মহারাজের অপসারন, রাজনীতিবীদদের মাথা ব্যথার কারণ

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

আরও একবার প্রাক্তণ হলেন বাংলা তথা ভারতের ক্রিকেট আইকন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ‘আরও একবার প্রাক্তণ’ বললাম এই কারণে যে তিনি তো একের মধ্যে অনেক। প্রথমত প্রাক্তণ ক্রিকেটার, তারপর প্রাক্তণ অধিনায়ক, প্রাক্তণ ধারাভাষ্যকার, প্রাক্তণ সিএবি প্রেসিডেন্ট, এবার প্রাক্তণ বিসিসিাই প্রেসিডেন্ট। ‘তুমি কী সেই আগের মতো আছো, নাকি অনেক খানি বদলে গেছো?’ এই প্রশ্নটা রইল প্রাক্তণ ভারত অধিনায়ক এবং সদ্য প্রাক্তণ হওয়া বিসিসিাই প্রেসিডেন্ট সৌরভের কাছে। কারণ অতীতে দেখা গেছে যতবার তাঁর যোগ্যতা ও দক্ষতার বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে ও তাঁর সম্মানের অমর্যাদা হয়েছে, ততবারই তিনি সময়কে ব্যবহার করে সমালোচকদের মোক্ষম জবাব দিয়ে স্বমহিমায় ফিরে এসেছেন। তাই এবারও তাঁর নতুন একটা ইনিংসে কামব্যাকের অপেক্ষায় বাংলা তথা সারাবিশ্বের ‘প্রিন্স অফ ক্যালকাটা’র সমর্থকরা।
এতো গেল সৌরভ ও তাঁর সমর্থকদের ভাবনার কথা। এবার ফিরি মূল বিষয়ে। মহারাজের অপসারন কীভাবে রাজনীতিবীদদের মাথা ব্যথার কারণ। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও রাজনীতি যেন একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রতোভাবে জড়িয়ে। কলকাতার একটি বাঙালি পরিবার থেকে উঠে আসা একজন ক্রিকেটার ভারতীয় ক্রিকেটকে শাসন করবে আর তার মধ্যে রাজনীতির গন্ধ থাকবে না তাও আবার হয় না কি! ঠিক তাই, সৌরভের  গোটা ক্রিকেট জীবনটাই রাজানীতির একটা নাটকীয় প্রেক্ষাপট। যে প্রেক্ষাপটের পরতে পরতে রয়েছে শুধুই রাজনীতির সুবাস। ভারতীয় দলে অভিষেক হওয়ার সময়ও শুধুমাত্র বিনোদ কাম্বলিকে সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার জন্য মহারাজকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ১৯৯২ সালের ১১ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল সৌরভের। এরপর বহু প্রতীক্ষার শেষে ১৯৯৬ সালের ২০ জুন ইংল্যান্ডের লর্ডসে রাজকীয় টেস্ট অভিষেক হয় ‘প্রিন্স অফ ক্যালকাটার’। অভিষেক ম্যাচে  শতরানের ইনিংস ও ৩ উইকেট নিয়ে অলরাউন্ড পারফর্ম করে যাবতীয় প্রতীক্ষার অবসান ও তাঁকে আগে সুযোগ না দেওয়ার মোক্ষম জবাব দেন সৌরভ। সেই ম্যাচে ৩০১ বলে ১৩১ রানের ইনিংস খেলেন মহারাজ। এরপর ২০০০ সালে তাঁর হাতে ওঠে অধিনায়কের ব্যাটন। তারপর তাঁরই ইচ্ছায় ভারতীয় দলের কোচ করা হয় প্রাক্তণ অজি ক্রিকেটার গ্রেগ চ্যাপেলকে। সেখানেও রাজনীতির স্বীকার হতে হয় তাঁকে। অধিনায়কত্ব হারান ও দল থেকে বাদ পড়েন। শেষ একদিনের ম্যাচ খেলেন ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। ভারতীয় দলের হয়ে শেষ ও বিদায়ী টেস্ট ম্যাচ খেলেন ২০০৮ সালের ৬ নভেম্বর অßেT্রলিয়ার বিরুদ্ধে। 

