গতমাসে টি-২০ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডরে কাছে পরাজিত হয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছিল ভারতের, ঠিক তার পরেই ২১ নভেম্বর ইডেনে হারের বদলা নেই অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ২৫শে নভেম্বর থেকে কানপুরের গ্রিনপার্ক ময়দানে শুরু হওয়া ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড টেস্ট সিরিজের অবসান ঘটলো আজ মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। প্রথম পর্বের শেষে অর্থাৎ ২৯শে নভেম্বর ভারত জয় না পেলেও ড্র হয়ে যায় ম্যাচ তবে দ্বিতীয় পর্বে ৩৭২ রানে জয় লাভ করে ভারত, এর মধ্য দিয়ে ২ টেস্ট ম্যাচের সিরিজ জয় ১-০ ব্যবধানে। মুম্বাই টেস্টে জয়ের জন্য ভারত নিউজিল্যান্ডের সামনে ৫৪০ রানের লক্ষ্য রেখেছিল, যার কারণে নিউজিল্যান্ড কাটিয়ে উঠতে পারেনি এবং ১৬৭ রান করে অল আউট হয়ে যায়।এই শোচনীয় পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ভারতে সিরিজ জয়ের অপেক্ষাও বেড়ে গেল নিউজিল্যান্ডের। একইসঙ্গে গত ৩৩ বছরে ভারতে টেস্ট ম্যাচ জেতার স্বপ্নও ভেঙ্গে যায় তাদের। এই টেস্ট সিরিজটি ছিল বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় সংস্করণে এটাই ছিল ভারতের প্রথম হোম সিরিজ। ইংল্যান্ড সফর দিয়ে এই সংস্করণ শুরু করে তারা।
১৯৫৬ সাল থেকে এটি ছিল নিউজিল্যান্ডের ১২তম ভারত সফর। এই সফর সহ, তারা ভারতে ৩৭টি টেস্ট খেলেছে, যার মধ্যে কিউই দল মাত্র দুটি টেস্ট জিততে সক্ষম হয়েছে। ভারতে তার রেকর্ড কতটা খারাপ তা এ থেকেই বোঝা যায়। নিউজিল্যান্ড সর্বশেষ ১৯৮৮ সালে তাদের ঘরের মাঠে টিম ইন্ডিয়াকে হারিয়েছিল। নিউজিল্যান্ড ভারতে কখনও টেস্ট সিরিজ জিততে পারেনি। আর, গত ৬৫ বছরের এই অপেক্ষা এবারও অব্যাহত রয়েছে।
প্রত্যাশা মতোই চতুর্থ দিনেই ম্যাচ পকেটে পুরলো ভারত। দুর্দান্ত ক্রিকেট উপহার দিয়েছে গোটা ভারতীয় দল। কানপুরে প্রথম টেস্টে মরিয়া লড়াই করে ভারতকে জয় পেতে দেয়নি নিউজিল্যান্ড।কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে চেষ্টা করেও তাদের জয় আটকাতে পারলো না কিউয়ি দল। ৩৭২ রানের বড় ব্যবধানে ম্যাচ জিতে নিলেন বিরাট কোহলিরা।
চতুর্থ দিন লাঞ্চের আগেই ম্যাচ শেষ করে দেন ভারতীয় বোলাররা। হেনরি নিকোলস এবং রচিন রাবীন্দ্র-রা একটু প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও তা কাজে লাগেনি। তৃতীয় দিনে কিউয়ি ব্যাটিং লাইন আপের কোমর ভেঙেছিলেন অশ্বিন। এদিন লোয়ার অর্ডার-কে সাফ করলেন জয়ন্ত যাদব। অশ্বিন এবং জয়ন্ত দুজনেই নেন মোট চারটি উইকেট।
সিরিজটি মাত্র দুই ম্যাচের জন্য হলেও স্মরণীয় হয়ে রইলো নানান কারণে। প্রথম ম্যাচে কিউয়িদের মারাত্মক লড়াই, শ্রেয়স আইয়ারের অভিষেকে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, ফুরিয়ে আসা ঋদ্ধিমানের দুরন্ত ব্যাটিং, শ্রীকর ভরতের কিপিং, রাচিন রবীন্দ্র এবং এজাজ প্যাটেলের দুরন্ত লড়াই সবমিলিয়ে কানপুর টেস্ট হয়ে রইলো স্মরণীয়।
ভারত প্রথম ইনিংসে ৩২৫ রান করেছিল। জবাবে নিউজিল্যান্ডের দল প্রথম ইনিংসে ৬২ রানে গুটিয়ে যায়। এর পরে, ভারত ৭ উইকেটে ২৭৬ রানে তাদের দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে এবং নিউজিল্যান্ডকে জয়ের জন্য ৫৪০ রানের লক্ষ্য দেয়। কিন্তু ওয়াংখেড়ে পিচে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসও ছিল হতাশাজনক। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১৪০ রান। চতুর্থ দিনে এই স্কোরে এগিয়ে থেকে খেলা শুরু করে নিউজিল্যান্ড। কিন্তু মাত্র ৪৫ মিনিটে বাকি ৫ ব্যাটসম্যানও প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলে ম্যাচ ভারতের ঝুলিতে পড়ে। এইভাবে টিম ইন্ডিয়া শুধু এই ম্যাচই দখল করেনি, সিরিজও দখল করেছে। রানের নিরিখে এটাই ভারতের সবচেয়ে বড় জয়।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে টেস্ট আরও নানান কারণে গুরুত্ব বহন করবে। এজাজ প্যাটেলের ১০ উইকেট নিয়ে কুম্বলে এবং লেকার-কে ছোঁয়া, অশ্বিন কর্তৃক রিচার্ড হ্যাডলির রেকর্ড ভেঙে দেওয়া, ময়ঙ্কের ১৫০, ভারতের দুরন্ত ভাবে সিরিজ জয় সব মিলিয়ে মুম্বাই টেস্টও থেকে যাবে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনের মণিকোঠায়।