Flash news
    No Flash News Today..!!
Tuesday, May 14, 2024

"মানুষের জন্যই তো আমরা,আমাদের জন্য তো মানুষ নয়"-সব্যসাচী চক্রবর্তী, বিজেপি প্রার্থী, টালা-পাইকপাড়া

banner

#Kolkata:

এইবারের কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের কাশিপুর বেলগাছিয়া এসেম্বলির ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিজেপির হয়ে পুর ভোটে প্রার্থী সব্যসাচী চক্রবর্তী, উনি ওনার জয়ের লক্ষ্যে আত্মবিশ্বাসী এবং জনগণের ওপর বিশ্বাস রাখছেন। ভোটের প্রস্তুতি লগ্নের শেষে এসে ব্যস্ততার মধ্যেও তাঁর থেকে কিছুটা সময় পাওয়া গেল, বারবার তার মুখে ভোটে জয়ের পর জনগণের কল্যাণের কথাই উঠে এলো। ওনার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছে সিটি কলেজ থেকে, এক দাদার হাত ধরেই ছাত্র পরিষদের মাধ্যমে তাঁর প্রথম রাজনীতিতেই আসা , কিন্তু পরিণত বয়সে রাজনীতিতে আসা রাহুল সিনহার হাত ধরে ২০১৮ সালে বিজেপিতে।

নীতি আদর্শের কারণেই তার দল পরিবর্তনের ভাবনা, তাঁর বক্তব্য বিরোধী রাজনীতি দেখে তিনি অভ্যস্ত তাই তিনি জানতেন তার দল পরিবর্তনের কারণে তার ওপরে অনেক রকমের ঘাত-প্রতিঘাত আসতে পারে, কিন্তু তার পরও তিনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন নীতি আদর্শকে। তিনি বলেন বিজেপি দল হিসেবে অন্যান্য দলগুলোর থেকে এক সম্পূর্ণভাবে ভিন্ন, এই দল শুধুমাত্র আঞ্চলিকভাবেই ভাবে না এই দল সমগ্র দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবে এবং মোদিজি কে দেখে আমি এই দলে আসার অনুপ্রেরণা পেয়েছি।

যখন সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে তখন তিনি খুব বুদ্ধিদীপ্ত ভাবে উত্তর দেন, "সাম্প্রদায়িক শুধু মাত্র হিন্দু বা মুসলিমরা হয় না, সাম্প্রদায়িক তারা যারা নিজের স্বার্থর জন্য অপরকে হিংসায় মারতে চায়। এইদেশ সর্বধর্ম সমন্বয়ের দেশ, এই দেশ যেমন হিন্দুদের তেমন মুসলিমদের কেমন শিখদের তেমন খ্রিস্টানদেরও। মোদীজি এই দেশের লঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য অনেক রকমের প্রকল্প করেছেন, তাহলে কি বিজেপি সাম্প্রদায়িক? যদি ধর্মের কথা বলেন তবে ধর্ম কখনও অস্থিরতা সৃষ্টি করে না, আমরা মন্দিরে গেলেও যেরকম শান্তি পাই সেরকম মসজিদে গেল একই রকম শান্তি পাব। কিছু মানুষ নিজেদের জন্য এক ধর্মের মানুষকে অপর ধর্মের মানুষের প্রতি ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করে আর কিছুই না, আমরা কখনও সাম্প্রদায়িকতাকে আমল দিই না, আমাদের একটি কথা সবকা সাথ সবকা বিকাশ সব কা বিশ্বাস। এই ধরনের কথা তৈরি হওয়ার কোনো কারণই নেই, আমি কাশিপুর বেলগাছিয়া বসবাস করি খানে ভোট পরবর্তী কোন হিংসার আঁচ মুসলিমদের ওপর পরেনি। আমরা সবাই ভাইয়ের সম্পর্কটা ভাইয়ের জায়গাতে রেখেছি এবং রাজনীতির সম্পর্ক রাজনীতিতে রেখেছি, রাজনীতি দিয়ে হিংসা করে, লোকের হানি করে নিজের ফায়দার জিনিস তাড়া তোলেনি। যারা লোকের ক্ষতি করেছে তারা হলেন প্রোমোটার সিন্ডিকেট এরাই, নামগুলো এক এক ধরে ধরে বললেই আপনারা বুঝতে পারবেন তারা কি করে, তাদের কাছে পার্টিটা হলো একটা দোকানে যে দোকান খুললে তাদের রোজগার হবে আর না খুললে রোজগার হবে না, সুতরাং যারা এই দোকানের উপর নির্ভর করে আছে রোজগার তারাই করেছে আর তারাই সাম্প্রদায়িক।"


এবারের বিধানসভা ভোটে এই সাম্প্রদায়িক ভয়ের কারণে বিশাল সংখ্যক ভোট তৃণমূলে জিতে গেছে, এই সংক্রান্ত প্রশ্নে তিনি বলেন "বিজেপি কিছু হারায়নি, ভোট সংখ্যা দেখলে বোঝা যাবে মেজর পার্টির সাথে ১০% ভোটের পার্থক্য আমাদের দলের সাথে আছে, তাই দশ শতাংশ ভোটে পার্থক্যটা এমন কিছু না। যে দুটি কারণে বিশাল সংখ্যক ভোট তৃণমূলকে গেছে তা হলো, আমাদের কোর লেভেলে প্রচারটা হয়নি আর দ্বিতীয়তঃ বিরোধীরা সেই কোর লেভেলে অপপ্রচার করেছেন যে সিএএ এনআরসি এলে তাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে, এবার ব্যাপারটা হল তাদেরকে কেন তাড়ানো হবে? সেসব মুসলমানরা এদেশের নাগরিক তারা এদেশেই থাকবে তাদের তাড়ানো হবে না। এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য অনেকগুলি প্রকল্প আছে, সেইসব প্রকল্পে বহিরাগত সংখ্যালঘুরা কেন ভাগ বসাবে? এবং কেন আমাদের দেশে সংখ্যালঘু মা, ভাই-বোনেরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে? সেই বঞ্চনাকে আটকানোর জন্যই সিএএ এনআরসি আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।"