আবারও ফিরলেন ক্রিকেট মাঠে। তবে এবার আইপিএল-এ কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে। সেখানেও রাজনীতির স্বীকার হলেন তিনি। কেকেআর ছেড়ে পুনে ওয়ারিয়র্সে যোগ দেন সবার প্রিয় দাদা। এরপর দিল্লি ক্যাপিটালসের মেন্টর হয়ে ধারাভাষ্যকার। তার পর দায়িত্ব পেলেন সি এবি প্রেসিডেন্টের। শোনা যায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব¨োপাধ্যায়ের সুপারিশে নাকি তিনি সি এবি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন গুঞ্জন উঠেছিল তিনি নাকি এবার রাজনীতিতে যোগ দেবেন। যদি ও তার আগে বাম রাজনীতিবীদ অশোক ভট্টাচার্যের সঙ্গে তাঁর একটা ঘনিষ্ঠতা ছিল। তা নিয়ে ও কানাঘুষো চলত। মহারাজের বরাবরের লক্ষ্য ছিল ভারতীয় ক্রিকেটের স্বার্থে কাজ করা। সেই লক্ষ্যে তিনি সুযোগ পেলেন বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট হওয়ার এবং নির্বচিত  হলেন ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর। সেবারও তাঁর এই নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতির গন্ধ পেলেন সমালোচকরা। প্রায় ৩ বছর সফলভাবে কাজ করার পরও প্রাক্তণ হলেন তিনি। আসন্ন বোর্ড প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে একটি বৈঠক ডাকা হয়। আর সেই বৈঠকে প্রাক্তন বিশ্বকাপার রজার বিনির নাম প্রেসিডেন্ট হিসেবে উঠে আসে। সৌরভের নাম একবার ও আলোচিত হয়নি ওই বৈঠকে। 
বাস, এবারও রাজনৈতিক ইস্যু পেয়ে গেলেন রাজনীতিবীদরা। বাংলার রাজনীতিবীদরা তো বলেই ফেললেন সৌরভ রাজনীতির স্বীকার। আর কেন্দ্রীয় শাসক দলের নেতারা সেই অভিযোগকে খন্ডনের চেষ্টায় উঠে পড়ে লাগলেন। বাংলার শাসক দলের নেতারা বলেন কেন্দ্রের শাসক দলের নেতারা সৌরভকে ব্যবহার করে বাংলার রাজনীতিতে ফায়দা তোলার চেষ্টা করেছিল। যখন তারা সেই চেষ্টায় অসফল, তখন তারা তাদের খমতার অপব্যবহার করে সৌরভের মতো একজন আইকনকে ছেঁটে ফেলেছে। সৌরভের অপসারন শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করা ছাড়া আর কিছু না। এদিকে কেন্দ্রীয় শাসক দলের নেতারা বলেন এর মধ্যে কোনও রকমের রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িয়ে নেই। পরস্পর বিরোধী এই রাজনৈতিক বাকবিতন্ডার মধ্য থেকে ভারতীয় ক্রিকেটের কতটা লাভ হবে তা জানা নেই, তবে এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতিবীদরা যে ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছেন তা বেশ স্পষ্ট। এমন রাজনৈতিক টানাপোড়েনে একবার তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। সেই লড়াইটাও তিনি তাঁর লড়াকু মানসিকতা দিয়ে জিতে নিয়েছেন। আবারও স্বভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। ত¥াকে সুস্থভাবে তাঁর স্বাভাবিক জীবন জীবিকাকে পরিচালনা করতে দিন। খেলার জগতের সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে ফেলে সবার প্রিয় বাংলার উজ্বল নক্ষত্র দাদকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন।  রাজনীতিবীদদের অযথা মাথা ব্যাথা করার প্রয়োজন নেই। আজ যেভাবে তাঁরা সৌরভের কথা ভেবে কুমীরের কান্না কাঁদছেন, তাঁরা সেদিন কোথায় ছিলেন যেদিন শুধুমাত্র বাঙালি বলে তাঁকে ভারতীয় দলে ব্রাত্য থাকতে হয়েছিল! সেদিন সৌরভ যেমন নিজেই নিজের লড়াইটা লড়েছিলেন আজও তাঁকে একা ছেড়ে দিন। তিনি মহারাজ, সঠিক পথ তিনি ঠিক খুঁজে নেবেন। মহারাজের সমর্থকদের ধারনা সমস্ত বিতর্কের অবসান ঘটাতে স্বয়ং মহারাজই কিছু পদক্ষেপ নেবেন। সেটা আইসিসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়ে কী? প্রশ্নটা রইল উত্তরের অপেক্ষায়।
#Source: online/Digital/Social Media News   # Representative Image


Journalist Name : Shibaprasad Dey

Related News