‘নীতিপুলিশ’ বাহিনী তুলে নিচ্ছে তেহরান ! হিজাব বিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনে মিলল জয়

banner

#Pravati sangbad Digital Desk:

দীর্ঘদিন ধরে ইরানে চলছে হিজাব-বিরোধী আন্দোলন। উল্লেখ্য, হিজাব না পরার ‘অপরাধে’ গ্রেফতার করা হয়েছিল ২২ বছর বয়সি কুর্দিশ তরুণী মাহসা আমিনিকে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয় ২২ বছরের মাহসা আমিনির। এরপরই শুরু হয় ইরানে আন্দোলন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে হিজাব পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখান বহু মহিলা। মেয়েদের পাশাপাশি বহু পুরুষও এই আন্দোলনেপথে নামেন। ইরান এই বিক্ষোভকে ‘সরকার-বিরোধী’ আন্দোলন হিসেবে দেখছে। তবে তাদের দাবি, এ বিদ্রোহ শুধুমাত্র হিজাবকে ঘিরে নয়, এর পিছনে রয়েছে ষড়যন্ত, আছে আমেরিকার প্ররোচনা। ইরানে মেয়েদের রক্ষণশীল পোশাক পরা একপ্রকার বাধ্যতামূলক এবং তা নিয়ে উষ্মা রয়েছে বহুদিনই। কিন্তু ১৯৭৯ সালের পরে এই প্রথম ইসলামিক রিপাবলিক এমন অগ্নিগর্ভ বিক্ষোভ দেখছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, এই আন্দোলনে এ পর্যন্ত ৩০০-রও বেশি আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ১৪ হাজার জনকে। যদিও ইরানের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জও। আন্তর্জাতিক সংগঠন অবিলম্বে সাধারণ মানুষের উপরে হেনস্থা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। 


ঘটনার শুরু হয়েছে গত ১৬ সেপ্টেম্বর। ইরানের সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ মারফত খবরটি প্রকাশ্যে এসেছে। ইরানের কেন্দ্রীয় সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ জাফর মন্তেজারি নিজেই ওই সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন।  আমেরিকান বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘‘বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন দেশের সরকার ও বেসরকারি কিছু সংগঠন সাধারণ মানুষকে হেনস্থা করে চলেছে, ভয় দেখাচ্ছে,জেলে পুরছে, নির্বিচারে হত্যা করছে। এ ধরনের অত্যাচার আমেরিকা মেনে নেবে না।’’ ব্লিঙ্কেন জানান, ধর্মীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে যে সব দেশের অবস্থান বেশ চিন্তার কারণ, সেই তালিকায় রয়েছে চিন, রাশিয়া ও ইরান, উত্তর কোরিয়া এবং মায়ানমার। পাশাপাশি পাকিস্তান, সৌদি আরব, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, নিকারাগুয়া, কিউবা ও পূর্ব আফ্রিকার দেশ এরিট্রিয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছে আমেরিকা।

উল্লেখ্য, পোশাকবিধি না মানায় ইরানের রাজধানী তেহরানে এক তরুণী মাহাসা আমিনিকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল ইরানের এই নীতিপুলিশের দল। তারপর হেফাজতে থাকাকালীনই মৃত্যু হয় সেই তরুণীর। এরপরই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই আগুনের গতিতে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে ইরানের পথে। প্রশাসনের এই নীতিপুলিশির বিরুদ্ধে মেয়েরা পথে নেমে হিজাব বিরোধী তীব্র আন্দোলন শুরু করেন। সমর্থন জানান বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সাধারণ মহিলা-পুরুষ, এমনকি খ্যাতনামীরাও। অবশেষে চাপের মুখে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয় ইরানের প্রশাসন। দু’মাসের বেশি সময় ধরে হিজাব বিরোধী আন্দোলনে পা মিলিয়েছেন তাঁরা। ইরানের পথে-ঘাটে মহিলারা হিজাব খুলে ফেলেন। কেটে ফেলেন নিজেদের চুল। অবশেষে দীর্ঘ দু’মাসের বেশি বিক্ষোভ প্রতিবাদ চলার পর এক ধাপ এগোল তাঁদের আন্দোলন। দীর্ঘ আন্দোলনের জেরে নিষিদ্ধ করা হল ‘নীতি পুলিশি’।


‘উল্লেখ্য, নীতি পুলিশি’ আগে গস্ত-ই এরশাদ বা ‘গাইডেন্স পেট্রোল’ নামে পরিচিত ছিল। ইরানের প্রেসিডেন্ট মেহমুজদ আমাদিনেজাদের আমলে এই গাইডেন্স পেট্রোল শুরু হয়েছিল। ২০০৬ সালে এই নীতি পুলিশি’ দল কাজ শুরু করে। ইরানে যে কঠোর পোশাকবিধি কার্যকর রয়েছে তা সঠিকভাবে মেনে চলা হচ্ছে কি না তা তদারকি করাই হল ‘নীতি পুলিশ’-র কাজ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত এই ‘নীতি পুলিশ’। তবে এখনও হিজাব পরা বাধ্যতামূলক সংক্রান্ত আইন প্রত্যাহার করা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে জাফার মোনটাজ়েরি জানিয়েছেন, মহিলাদের হিজাব পরা নিয়ে কোনও আইন পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে কি না সেই বিষয়ে পার্লামেন্ট ও বিচারব্যবস্থা খতিয়ে দেখছে।

উল্লেখ্য, বিশ্বকাপের শুরুর দিকে ফুটবলাররা আন্দোলনকারীদের সমর্থনে ছিলেন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানান ইরানের অধিনায়ক। এই আবহে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে প্রথম ম্যাচে জাতীয় সঙ্গীত গায়নি কোনও ইরানি ফুটবলারই। তবে এরপরই ইরান সরকার ফুটবলারদের পরিবারের সদস্যদের হেনস্থার হুঁশিয়ারি দেয়। এরপরই ওয়েলসের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচে ইরানের ফুটবলারদের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে দেখা যায়। এই আবহে ইরানের আন্দোলনকারীদের অনেকেই চাইছিলেন যাতে আমেরিকার বিরুদ্ধে তাঁদের জাতীয় দল হেরে যায়। কারণ তাঁদের কাছে এই ফুটবল দল ছিল ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের প্রতীক।


Journalist Name : Puja Adhikary

Related News