দুর্নীতির বিরুদ্ধে আণ্ণা হাজারের আন্দোলনের মঞ্চ থেকে আজ কেজরীবাল দুর্নীতির দায়ে হাজতবাস
ঝাড়ু দিয়ে সমাজ থেকে দুর্নীতি বিদায় করার পণ করে দিল্লির সরকারের এসেছিল আম আদমি পার্টি।
আবগারি নীতি দুর্নীতি মামলায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালকে নয়বার সমন পাঠিয়েছিল ইডি। কিন্তু কোনওবারই হাজিরা দেননি কেজরীবাল। বৃহস্পতিবারই তিনি দিল্লি হাইকোর্টে আর্জি জানিয়েছিলেন যে ইডি যদি গ্রেফতার না করার আশ্বাস দেয়, তবে তিনি হাজিরা দিতে রাজি। কিন্তু আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপরই রাতে কেজরীবালের বাড়িতে হানা দেয় ইডি। আবগারি নীতি দুর্নীতি মামলায় কেজরীবালকে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) রাতে গ্রেফতার করে।
মুখ্যমন্ত্রী গ্রেফতার হতেই প্রতিবাদে পথে নামে আম আদমি পার্টি। দিল্লির মন্ত্রী তথা আপ নেত্রী অতিশি জানান, গ্রেফতার হলেও, কেজরীবালই মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। এই নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। এই সিদ্ধান্তে কোনও আইনি বাধাও নেই বলে দাবি করেন অতিশি।
২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর দিল্লি সরকার নতুন আবগারি নীতি চালু করে। যেখানে একাধিক নিয়ম শিথিল করা হয়েছে। লাইসেন্স ফি কমিয়ে দেওয়া থেকে স্কুল ও হাসপাতালের কাছাকাছি এলাকাতেও সুরা বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি মদের হোম ডেলিভারিও চালু করা হয়েছিল দিল্লিতে। এর ফলে আবগারি ক্ষেত্র থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় প্রায় ২৭ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। যদিও ওই অতিরিক্ত টাকা রাজকোষে না ঢুকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ।
এমনকি, দক্ষিণ ভারতের একটি সংস্থাও এই নীতি পরিবর্তনের জেরে লাভবান হয়েছিল। কয়েকদিন আগে হায়দরাবাদ থেকে কে সি আর কন্যা কে কবিতাকেও একই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এবার ওই একই মামলায় গ্রেফাতার করা হল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে।
আদালতে হাজির করার সময় কেজরিওয়াল একটি সংবাদ মাধ্যমে বলেন, "আমার জীবন জাতির সেবায় নিবেদিত, আমি জেলের ভিতরে থাকি বা বাইরে থাকি।"
সর্বশেষ পাওয়া খবরে প্রকাশ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে অপসারণের জন্য দিল্লি হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করা হয়েছে। আবেদনে বলা হয়েছে যে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে অভিযুক্ত একজন মুখ্যমন্ত্রীকে সরকারি পদে থাকার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।
দিল্লীতে ২০১১ সালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আণ্ণা হাজারের আন্দোলনের মঞ্চে অরবিন্দ কেজরীবালকে প্রথম দেখা যায়। আণ্ণা হাজারের অহিংস আন্দোলন সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। আণ্ণা হাজারের এইমঞ্চ থেকেই কেজরীওয়ালের পরিচিতি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ২০১২ সালে কেজরীবাল রাজনৈতিক দল আম আদমি পার্টি (আপ) গঠন করেন। যদিও রাজনৈতিক দল তৈরি নিয়ে অণ্ণার ঘোর ‘আপত্তি’ ছিল। তার পর কেজরীর আপ দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসে। আবগারি নীতিতে গ্রেফতার হওয়ার পর কেজরীওয়ালকে নিয়ে মুখ খুললেন অন্না। তাঁর কথায়, কেজরী কর্মের ফলই ভুগছেন! তবে একদা তাঁর ‘ভাবশিষ্য’ কেজরীর জন্য ‘কষ্ট’ও পাচ্ছেন অণ্ণা।
তাঁর কথায়, ‘‘আমার কথা শোনেননি কেজরীওয়াল এবং মণীশ সিসৌদিয়া। আমি সব সময় তাঁদেরকে দেশের কল্যাণের জন্য কাজ করার কথা বলতাম। আমাকে কথাও দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই কথা রাখেননি তাঁরা।’’