তামিলনাড়ুতে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার
মুখে পড়লেন সিডিএস বিপিন রাওয়াত। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী মধুলিকা রাওয়াত সহ সেনার
একাধিক উচ্চপদস্থ কর্তারা।
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ১৪ জনের
মধ্যে একমাত্র জীবিত, গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিং-এর অবস্থা আশঙ্কাজনক
দেশের প্রতিরক্ষায় এক অপূরণীয়
ক্ষতি। বুধবার দুপুরে মাঝ আকাশেই ভেঙে পড়ল ভারতীয় সেনার এমআই-১৭ হেলিকপ্টার। হেলিকপ্টারে
ছিলেন দেশের প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত, তাঁর স্ত্রী সহ মোট ১৪ জন। রাওয়াতের
স্ত্রী দুর্ঘটনাস্থলের প্রাণ হারান। গুরুতর জখম রাওয়াতকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও
শেষরক্ষা হয়নি। হাসপাতালেই মৃত্যু হয় দেশের প্রথম প্রতিরক্ষা প্রধানের। প্রাণ হারিয়েছেন
আরও ১১ জন। আর এরই মধ্যে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে।
কুন্নুরের কাছে সেনাবাহিনীর
কপ্টার দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত জীবিত সদস্য হলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিং। পুড়ে যাওয়া
ক্ষত নিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁর চিকিৎসা চলছে ওয়েলিংটনের সেনা হাসপাতালে। এদিন হেলিকপ্টার
দুর্ঘটনায় দেশের প্রথম সিডিএস বিপিন রাওয়াত তাঁর স্ত্রী এবং আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়।
বুধবারের দুর্ঘটনায় সমাজসেবী মধুলিকার চলে যাওয়াও বহু নারীর কাছেই প্রিয়জন বিয়োগের
সমতুল্য। চার প্রজন্ম ধরে ভারতীয় সেনার হয়ে কাজ করে চলেছে রাওয়াত পরিবার। সেই ঘরানা
যেন বজায় ছিল মধুলিকার কাজেও। স্বামী যখন দেশের একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে নেতৃত্ব
দিচ্ছেন, তখন একদা মনস্তত্ত্বে স্নাতক মধুলিকাও সমাজের কল্যাণেই নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন।
যদিও তাঁর কাজের ঘরানা ছিল আলাদা। তবু দেশ ও সেনার স্বার্থেই আজীবন কাজ করে গিয়েছেন
তিনি।
বুধবার বেলা ১২.২০ নাগাদ তামিলনাড়ুর
কুন্নুরে ভেঙে পড়ে ভারতীয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টার। তাতেই ছিলেন CDS বিপিন রাওয়াত তাঁর
স্ত্রী সহ আরও ১৪ জন। ভেঙে পড়ার পরই হেলিকপ্টারটি আগুন ধরে যায়। সেই দুর্ঘটনাতে মৃত্যু
হয়েছে CDS বিপিন রাওয়াত। শুধু রাওয়াত নয় তাঁর স্ত্রী সহ বাকি ১৪ জনেরও মৃত্যু হয়েছে।
প্রয়াত প্রতিরক্ষা প্রধান
বিপিন রাওয়াত যে হেলিকপ্টারটিতে ছিলেন, সেটি এমআই-১৭। এমআই সিরিজ়ের সর্বাধুনিক হেলিকপ্টার
হল এই এমআই-১৭-ভি-৫। রাশিয়া থেকে যে কপ্টারগুলি ভারত পেয়েছে, তার মধ্যে সর্বাধুনিক
হল এই ভি-৫ মডেল। সাধারণত এই ধরনের হেলিকপ্টারগুলিতে ডবল ইঞ্জিন থাকে। অর্থাৎ, যদি
ছোটখাটো কোনও যান্ত্রিক গোলযোগ হয়, বা যদি একটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়, তাহলে তা সামাল
দেওয়ার জন্য বিকল্প একটি ইঞ্জিন থাকে। সেই কারণে শুধু প্রতিরক্ষা প্রধানই নন, আরও যাঁরা
শীর্ষ আধিকারিক রয়েছেন… এমনকী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মতো ভিভিআইপিরা এই
ধরনের চপার ব্যবহার করে থাকেন। এই হেলিকপ্টারগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই ভাল।
যান্ত্রিক গোলযোগ যে কোনও
সময়েই হতে পারে। কিন্তু তারপরেও বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর অধরা থেকে যাচ্ছে। সেনা আধিকারিকদের
একটি অংশ মনে করছেন, দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ হয়ে থাকতে পারে দৃশ্যমানতার অভাব। কারণ
দৃশ্যমানতা কম হয়ে গেলে, তা হেলিকপ্টার পাইলটের কাছে এক বীভিষিকার সমান। আর আজ নীলগিরির
যে অংশের উপর দিয়ে আজ এই হেলিকপ্টারটি যাচ্ছিল, সেই এলাকায় দৃশ্যমানতা অনেকটাই কম থাকে।
তার উপর বিগত কয়েকদিন ধরেই আবহাওয়া খারাপ ছিল। সেই জায়গা থেকে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে
পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিপিন রাওয়াতের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।”এই অপূরণীয় ক্ষতিতে গোটা দেশ শোকগ্রস্ত। তিনি
যে সাহসিকতা এবং একাগ্রতার সঙ্গে দেশের সেবা করেছেন, তা মনে রাখা হবে।”
সেনা সর্বাধিনায়কের মৃত্যুর পরই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত ক্যাবিনেট কমিটির বৈঠক। উপস্থিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল।