Flash news
    No Flash News Today..!!
Tuesday, April 30, 2024

ফুটবলের যাদুকরঃ পেলে

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

(ষষ্ঠ পর্ব)
বিশ্ব ফুটবলে ছোট- বড় সব ফুটবলারেরই লক্ষ্য থাকে প্রতি ৪ বছর অন্তর হওয়া ফিফা আয়োজিত বিশ্বকাপের দিকে। ৬.১৭ কেজির ঐ খেতাব অর্জন খুব কম সংখ্যক প্লেয়ারের ভাগ্যেই লেখা থাকে। বহু খেলোয়াড় তাঁর গোটা ফুটবল ক্যরিয়ারে ঐ খেতাব অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। তবে এমন কিছু খেলোয়াড় আছেন যারা একাধিকবার বিশ্বকাপ খেতাব জয় করেছেন। সেই বিরল কীর্তির অংশীদার বেশ কয়েকজন ফুটবলার, তবে তাদের মধ্যে মাত্র একজন ছাড়া অন্যান্য সবাই ২টি করে বিশ্বকাপ জিতেছেন। দেশের হয়ে খেলে একমাত্র এডসন অ্যারান্তেস দো নাসিমেন্তো ৩ বার ফুটবল বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ উপভোগ করছেন। কি বুঝতে পারছেন না কার নাম বলছি, চলুন তাহলে জানা যাক কে এই মহান খেলোয়াড়।
ফ্লুমিনেন্স ফুটবলার ডণ্ডিনহো-র বড় ছেলে এডসন  তাঁর নিজের রাজ্য সাও পাওলো-র বাউরুতে ফুটসল অথবা ইনডোর ফুটবলে রেডিয়াম নামক একটি দলের হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন।  তাঁর পরিবার তাকে 'ডিকো' নামে ডাকলেও তাঁর স্থানীয় দল ভাস্কো দা গামার গোলরক্ষক এবং তাঁর প্রিয় খেলোয়াড় বিলের নামে মিল রেখে তাকে নাম দেওয়া হয় 'পেলে'। যে নামে পরবর্তিকালে সে বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে পেলে ফুটসলে প্রাপ্ত বয়স্ক প্লেয়ারদের সঙ্গে খেলেন এবং ১৫ গোল করে সেই মরসুমের শীর্ষ স্কোরার হন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি  করিন্থিয়ানস দলে যোগ দেন, এবং প্রথম  ম্যাচেই গোল এর সাথে চিত্তাকর্ষক পারফর্মেন্স করেন এবং সেই ম্যাচে দল ৭-১ গোলে জয়লাভ করেন। পরের মরসুমে তিনি দলের হয়ে সর্বোচ্চো গোলদাতা হন। এরপরে পেলেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদের মত ইউরোপীয়ান জায়েন্ট দলে টানতে চাইলেও স্যান্তোস দলের সমর্থকদের প্রতিবাদের কারণে দলে থেকে যেতে পেলে একপ্রকার বাধ্য হন। এর কিছুদিন পরে ব্রাজিল সরকার পেলেকে 'সরকারি জাতীয় ধন' ঘোষণা করেন। ১৯৫৮ সালে স্যান্তোসের সাথে প্রথম ক্যাম্পেওনাতো পাউলিস্তা জেতার একই বছরে তাকা ব্রাসিল খেতাব জয় করেন। এই খেতাব জয়ের পর পেলে কোপা লিবার্তাদোরেস খেলার সুযোগ পান যেখানে তাঁর অসামান্য নৈপুণ্যের জোরে স্যান্তোস খেতাব জয় করতে সক্ষম হয় এবং পেলে সর্বোচ্চো গোলদাতার সন্মান পান। এরপর ১৯৬২ সালে বেনিফিকা কে হারিয়ে পেলে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ জয় করেন। এরপর ১৯৬৩ সালে  ফের একবার  কোপা লিবার্তাদোরেস জয় করেন। ১৯৬৯ সালে নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধে জড়িত দুটি দল ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে  সন্মত হয়েছিলো শুধুমাত্র পেলের খেলা দেখবার জন্য। স্যান্তোসের হয়ে পেলে  ৬৪৩ গোল করেছেন যা ঐ ক্লাবের সর্বকালীন সর্বোচ্চো। এরপর পেলে কসমস দলে যোগ দেন এবং সেখানেই ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতি টানেন। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তিনি ১৯৫৮ সালে প্রথম ব্রাজিল দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলেন। সেই বিশ্বকাপে পেলে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়ের তকমা পান। সেমি-ফাইনালে  পেলে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে হ্যাট্রিক করেন। এরপরে ২৯শে জুন ১৯৫৮ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেন পেলে। সেই ম্যাচে পেলের দুটি গোল সহ ব্রাজিল ৫-২ গোলে সুইডেনকে হারায়, এবং পেলে প্রথম বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ পায়। ১৯৬২ -এর বিশ্বকাপে পেলে ছিলেন সেরা রেটেড খেলোয়াড়। গোটা প্রতিযোগিতাতে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে পেলে এবং গ্যারিঞ্চা সমৃদ্ধ ব্রাজিল ফাইনালে চেকোস্লভাকিয়া-কে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয় করেন। ১৯৬৬ বিশ্বকাপ পেলে খেললেও ব্রাজিল দল রেফারির বদান্যতায় গ্রুপ লিগ থেকে বিদায় নেয়। সেই বিশ্বকাপের পর পেলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আর কোনদিন বিশ্বকাপ খেলবেন না , তবে পরবর্তিতে সেই সিদ্ধান্ত বদলান। ১৯৭০ বিশ্বকাপে পেলে তার দলে গেরসন, তোস্তার মতন বেশ কয়েকজন ফুটবলার পেয়েছিলেন যাদের সাহায্যে পেলে বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছান। ইতালির বিরুদ্ধে হওয়া সেই ফাইনালে পেলে ৪-১ গোলে জিতে ব্রাজিলকে  খেতাব এনে দেন এবং নিজের তৃতীয় বিশ্বকাপ জয় করেন। পেলের ব্রাজিলের হয়ে শেষ ম্যাচ ছিল ১৯৭১ সালের ১৪ই জুলাই যুগোস্লভিয়ার বিরুদ্ধে। ৬৭ ম্যাচ খেলে পেল মাত্র ১৪টি ড্র এবং ১১টি পরাজয়ের সন্মুখিন হন। ক্লাব এবং জাতীয় দল  মিলিয়ে পেলে ৬৫৫ ম্যাচে ৭০০টি গোল করেছেন। 
পেলে ছিলেন ফুটবলের জাদুকর। তার অসাধারণ ফুটবল নৈপুণ্যতা এবং খেলার ধরণ আজও দর্শকেরা দেখতে পছন্দ করেন। তিনি ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় যিনি ৩টি বিশ্বকাপ জয় করেছেন। ব্রাজিল দলের আরেক মহারথী গ্যারিঞ্চা এবং পেলে একসাথে ব্রাজিল দলের হয়ে খেলে  একটি ম্যাচও হারেননি। তিনি বিশ্ব ফুটবলে এক জীবন্ত কিংবদন্তী।

Journalist Name : Tamoghna Mukherjee

Tags:

Related News