স্কুলে-স্কুলে ঢালাও শিক্ষক বদলি আরও একটা দুর্নীতির রাস্তা : কলকাতা হাইকোর্ট

banner

#Pravati sangbad Digital Desk:

এ বার অনিয়মের অভিযোগ উঠল শিক্ষক বদলিতেও। নতুন নিয়োগে দুর্নীতির পাশাপাশি রাজ্যের স্কুলে-স্কুলে ঢালাও শিক্ষক বদলি আরও এক অনিয়মের লক্ষণ বলে মনে করছে কলকাতা হাইকোর্ট। রাজ্যের স্কুলে-স্কুলে ঢালাও শিক্ষক বদলি আর একটা দুর্নীতির রাস্তা বলে মন্তব্য করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। তাঁর এজলাসে বদলি সংক্রান্ত একটি মামলায় এই মন্তব্য তিনি করেন। আদালতের মতে, যাঁদের নজর শুধু বদলিতে রয়েছে, সেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরিই ছেড়ে দেওয়া উচিত। পাশাপাশি শিক্ষকদের পড়ুয়াদের প্রতি আরও সহমর্মিতা দেখানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিচারপতি। 

এ দিন জেলা স্কুল পরিদর্শক কোর্টে জানান, ঢালাও বদলির কারণে জেলার সব স্কুলের অবস্থাই খুব খারাপ। প্রায় সকল শিক্ষক এই বদলির সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে ৬০ শতাংশ শিক্ষক বদলি নিয়ে অন্য জেলায় চলে গিয়েছেন। আর এর প্রভাব পড়ছে ছাত্র-ছাত্রীদের উপর। শিক্ষক বদলির কারণে বহু স্কুল উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। আর তার দরুন ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত বজায় রাখা যাচ্ছে না। জানা গিয়েছে, ঝালদার একটি স্কুলে ১,১৫৩ জন পড়ুয়ার জন্য ২১ জন শিক্ষক ছিলেন। ইতিমধ্যে শিক্ষকদের মধ্যে ৮ জন বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। যা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করে আদালত। আর এই সমস্যা হচ্ছে উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের বদলি নীতি শুরুর পর থেকে, এমনটাই মনে করছে আদালত। তারপর থেকেই শিক্ষকরা যে কোনও ছুতোয় ট্রান্সফার চাইছেন। বদলি কোনও শিক্ষকের অধিকার হতে পারে না, এমনই বক্তব্য বিচারপতির। আর এমন করে চলতে থাকলে আগামীদিনে গ্রামের স্কুলে শিক্ষক পাওয়া যাবে না। এ বিষয়ে হাইকোর্টের প্রশ্ন, 'শহরের স্কুলের অতিরিক্ত শিক্ষকদের সরকার কেন গ্রামে, যেখানে প্রয়োজন, সেই স্কুলগুলিতে পাঠাবে না?'

ঝালদা হাইস্কুলের এক শিক্ষকের বদলি মামলায় এ দিন জেলা স্কুল পরিদর্শককে (মাধ্যমিক-ডিআই) ডেকে পাঠান বিচারপতি বসু। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঢালাও বদলির ফলে পুরুলিয়ায় বহু উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে পঠনপাঠন বন্ধের পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। তারপরেই পুরুলিয়ার প্রতিটি স্কুলের পড়ুয়া-শিক্ষক অনুপাত খতিয়ে দেখে বিস্তারিত তথ্যের রিপোর্ট হাইকোর্টে দেওয়ার নির্দেশ আদালতের। যদিও স্কুলশিক্ষা কর্তারা জানান, শিক্ষক-শিক্ষিকারা চাইলেই বদলির আবেদন জানাতে পারেন না। উৎসশ্রী-র মাধ্যমে পঞ্চম থেকে দ্বাদশের শিক্ষক বদলির নির্দিষ্ট নিয়ম রয়ছে। সেই নিয়মে স্কুলের মোট শিক্ষকের ১০ শতাংশ এক সঙ্গে সাধারণ বদলির আবেদন করতে পারেন। এবং কোনও স্কুলে অন্তত ৫ বছর চাকরি করতে হবে, তার আগে কোনও শিক্ষকের কাছ থেকে বদলির আবেদন নেওয়া হয় না। তারপরেও ঝালদার ওই স্কুলে ২১ জনের মধ্যে আটজনের (৩৮ শতাংশ) বদলি একসঙ্গে কী ভাবে হলো, তার সদুত্তর এখনও মেলেনি।
এরপরেই আদালত নির্দেশ দেয়, দু'সপ্তাহের মধ্যে পুরুলিয়ার বিদ্যালয় পরিদর্শক গৌতম চন্দ্র মালকে জেলার সমস্ত স্কুলের শিক্ষক-ছাত্র অনুপাতের রিপোর্ট জমা করতে হবে। জানা গিয়েছে, মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২০ জানুয়ারি। উৎসশ্রী-র মাধ্যমে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বদলি চালু হয়েছিল ২০২১-এর ২ অগস্ট। এই প্রকল্পে এ পর্যন্ত পঞ্চম থেকে দ্বাদশের ১৯,৮০০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার সাধারণ বদলি হয়েছে। অথচ, গত আট বছর রাজ্যে উচ্চ প্রাথমিকে (পঞ্চম-অষ্টম শ্রেণি) কোনও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। পাশাপাশি নবম-দ্বাদশে শিক্ষক নিয়োগের শেষ বিজ্ঞপ্তি বেরিয়েছিল ২০১৬-য়। শিক্ষক নিয়োগ  শেষ হয় ২০১৯-এ। এরফলে সাধারণ বদলির পর স্কুলগুলিতে বহু পদ ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। এখনও সেই পদে কোনও শিক্ষক আসেনি।

Journalist Name : Puja Adhikary

Related News