যখন এবারের পুরভোট নিয়ে তিনি কতটা আশাবাদী জিজ্ঞাসা করা হল তিনি তখনও বেশ বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দিলেন, বললেন "অগ্র যদি বাধা হয় সেটা সর্বকালীন মধুময়, তবে পথটা সুনিশ্চিত হয়।" তিনি বলেন ২রা মে থেকে কাশিপুর বেলগাছিয়া বিধানসভায় ব্যাপকভাবে সন্ত্রাস চলেছে, এমনকি ওনার বাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে, এবং এই সন্ত্রাস তৃণমূল কংগ্রেসই করেছে এবং তার কাছে প্রমাণও আছে।

ভোট প্রচারের কথায় তিনি বলেন তাদের ঠিক মতো করে ভোট প্রচার করতে দেওয়া হচ্ছে না সেখানেও সন্ত্রাসের সঞ্চার করা হচ্ছে।এই পুরসভা ভোটে ওনার প্রতিপক্ষ শক্তিশালী তা জানার পরেও তিনি অত্যন্ত ভাবে এই পুরসভার ভোট নিয়ে আগ্রহী, তার বক্তব্যের মাধ্যমে উঠে এসেছে রামপ্রসাদের কথা, তিনি রামপ্রসাদের কথাতেই বললেন জাঁকজমকে পূজো করলেই ঠাকুর ভজনা হয় তা কিন্তু নয়, এক কোনায় অন্তর দিয়ে চোখের জল ফেললেও সেই পুজো ঈশ্বর গ্রহণ করেন, তাই জনগণ ভালো করেই জানেন কি হয়েছে, দেখেছেন এবং তারাই এর বিচার করবেন। সন্ত্রাস কখনো একজন মানুষ সৃষ্টি করে না সন্ত্রাস সৃষ্টি করে এক গোষ্ঠীর মানুষ, আর এই সন্ত্রাসকে জনগণ কখনোই স্বীকার করেনি আর ভবিষ্যতে স্বীকার করবেও না।

এই ভোটে তাদের ইস্তাহার বা এজেন্ডা অথবা বিপরীত পক্ষের ওপর কি কি অভিযোগ আছে তা জিজ্ঞাসা করাতে তিনি বললেন, "চারিদিকে অবৈধভাবে নির্মাণ এবং অবৈধভাবে জলের লাইন করা আছে, আর তাছাড়াও নম্বর ওয়ার্ডে নম্বর ওয়ার্ড এর রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ তার দিকে শাসক দলের কোনো হুস নেইআর সবচেয়ে মূল দৃষ্টি আকর্ষণ তারা করতে চাইছে খাল সংস্করণ এর উপর। অবৈধ নির্মাণের কারণে সরকারের ক্ষতি হচ্ছে প্রচুর, সরকার ঠিকমতো টাক্স পাচ্ছেন না। হ্যাঁ এটা কখনোই আমরা চাই না যে সরকার সেইসব নির্মাণ গুলিকে ভেঙে দেয়, এবং যেসব মানুষেরা সেই ফ্ল্যাট গুলি কিনেছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হোক, আমরা চাই সে সমস্ত মানুষগুলিকে সঠিক ট্যাক্স এর কাগজ দেয়া হোক এবং সুরক্ষা দেয়া হোক, এই গুলোই আমাদের চাহিদা।" আরও বলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রকল্প গুলির মধ্যে বেশির ভাগ গুলো খাতায়-কলমে থাকলেও তা খুব একটা কাজে আসেনি, আমার বক্তব্য সেটা নয় তৃণমূল কংগ্রেসের যদি পাঁচটা প্রকল্প থাকে তবে কেন্দ্র সরকারের প্রকল্প কেন এখানকার মানুষেরা পাবে না? সবশেষে মানুষের জন্যই তো আমরা, আমাদের জন্য তো মানুষ নয়।"

এই পৌরসভা ভোটে তাদের সংগঠন কেমন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিধানসভা ভোটের পর থেকে তাদের কর্মীরা একটু হলেও ভীত, এমনকি তার বাড়ি ভাঙচুর করার পরেও তিনি আজ প্রার্থী, কিন্তু তারপরেও সেসব কর্মীরা এবারে তাদের সবটুকু দিয়ে লড়াই করবে, সংগঠন এবারে খুবই শক্তিশালী। সবশেষে তিনি বললেন এবারের ভোট নিয়ে তিনি খুবই আশাবাদী। এবারের ভোটে যদি যেতেন তবে তিনি হাসিমুখেই থাকবেন এবং যদি হারেন তখনো তার মুখের হাসির পরিবর্তন ঘটবে না।

Journalist Name : Saurav Chattopadhyay

Tags:

Related News