। রুটিরুজির টানে তিনি দুর্গাপুর আসেন ১৯৮২ সালে। তার দুই বছর পর সপরিবারে শিপুলরাও দুর্গাপুরে আসেন। স্টেশন চত্বরে ফুটপাতে ফল বিক্রি করতেন শিপুলের বাবা। থাকতেন শ্রমিকনগরে একটি ভাড়াবাড়িতে। কোনো রকমে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করেন শিপুল। সেটাও খুচরা ব্যবসা করতে করতেই।
শিপুল বলেন, 'আমার নিজস্ব বাড়ি নেই। স্ত্রী, দুই সন্তান এবং বাবা আমার শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। মেয়ে বারাসাতের একটি কলেজে মনস্তত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করছে। ছেলে স্কুলে পড়ে।' শিপুলের কথায়, 'ছোট থেকে ব্যবসা করেছি। এখনও ভোররাতে ঘুম থেকে উঠি। সবজি নিয়ে চলে যাই বাজারে। সকাল থেকে ১০টা পর্যন্ত বিক্রি করি বাড়ি এসে গোসল সারি, পূজা করি, খাওয়াদাওয়া করে চলে যাই দলীয় কার্যালয়ে। ১টা পর্যন্ত সেখানে থাকার পর যাই পুরসভায়। আবার বিকেলে ব্যবসা করি। সন্ধ্যা ৭টার পর দলীয় কার্যালয়ে চলে যাই। তার মধ্যে সময় করে এলাকা ঘুরে মানুষের সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনি।'
গত পাঁচ বছর ধরে কাউন্সিলর পদে আছেন শিপুল। তিনি বলেন, 'এলাকাবাসীকে সেরা পরিষেবা দিতে সবরকম চেষ্টা করেছি। তবে শতভাগ কাজ করে উঠতে পারিনি। সামনের ভোটে দল টিকিট দিলে আবার লড়ব। কাউন্সিলর হলে এলাকার অসমাপ্ত কাজ শেষ করব।'
শিপুল জানান, 'শ্রমিক নগর স্পোর্টিং ক্লাবের সদস্য হয়ে সামাজিক কার্যকলাপ করতাম। ১৯৯২ সালে রাজনৈতিক জীবন শুরু করি কংগ্রেসে। ১৯৯৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল তৈরি করার পর থেকেই তার সঙ্গে আছি।'
২০১৭ সালে প্রথম ভোটে লড়েছিলেন শিপুল, ১৩০০ ভোটে জয়ী হয়ে কাউন্সিলর হন তিনি। সবজি দোকানি-কাউন্সিলরের কথায়, 'প্রথমে কাউন্সিলর হিসেবে ৬,৭০০ টাকা মাসিক ভাতা পেতাম। কয়েক বছর ধরে ৯,৮০০ টাকা ভাতা পাই। সবজি বিক্রি না করলে তো সংসার চলবে না। ছেলেমেয়ের পড়াশোনাও হবে না। তাই সকালবেলা রুটিরুজি জুটিয়ে তার পরে জনপ্রতিনিধি হয়ে মানুষের কাজ করি।'

Journalist Name : Suchorita Bhuniya

Related News