রাজ্যে ২১ হাজার শিক্ষকের বেআইনি নিয়োগের দাবি সিবিআই -এর, তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

banner

#Pravati sangbad Digital Desk:

রাজ্যের স্কুলে স্কুলে বহু বেআইনি নিয়োগের দাবি সিবিআই -এর। সিবিআই জানাচ্ছে, ২০১৬-র বিজ্ঞাপন মেনে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর মাধ্যমে রাজ্যের স্কুলে স্কুলে অন্তত ২১ হাজার বেআইনি নিয়োগ হয়েছে। এর আওতায় রয়ছে নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক। এর পাশাপাশি স্কুলে গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি কর্মী নিয়োগও এর আওতায় আসছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর তলবে স্কুলে নিয়োগ মামলার তদন্তে গঠিত সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্তকারী দলের নবনিযুক্ত প্রধান অশ্বিন শেনভি সোমবার আদালতে হাজির হয়ে মৌখিক ভাবে এই তথ্য জানান।

সিবিআইয়ের বক্তব্যের মাঝেই বিচারপতি জানান, "যে যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হয়েছেন, তাঁরা শুধু ফলাফলের আশায় বসে আছেন। সিবিআই কী করল, স্কুল সার্ভিস কমিশন কী করল, তা তাঁরা জানতে চান না। তাঁরা চান নিয়োগপত্র। এই দুর্নীতির তদন্ত ও বিচার অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে।" এবার তদন্ত, বিচার লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে বলেও মনে করছেন বিচারপতি। গত বছর নভেম্বরে শুরু হয় এই তদন্ত। প্যানেলের পিছন দিকে থাকা কয়েকজন প্রার্থীকে র‍্যাঙ্ক জাম্প করে নিয়োগের অভিযোগের দরুন এই তদন্তের শুরু। হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই গাজিয়াবাদ থেকে প্যানেলের তথ্য সংবলিত মূল হার্ড ডিস্ক উদ্ধার করে। তারপরই ওএমআর শিটে জালিয়াতির বিষয়টি সামনে আসে। ওই নথিগুলি তারা এসএসসি-কে দিয়েছে বলে জানায় সিবিআই। তাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে, কী ভাবে এই ত্রুটি সংশোধন করবে!  পাশাপাশি কমিশনের উদ্দেশে বিচারপতির মন্তব্য, 'জল থেকে কাদা সরিয়ে জলটাকে স্বচ্ছ করুন।'


একই মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এসএসসি জানিয়েছিল, তাদের হিসেব অনুযায়ী র‍্যাঙ্ক জাম্প করে নবম-দশমে ১৮৩ জনকে বেআইনি ভাবে শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এবার আদালত এঁদের সরিয়ে সেখানে নতুন করে নিয়োগের নির্দেশ দেয়। এ প্রসঙ্গে এ দিন বিচারপতি বসু নতুন লোক কোথা থেকে নিয়োগ হচ্ছে, সেই সংক্রান্ত তথ্য জানতে চান। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে, ওয়েটিং লিস্ট থেকে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে বলে জানান কমিশনের কৌঁসুলি। আদালতের পাল্টা প্রশ্ন - 'এ ক্ষেত্রে এসএসসি-র নিজস্ব অবস্থান কী?' এর জবাবে এসএসসি জানায়, নিজস্ব কোনও সিদ্ধান্ত এ ক্ষেত্রে আর প্রয়োগ করা হচ্ছে না। এত বড় দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসার পর আদালতের নির্দেশ মেনেই সব কিছু করা হচ্ছে।  আদালত সিবিআই আধিকারিকের কাছে তাঁদের তদন্ত প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানেন।

এ প্রসঙ্গে শেনভি আদালতে বলেন, "নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোথাও ন্যূনতম আইন মানা হয়নি। মূল প্যানেল থেকে ওয়েটিং লিস্ট - সর্বত্র দুর্নীতি হয়েছে। ফলে যাঁরা ওয়েটিং লিস্টে রয়েছেন, তাঁরাও যে দুর্নীতি করে সেখানে জায়গা পাননি, তা বলা যাবে না।" আদালতও সেই একই জিনিস মনে করে। পুরোনো প্যানেল থেকে নিয়োগ হলে, আবার দুর্নীতির আশঙ্কা থাকছে। যদিও আদালত এ দিন এ বিষয়ে কোনও নির্দেশ দেয়নি। পাশাপাশি গ্রুপ ডি-তে কারা বেআইনি ভাবে চাকরি পেয়েছেন, সেই তালিকা ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশের জন্য জরুরি ভিত্তিতে চেষ্টার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এসএসসি-কে। সিবিআই জানায়, "এ পর্যন্ত প্রায় ২১ হাজার পদে দুর্নীতির হদিশ মিলেছে। এর মধ্যে ন'হাজার ওএমআর শিট বিকৃত করা হয়েছে। নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশে শিক্ষকদের বড় অংশের বেআইনি নিয়োগ হয়েছে"। সিবিআইয়ের বক্তব্য শোনার পর এ দিন তদন্তকারী সংস্থাকে আশ্বস্ত করে কোর্ট বলে, "যা সাহায্য লাগবে, আদালতে এসে জানাবেন। আদালত সব রকম সাহায্য করবে। এই দুর্নীতির শেষ দেখা দরকার। যারা এই দুর্নীতিতে যুক্ত, তাদের কাউকে ছাড়া যাবে না।"


Journalist Name : Puja Adhikary

Related News